ভিনদেশি ‘স্কোয়াস’ চাষ হচ্ছে রাজবাড়ীতে
১৯৭৬ সালে রাজবাড়ীর পাংশা কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। এরপর চাকরির চিন্তা না করে সোজা নেমে পড়েন কৃষিকাজে। বাবার দেওয়া জমিতে শুরু করেন বিভিন্ন সবজি ও ফসলের আবাদ। উপজেলা, এমনকি জেলার মধ্যে এখন তিনি আদর্শ কৃষক; পেয়েছেন নানা পুরস্কার-স্বীকৃতি। এই কৃষকের নাম আনসার আলী মণ্ডল (৬১)। পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের গাঁড়াল গ্রামের এই শিক্ষিত যুবক বিষমুক্ত সবজি, গ্রীষ্মকালীন টমেটোসহ বিভিন্ন ফল-সবজি উৎপাদন করে এখন এলাকার পরিচিত মুখ। তা ছাড়া তাঁর হাত ধরে রাজবাড়ীতে এসেছে ভিনদেশি সবজি ‘স্কোয়াস’। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) মো. লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্কোয়াস বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা, সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু। রাজবাড়ী জেলায় এই প্রথম ‘স্কোয়াস’ চাষ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আনসার আলীর বিষমুক্ত গ্রীষ্মকালীন টমেটো সাড়া ফেলেছে। গত ১৬ জানুয়ারি নিজের খেতে আলাপ হয় আনসার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চাষাবাদে তাঁর হাতেখড়ি সেই ১৯৭৬ সালে। তবে তিনি প্রথাগত চাষাবাদকে বিদায় বলেন ২০১০ সালে এসে। ওই বছর তিনি শুরু করেন স্ট্রবেরির চাষ। এরপর দিন যত গেছে, স্ট্রবেরির পাশাপাশি নিত্যনতুন চাষ শুরু করেছেন; চাষের পদ্ধতিতে এনেছেন বৈচিত্র্য। নিজ বাড়ির উঠানে মাশরুম চাষ করেছেন আনসার আলী।
২০০৩ সালে সাভারের মাশরুমকেন্দ্র থেকে এনে তিনি এই চাষ শুরু করেন। তবে এখন মাশরুমের চাষ বন্ধ রয়েছে। গত বছর থেকে শুরু করেন গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ। টমেটো শীতকালীন জনপ্রিয় সবজি হলেও তিনি একে বারোমাসি সবজি বানানোর চেষ্টায় আছেন। আনসার আলীর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, তিনি সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করেন। পোকামাকড় দমনের জন্য কীটনাশক না ব্যবহার করে তিনি খেতে বসিয়েছেন বিশেষ ফাঁদ। আনসার আলী বলেন, ২০১৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে সিআইজি (কমন ইন্টারেস্টেড গ্রুপ) কৃষক হিসেবে তিনিসহ চারজন ভিয়েতনামে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান। এই সফরেই তিনি ভিয়েতনামের জনপ্রিয় সবজি ‘স্কোয়াস’ চাষে উদ্বুদ্ধ হন। পাশাপাশি বারোমাস টমেটো চাষ করার পদ্ধতি শিখে আসেন। টমেটোখেতের পাশে এ বছর ১০ শতক জমিতে ‘স্কোয়াস’ চাষ শুরু করেছেন আনসার আলী। দুই মাস বয়সী স্কোয়াসগাছে এখন ফুল ও ফল এসেছে। তিন মাসের মাথায় এই সবজি বিক্রির উপযোগী হবে। মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বলেন, উদ্ভাবনকারী হিসেবে আনসার আলী জেলায় আদর্শ কৃষকের পরিচিতি পেয়েছেন। স্থানীয় অনেক কৃষক তাঁকে অনুসরণ করে সবজি আবাদ করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ স্ট্রবেরি, মাশরুম বা স্কোয়াসের মতো সবজি বা ফল খাওয়া দূরের কথা, অনেকে নামও শোনেনি। কিন্তু কৃষক আনসার আলীর সুবাদে এসব সবজি চিনতে পারছে, খেতেও পারছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আরও এগিয়ে যাবেন।
No comments