যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কথায় আছে, যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণীর জন্ম হয় না। তাঁর সরকার গুণীজনদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার বিষয়ে আন্তরিক। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল সোমবার সকালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে এবারের একুশে পদক বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে সনদ, স্বর্ণপদক এবং দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা (সংগীত, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য, নাটক ও নৃত্য), সাংবাদিকতা, গবেষণা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজসেবা, ভাষা ও সাহিত্যে এ সম্মাননা দেওয়া হয়ে থাকে। এবার পদকপ্রাপ্তরা হলেন ‘অপরাজেয় বাংলার’ ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, দৈনিক জনকণ্ঠ-এর নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়, ভাষাসৈনিক অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুন (ভাষা আন্দোলনের জন্য), শিল্পকলায় (সংগীত) সুষমা দাস, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম (বংশীবাদক, শাস্ত্রীয় সংগীত), জুলহাস উদ্দিন আহমেদ (স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী), শিল্পকলায় (চলচ্চিত্র) তানভীর মোকাম্মেল (লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা),
শিল্পকলায় (নাট্যশিল্পী) সারা যাকের, গবেষণায় সৈয়দ আকরম হোসেন, শিক্ষায় ইমেরিটাস অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও লেখক), সাংবাদিকতায় আবুল মোমেন, সমাজসেবায় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান (আইপিজিএমআর-কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী), ভাষা ও সাহিত্যে সুকুমার বড়ুয়া (ছড়াকার), শিল্পকলায় (নৃত্য) শামীম আরা নীপা এবং শিল্পকলায় (সংগীত) রহমতউল্লাহ আল মাহমুদ সেলিম ওরফে মাহমুদ সেলিম (গণসংগীতশিল্পী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডসহ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদকারী) এবং ভাষা ও সাহিত্যে (মরণোত্তর) কবি ওমর আলী। তাঁদের মধ্যে কবি ওমর আলী ছাড়া বিজয়ী সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গতকাল পদক গ্রহণ করেন। কবি ওমর আলীর ছেলে মো. রফি মনোয়ার আলী তাঁর পক্ষে পদকটি গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সাহিত্য, শিক্ষা, কৃষি, ক্রীড়া, প্রযুক্তিসহ উদ্ভাবনাময় সব ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের অধিকারী ব্যক্তিত্বদের পুরস্কৃত ও সম্মানিত করে আসছি। এরই অংশ হিসেবে আজকের এই একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠান।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে মহান ভাষাশহীদগণ নিজেদের জীবনের বিনিময়ে একুশের সংগ্রামী ইতিহাস রচনা করেছেন, তাঁদের ত্যাগের দিকে লক্ষ রেখে আপনাদের মেধাকে দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধ ও সার্বিক বিকাশের কাজে লাগানোর বিনীত আহ্বান জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতির যখন যা কিছু অর্জন, তা অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমাদের অর্জন করতে হয়েছে। কাজেই সেই অর্জনকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি লক্ষ করছি, পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয় নাই। তারা কিছুদিন আগে একটি পুস্তক বের করে তাতে উল্লেখ করেছে, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা শুরু করেছিল, যাতে এ দেশীয় আলবদর, আলশামস, রাজাকাররা যোগ দিয়েছিল, সেসব গণহত্যা পাকিস্তানি সন্ত্রাসী বাহিনী নয়, মুক্তিযোদ্ধারা সংঘটন করেছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন যে অপপ্রচার তারা করে যাচ্ছে, তা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। কাজেই ২৫ মার্চকে আমাদের গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর স্বীকৃতির জন্য আমাদের প্রচার চালাতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, আমি নাম ধরেই বলতে চাই, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয় নাই।...তাঁর এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে পাকিস্তানের অপপ্রচারের কোনো সূত্র আছে কি না তা আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।’ ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালের ২৫ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা দেন, বঙ্গবন্ধু তখন বন্দী অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালেই তিনি ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মধ্যরাতের পর গোপন বৈঠক করে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিতেন। এ রকম এক বৈঠকেই ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির বিয়োগান্তক ঘটনা রাতারাতি আমাদের মনন, চিন্তাচেতনায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়।’ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম শফিউল আলম পদক বিতরণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিচারপতি, সাংসদ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, পদস্থ সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
No comments