বাউনিয়া খাল দখল করে ঘর,পানিপ্রবাহ বন্ধ by সামছুর রহমান
মিরপুর
১৪ নম্বরের বাউনিয়া খালের ভেতর বাঁশের খুঁটি পুঁতে অবৈধ ঘর তুলেছেন
স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। এতে খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে
ময়লা-আবর্জনার পুরু স্তর পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই খালের পাশে গড়ে ওঠা
বাগানবাড়ি বস্তির ঘরগুলো ময়লা পানিতে ডুবে যায়। মিরপুর ১৪ নম্বর
বাসস্ট্যান্ডে বাউনিয়া খালটি মার্ক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশে সিএনজি
স্টেশন লাগোয়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি বাগানবাড়ি খাল নামেও পরিচিত।
গতকাল শনিবার দেখা যায়, খালের এক মাথায় বাঁশ, টিন দিয়ে অর্ধশতাধিক ঘর তোলা
হয়েছে। এসব ঘর বানাতে খালের কয়েক শ বাঁশ পুঁতে বাঁধের মতো করে পানিপ্রবাহ
আটকে দেওয়া হয়েছে। খালের মধ্যে প্লাস্টিক বোতল, টিন, পলিথিনসহ বিভিন্ন
বর্জ্য জমে আছে। এত পুরু ময়লা-আবর্জনা জমেছে যে, এটিকে আর খাল বলে মনে হয়
না। এক পাল মুরগি এসব ময়লার ওপর চরে বেড়াতে দেখা যায়। খালের পাশের খালি
জায়গায় গড়ে উঠেছে বাগানবাড়ি বস্তি। খালে পানিপ্রবাহ না থাকায় অল্প
বৃষ্টিতেই পানি বস্তির ঘরগুলোতে ঢুকে যায়। বস্তির বাসিন্দা আবদুল হালিম,
আল-আমিন ও মো. সেলিম বলেন, খালের শেষ মাথায় মো. জাহাঙ্গীর নামের স্থানীয় এক
নেতা ঘর তোলেন। তারপর থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই খালে ময়লা
জমতে থাকে। আগে এসব ময়লা জমত না। সিটি করপোরেশনের লোকজন আসেনও না। এ বিষয়ে
মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কিছু ঘর খালের ওপর আছে, এটা ঠিক।
কিন্তু আরও অনেকের ঘরই খালের ওপর আছে। আমি যেকোনো সময় ঘরগুলো ভেঙে দিতে
প্রস্তুত। সবাই যদি একবারে ঘর ভেঙে খাল পরিষ্কার করে, তবে আমার আপত্তি
নাই।’ কাফরুল, কচুক্ষেত, ভাষানটেক, ইব্রাহিমপুর ও মিরপুর এলাকার নালার পানি
এই খাল দিয়ে নামে। খালে পানি প্রবাহিত হতে না পারায় সব ময়লা এসে বাগানবাড়ি
বস্তির সামনের অংশে জমছে। এই ময়লা-আবর্জনা এবং অপরিচ্ছন্ন পানির কারণে
মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে পড়েছে খালটি। বস্তির বাসিন্দা সালেকা বেগম বলেন,
‘ভোটের আগে আইস্যা মিষ্টি মিষ্টি কথা বইল্যা ভোট নয়া যায়। এখন ময়লায় থাকি,
ঘুমাই দেখার কেউ নাই। মশার গোডাউন এই ময়লা খালে। যেদিন বৃষ্টি হয়, ঘরে কোমর
সমান পানি হয়।’ বাগানবাড়ি বস্তিতে ভোটার আছেন প্রায় দুই হাজার। মোট
বাসিন্দার সংখ্যা কমবেশি আট হাজার। বস্তির কোনো কোনো বাসিন্দা প্রায় এক দশক
ধরে এখানে বসবাস করছেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
(ডিএনসিসি) নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন,
নির্বাচিত হলে এই বস্তিবাসীর দুঃখ খালটি পরিষ্কার করে দেবেন। নির্বাচনের
হয়েছে এক বছর হতে চলল। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ বিষয়ে
ডিএনসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন,
খালটির পানিপ্রবাহ ঠিক থাকলে মিরপুর এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই
কমবে। কিছু লোক অবৈধভাবে খালে ঘর তুলছে। মেয়র আনিসুল হক নিজে এসে খালের
অবস্থা দেখে গেছেন। ওয়াসার পরিচালক, প্রকৌশলীরা এসে দেখে গেছেন। তবে
অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।
No comments