ছয় মাস বাড়তি সাজা খাটলেন আবু তালেব
সরকারি
কাজে বাধাদান ও মারধরের মামলায় গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালত বেকসুর খালাস
দেন চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আবু তালেবকে (৪০)। রায়
ঘোষণার পর আদেশনামাটি আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু
সেটি পৌঁছায়নি। এ কারণে ৫ মাস ২৪ দিন বাড়তি সাজা খাটতে হয়েছে গাড়ির
যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ করা তালেবকে। ২০০৮ সালের ওই মামলায় গত বছরের ৭
আগস্ট আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোহাম্মদ ফরিদ আলম এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। আবু
তালেবসহ ১০ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার
থেকে তালেব মুক্তি পান চলতি বছরের ২১ মার্চ। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের
কারাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, মামলা থেকে খালাসের আদেশ না
পাওয়ায় আবু তালেবকে মুক্তি দেওয়া যায়নি। তাঁর কোনো আইনজীবী ছিল না।
খালাসের বিষয়টিও তিনি জানতেন না। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জামিনের
ব্যবস্থা করতে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের কথা কারা কর্তৃপক্ষকে বলেন
তিনি। এরপর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। আর্থিক
সামর্থ্য না থাকায় ছেলের জন্য আইনি লড়াই চালাতে পারেননি বলে জানান তালেবের
মা আবেদা খাতুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি।
গাড়ির ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করে ছেলে সংসার চালাত। সে কারাগারে থাকায় আমার
নিজের চলাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। যাদের কারণে ছেলেকে বাড়তি ছয় মাস সাজা খাটতে
হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মুখ্য
মহানগর হাকিম আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহানা আক্তার প্রথম
আলোকে বলেন, আসামি মামলা থেকে খালাস পাওয়ার আদেশটি কারাগারে পৌঁছে যাওয়ার
কথা। এটি কেন পৌঁছাল না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের
শনাক্ত করা হবে। আদালত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম
নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোডের বাস্তুহারা কলোনিতে ফেনসিডিল উদ্ধারে অভিযান
চালান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তখন তাঁদের ওপর হামলা
করে মাদক ব্যবসায়ীরা। এই ঘটনায় অধিদপ্তরের পরিদর্শক লোকাশীষ চাকমা বাদী হয়ে
চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে সরকারিকাজে বাধাদান
ও মারধর করে জখমের অভিযোগে মামলা করেন। পরের বছরের ২৭ আগস্ট এজাহারে থাকা
চার আসামি এবং আবু তালেবসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে আবু তালেবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
জারি করেন। ২০০৯ সালের ২৬ জুন তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিন মাসের মাথায়
জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। কিন্তু জামিনে গিয়ে মামলার ধার্য দিনে
গরহাজির থাকায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি
পরোয়ানা জারি করেন। এই পরোয়ানায় গত বছরের ৭ আগস্ট তালেবকে আবার গ্রেপ্তার
করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় আবু তালেবের সঙ্গে। তিনি প্রথম
আলোকে বলেন, ‘অপরাধী না হয়েও এই মামলায় প্রথমবার গ্রেপ্তার হলে স্ত্রী
তালাক দিয়ে চলে যায়। দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হয়ে চাকরি হারিয়েছি। ঘরে আছেন
শুধু বিধবা মা। তাঁর পক্ষে আইনি লড়াই চালানো সম্ভব হয়নি। তাই মামলা থেকে
খালাস পেলেও বিষয়টি জানতাম না। খালাস পাওয়ার পরও ছয় মাস কারাগারে কাটাতে
হয়েছে। এই ছয় মাস কে ফিরিয়ে দেবে আমাকে।’
No comments