আহসান মঞ্জিল ঘিরে আবর্জনা
পুরান ঢাকার নবাববাড়ির চারপাশ ঘিরে আবর্জনার ছড়াছড়ি, পরিবেশ দুর্গন্ধময়। চারপাশে অবৈধ দখল। যত্রতত্র পার্কিং। সরু হয়ে গেছে সামনের সড়ক। স্থানীয় লোকজনের কাছে নবাববাড়ি হিসেবে পরিচিত আহসান মঞ্জিলে আসা দর্শনার্থীরা এই নিয়ে অসন্তুষ্ট। গত শনিবার ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার দেখা যায়, নির্বাচনের পোস্টারে ছেয়ে গেছে আহসান মঞ্জিলের প্রবেশদ্বারসহ আশপাশের দেয়াল। টিকিট কাউন্টারের সামনের দেয়াল পুরোটাই পোস্টারে ছাওয়া।
ওপরে দড়িতেও ঝুলছে পোস্টার। এক বছর আগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানের জন্য নিরাপত্তার কথা বলে আহসান মঞ্জিলের চারপাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়। বেড়াটি আর সরানো হয়নি। সেটি ধুলা-ময়লায় আচ্ছন্ন। আহসান মঞ্জিলে ঢোকার একটিমাত্র গেট। সেখানে সব সময় লেগে থাকে রিকশার জটলা। পাশেই আছে ফুটপাত দখল করে খাবারের কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটির চারপাশ ঘুরে দেখা গেল, ফুটপাত দখল করে আছে কয়েক শ অবৈধ দোকান। প্রধান ফটকের ডান দিকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপসহ বিভিন্ন যান সারি দিয়ে থামিয়ে রাখা। পাশেই কাপড় ব্যবসায়ীদের দোকান। সেখানে রাস্তা বন্ধ করে যে যাঁর ইচ্ছেমতো মালপত্র ওঠানো-নামানো করছেন। দেয়াল ঘেঁষে চা-সিগারেটের দোকান। তার মধ্যেই প্রস্রাব করছেন কেউ কেউ। নানা ধরনের আবর্জনা ফেলা। সেসব পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করলেন, গেটের সামনে প্রায়ই ময়লার কনটেইনার রাখা থাকে। সদরঘাটের অংশে ফলের আড়ত। সেখানে ফুটপাতে আছে শ খানেক ফলের দোকান। পচা ফল ও খোসা টিনের বেড়ার ফাঁক গলে মঞ্জিলের ভেতরে চলে যাচ্ছে। এখানে দোকান করার ব্যাপারে জানতে চাইলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, তাঁরা অনেক দিন এভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন, কেউ কিছু বলে না। পাটুয়াটুলীর বাসিন্দা লিজা আক্তার তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছেন আহসান মঞ্জিলে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় আসাই কষ্ট। রিকশা-গাড়ির জট সহজে ছাড়ে না। এই নবাববাড়ির সামনের তো অবস্থা বেশি খারাপ।’ রুবেল হোসেন, আমজাদ মিয়া ও তারেক—এই তিন বন্ধু বরিশাল যাবেন, কিন্তু লঞ্চ ছাড়ার একটু বেশি আগে চলে আসায় নবাববাড়ি ঘুরতে এসেছেন। টিকিট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তারেক বলেন, ‘এইটা যদি জমিদারবাড়ি হয়, তাইলে বাইরে এত ময়লা ক্যান?
খালি ভিতরে সুন্দর রং-চং কইরা রাখলে কী লাভ। মানুষ তো আগে বাইরেরটাই দেখব।’ বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুসারে, ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ সালে শেষ হয়। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা নবাবদের এই বাসভবন ১৯৯২ সালে জাতীয় জাদুঘরের অধীনে একটি জাদুঘরে পরিণত করা হয়। আহসান মঞ্জিল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে এখানে ৫০০ দর্শনার্থী আসেন। এ ছাড়া ছুটি ও বিশেষ দিনগুলোতে চার থেকে পাঁচ হাজার দর্শনার্থী হয়। আহসান মঞ্জিলের ভেতরে চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট, নানা ধরনের কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মঞ্জিলের উপকিপার হুমায়ূন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ভেতরে একটি খাবারের দোকান আছে। দর্শনার্থীরা খাবার কিনে নোংরা করেন। চারদিকের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকজনকে তো কিছু বলা যায় না। নিজেদের লোক দিয়ে পোস্টার সরিয়ে ফেলব।’ আশপাশের দখল নিয়ে এই উপকিপার বলেন, এসব ঠিক করতে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগবে। বাইরে উচ্ছেদ বা সংস্কারে তাঁদের আইনগত অধিকার নেই। আহসান মঞ্জিলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪-এর অধীন। এই অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, উচ্ছেদ নিয়মিত হয়। তিনি গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখবেন বলে জানান।
No comments