ভাষাবৈচিত্র্যের উৎসব বান্দরবানে by বুদ্ধজ্যোতি চাকমা
বান্দরবান কালেক্টরেট স্কুলমাঠে গতকাল অনুষ্ঠিত এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ উৎসবে অতিথিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করে এক শিক্ষার্থী |
বাংলা
ভাষাকে ঘিরেই ভাষা প্রতিযোগ উৎসব। তবে বান্দরবানের আয়োজন কেবল বাংলা
ভাষাভাষীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রতিযোগে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের
বড় একটা অংশ ছিল মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, বম, খিয়াং, চাক, ম্রোসহ বিভিন্ন
জাতিগোষ্ঠীর। বাংলা ভাষাতেও নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে তারা। তিনজন তো
রীতিমতো ‘বানান বীর’ খেতাব পেয়েছে। গতকাল শনিবার বান্দরবান কালেক্টরেট
স্কুল মাঠে আয়োজন করা হয় এইচএসবিসি-প্রথম আলোর উদ্যোগে ভাষা প্রতিযোগের
আঞ্চলিক উৎসবের। বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৬৮৩ জন
শিক্ষার্থী এ আয়োজনে অংশ নেয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর উপস্থিতির
কারণে এ আয়োজন ভাষাবৈচিত্র্যের উৎসবে পরিণত হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয়
সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে ভাষা প্রতিযোগের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এ
সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক।
ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
দানীউল হক। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধনের পর ৩৫ মিনিটের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর ছিল
বাংলা বানান নিয়ে আরও একটি পরীক্ষা। দুটি পরীক্ষা পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর
পর্ব। জমজমাট এ আয়োজনে বুদ্ধিদীপ্ত ও মজার প্রশ্ন করে শিক্ষক ও ভাষাবিদদের
চমকে দেয় অনেক শিক্ষার্থী। একজনের প্রশ্ন ছিল পাঠ্যবইয়ের সামনে নীতিবাক্য
না লিখে পেছনের পাতায় লেখা হয় কেন? আরেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল চক্ষুদান
মহৎ কাজ হলে চক্ষুদান অর্থ চুরি হওয়া বোঝায় কেন? সৃষ্টিশীল প্রশ্ন করে
পুরস্কার জিতে নেওয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভাষাবিদদেরও চমকে দিয়েছে
শিক্ষার্থীরা। বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের
ছাত্রী ইন্দ্রিলা তঞ্চঙ্গ্যার নীতিবাক্য-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুল হক বলেন, নীতিবাক্য যেখানে লেখা
হোক না কেন তা নীতিবাক্যই। পাঠ্যবইয়ের প্রথম পাতায় বইয়ের নাম ও পরিচিতি
থাকে। এ জন্য নীতিবাক্য লেখার কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজারের চকরিয়ার অনুশীলন
একাডেমির শিক্ষার্থী তাহরিন ইয়াসমি জানতে চায়, ভাষার বয়স ও মানুষের বয়সের
পার্থক্য কত? শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল, জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দানীউল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান
বিভাগের অধ্যাপক সৌরভ সিকদার। প্রশ্নোত্তর পর্বের সঞ্চালনা করেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ভাষা প্রতিযোগের সমন্বয়কারী তারিক
মনজুর। প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যেই মারমা গান গেয়ে শোনায় বান্দরবান
সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মুইয়ে মেথিং মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা গান শোনায়
মনিকা তঞ্চঙ্গ্যা। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে বানান পরীক্ষায় বিজয়ী আটজনকে নিয়ে
অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি বানান প্রতিযোগিতা। তাদের মধ্যে সুহার্তো তঞ্চঙ্গ্যা
প্রথম, মনিকা তঞ্চঙ্গ্যা দ্বিতীয় ও বিজয়ানন্দ চাকমা তৃতীয় হয়। তাদের ‘বানান
বীর’ ঘোষণা দেওয়া হয়। উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে গান শোনান ক্লোজআপ ওয়ান তারকা
রাশেদ। পরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বান্দরবান কালেক্টরেট স্কুলের প্রধান
শিক্ষক আবদুর রহিমের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা
সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। শেষ পর্বে প্রতিযোগের লিখিত পরীক্ষায় বিজয়ীদের নাম
ঘোষণা করেন বন্ধুসভার সদস্য ডকিউ মারমা। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে
দেন অতিথিরা। প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চারটি
বিভাগে ১৫ করে মোট ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের মধ্যে
সেরাদের সেরা হয়েছে চকরিয়ার অনুশীলন একাডেমির শামীম আশ্রাফ ছিদ্দিকী। বিজয়ী
৬০ শিক্ষার্থী ঢাকায় জাতীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করবে।
No comments