তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু ছয় দিন ধরে নিখোঁজ
সোহাগী
জাহান তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনের (রুবেল) বন্ধু মিজানুর রহমান এক
সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। পরিবার বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য
পরিচয় দিয়ে কিছু লোক গত ২৭ মার্চ রাতে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার
নারায়ণসার গ্রামের বাড়ি থেকে মিজানুরকে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তাঁর আর
কোনো খোঁজ মেলেনি। মিজানুরের মা সাহিদা আক্তার ও তাঁর বড় বোন খালেদা
আক্তার গতকাল শনিবার দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে এসে গণমাধ্যমকর্মীদের এ
কথা জানান। তাঁরা বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ মার্চ এ ঘটনায় বুড়িচং থানায়
একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডিতে বলা হয়, ২৭ মার্চ রাত একটায়
সাদাপোশাকধারী লোক তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে মিজানুর রহমানের (সোহাগ)
বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় মিজানুর রহমানকে নিয়ে চলে যায়। পরদিন
পরিবারের সদস্যরা র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে
তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। মিজানুরের বোন খালেদা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন,
‘তনু হত্যার পর টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিল রুবেল (তনুর ছোট ভাই)। ওই সময়ে
টেলিভিশন দেখে সোহাগ (মিজানুর রহমান) বলছিল, আমার বন্ধু রুবেল, ওর বোনই
তনু। এরপর রুবেলের ফোনে তিনবার কল দেয় সে।’ খালেদা আক্তারের ধারণা, তনুর
ভাইকে ফোন দেওয়ার কারণেই মিজানুরকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা
ভাইয়ের অবস্থান জানতে চাই।’ এই বিষয়ে জানতে চাইলে তনু হত্যা মামলার
তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ সুপার নাজমুল করিম খান গতরাতে প্রথম
আলোকে বলেন, মিজানুর রহমান নামে কাউকে আটক করা বা তুলে আনা-সম্পর্কিত
কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তাঁরা কাউকে আটক করেননি। পুরোনো আইনে তনু
হত্যার সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয় পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ: গতকাল তনুর
বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন ও আনোয়ার
হোসেন এবং চাচাতো বোন লাইজু জাহানকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি
জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই পাঁচজনকে সেনানিবাসের কোয়ার্টার থেকে গতকাল বেলা
তিনটার দিকে কুমিল্লায় সিআইডির কার্যালয়ে আনা হয়। রাত পৌনে দশটায় তাঁরা
সিআইডি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাসায় ফিরে যান। এর আগে বিকেল পৌনে চারটায়
কুমিল্লা পুলিশ অফিসার্স মেস ‘সঞ্চিতা’র ফটকে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের
জবাবে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বলেন, ‘তদন্তের অনেক কাজ
রয়েছে। সবগুলো দিক দেখতে হয়। সকাল থেকে ঘটনাস্থল দেখেছি। সবগুলো বিষয়
দেখে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হচ্ছে। আমরা আলোর মুখ দেখাতে চাই।
মাত্র তদন্ত শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তনুর মা-বাবাকে আমাদের দপ্তরে
এনেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। তাঁদের বারবার জিজ্ঞেস করা হবে। কোনো কিছু
বাদ গেল কি না।’ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন তদন্ত-সহায়ক দলের প্রধান সিআইডির
বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখছি। এটা
নিয়ে বিশ্লেষণ করছি। এর বাইরে আর কিছু বলা যাবে না।’ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মীকে ২০ মার্চ
দুর্বৃত্তরা খুন করে। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে
পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর
বাবা ক্যান্টনম্যান্ট বোর্ডের কর্মচারী ইয়ার হোসেন কুমিল্লার কোতোয়ালি
মডেল থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের নামে হত্যা মামলা করেন।
No comments