অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ কার্ড দেবে সরকার
মহিলা
ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগমের আরেক পরিচয়, তিনি অটিস্টিক
সন্তানের মা। নাছিমা বেগম বলেন, ‘কোনো মা কি সন্তানের মৃত্যু কামনা করে?
একসময় আমি কামনা করেছি। কেননা, আমার সন্তানকে কোথায় রেখে যাব? আমার সন্তান
কোথায় থাকবে, তা আমি মারা যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই।’ নাছিমা বেগম বলেন,
‘আমি সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে সরকারের সীমাবদ্ধতা বুঝি। আবার মা হিসেবে
সন্তানের চাহিদা বুঝি। বর্তমানে সরকার এগিয়ে এসেছে। আরও অনেকে এগিয়ে আসছে।
এই সন্তানদের জন্য যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ গতকাল
শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আয়োজিত বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সচিব এ আহ্বান জানান। অটিস্টিক সন্তানের
অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্টলি অ্যাবলের
সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুরুতে এবং অতিথিদের আলোচনা শেষে
৪০ জন অটিস্টিক শিশুর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবাইকে মুগ্ধ করে।
শিশু একাডেমীর মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে ১৭ বছর বয়সী সিয়াম।
স্পষ্ট করে অনুষ্ঠানের অতিথিদের নাম বলে। একজন অতিথির নাম বলার পর সবাই
বুঝতে পারেন, ওই অতিথি উপস্থিত নেই। বিষয়টি সিয়ামের বুঝতে খানিকটা দেরি হয়।
শুধু এইটুকু ছাড়া আর কোনো ভুল ছিল না সিয়ামের উপস্থাপনায়। সিয়াম একজন
অটিস্টিক শিশু। সিয়ামের মা সাজিদা রহমান প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্টলি
অ্যাবলের প্রেসিডেন্ট। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমার
সন্তান অটিস্টিক। এটা কোনো লজ্জার বিষয় নয়। অটিস্টিক সন্তানদের
সীমাবদ্ধতা আছে, তবে ফেলনা নয়। আমরা একীভূত সমাজের যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা
আস্তে আস্তে বাস্তবায়িত হচ্ছে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিশু
একাডেমীর চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ অটিস্টিক
সন্তানদের ঘরে বন্দী করে না রেখে বাইরে বের করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি
আহ্বান জানান। তিনি জানান, সরকার অটিস্টিক শিশু ও ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ
কার্ড দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, যাতে করে তারা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে
অগ্রাধিকার পেতে পারে। শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তব্যে
অটিজমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অটিজম নিয়ে জাতীয় তথ্য থাকার বিষয়টিতে
গুরুত্ব দেন। এ ছাড়া অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে পরিচালিত স্কুলগুলোকে সরকার
যাতে অনুদান দেয়, সেই আহ্বানও জানান।শিশু একাডেমীর মিলনায়তনের বাইরে
অটিস্টিক শিশুদের তৈরি নানা পণ্য এবং অটিস্টিক শিশু শাহরিয়ার মাহমুদের
তোলা ২৬টি আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীও সবাইকে মুগ্ধ করে।
No comments