অর্পিত সম্পত্তি আইন আবার সংশোধন হচ্ছে
অর্পিত
সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন আবারও সংশোধন করা হচ্ছে। সম্পত্তি প্রত্যর্পণের
জন্য আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো, আপিল নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আপিল
ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং যেসব রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে সময়মতো আপিল করা হয়নি
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সেগুলোর জন্যও আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এই
সংশোধন হচ্ছে। ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের নামে রেকর্ড করে
দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি পরিপত্র জারির পরও যে অচলাবস্থা চলছে তা নিরসন করাও
এই সংশোধনীর আরেকটি লক্ষ্য। সরকার ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি দলিলপত্র দেখে
মালিকদের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার জন্য পরিপত্র জারি করেছিলেন। কিন্তু
প্রশাসন তা নিয়ে গড়িমসি করায় এখন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। আইন ও
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আইনটি সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে একটি খসড়া
বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন
করা হবে। এর পর জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনটি
প্রণয়ন করা হয় ২০০১ সালে (২০০১ সালের ১৬ নম্বর আইন)। এর আগে আইনটি পাঁচবার
সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই বার করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের
আমলে, এটির কার্যকারিতা স্থগিত রাখার জন্য। এই আইনের আওতায় অর্পিত সম্পত্তি
প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। এই প্রক্রিয়ায় সারা দেশে
এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মামলার
নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু একজন দাবিদারের কাছেও এখন পর্যন্ত সম্পত্তি
প্রত্যর্পণ করা হয়নি। এই অবস্থায় আরও একবার আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ
সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি
প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নে তৃণমূলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ সব সমস্যা
সৃষ্টি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। এবারের সংশোধনীর মাধ্যমে তা নিরসন হতে
পারে। এবারের সংশোধনীর শিরোনাম হচ্ছে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন)
আইন, ২০১৬ ’। এই সংশোধনীর খসড়ায় বলা হয়েছে, সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য
আবেদন করার নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও এই সংশোধনী কার্যকর হওয়ার তারিখ
থেকে অনধিক ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যাবে। মন্ত্রণালয়
সূত্র বলেন, এর ফলে যারা আবেদন করতে পারেননি তাঁরা নতুন করে আবেদন করার সময়
পাবেন। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য প্রতি জেলায় একটি আপিল
ট্রাইব্যুনালের স্থলে একটি অতিরিক্ত আপিল ট্রাইব্যুনাল ও একটি বিশেষ আপিল
ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিরিক্ত আপিল
ট্রাইব্যুনালে বিদ্যমান আপিল ট্রাইব্যুনালের মতোই আপিল দায়ের করা যাবে। আর
বিশেষ আপিল ট্রাইব্যুনালে সেই সব আপিল দায়ের করা যাবে যে আপিলগুলো দায়ের
করার সময়সীমা এর মধ্যে পার হয়েছে। অর্থাৎ যেসব রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে
সময়মতো আপিল করা হয়নি, এই সংশোধনী কার্যকর হওয়ার তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সেগুলোর জন্যও আপিল করা যাবে। ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি
প্রকৃত মালিকের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে সমস্যা
হলো, এ ধরনের সম্পত্তির রেকর্ডপত্র অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মালিকের নামে নেই।
এই সমস্যা নিরসনে সরকার ‘খ’ তফসিল বাতিল করার পর একটি পরিপত্র জারি
করেছিল। তাতে রেকর্ড যার নামেই থাকুক না কেন, কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে সেই সম্পত্তি প্রকৃত মালিকের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার ক্ষমতা ভূমি
ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বলতে গেলে
কোনো ক্ষেত্রেই তাঁরা তা করেননি। তাই এখন আইন সংশোধনের মাধ্যমের পরিপত্রের
বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাবে বলা
হয়েছে, বাতিল ঘোষিত ‘খ’ তফসিলভুক্ত কোনো সম্পত্তি কোনো ব্যক্তি, সংস্থা,
প্রতিষ্ঠান, সরকার বা অন্য কোনো নামে রেকর্ড করার যেকোনো পর্যায়ে কিংবা
রেকর্ড করা হয়ে থাকলেও ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা
কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত দাবিদারের অনুকূলে ওই সম্পত্তির
খতিয়ান সংশোধন করতে পারবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র বলেন, সরকার অর্পিত সম্পত্তি
প্রত্যর্পণে অত্যন্ত আন্তরিক। কিন্তু বাস্তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা
সৃষ্টি হয়েছে। এবারের সংশোধনীর মাধ্যমে এসব সমস্যার নিরসন হবে বলে সরকার
আশা করে।
No comments