ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কেটে পুলিশের বহুতল ভবন!by আসিফুর রহমান
বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরের কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। |
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির গাছ কেটে সেখানে
বহুতল ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ বিভাগ। এরই মধ্যে সেখানে
১০-১২টি গাছ কাটা হয়েছে, যার অন্তত তিনটি শতবর্ষী বলে শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশ ফাঁড়ির ওই
জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর পুলিশ বলছে, জায়গাটি তারা ১৯৩৪ সালেই গণপূর্ত
অধিদপ্তরের কাছ থেকে নিয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তারা সেখানে
ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে। পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক
(এস্টেট) শোয়েব রিয়াজ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাবুপুরা ও নীলক্ষেত পুলিশ
ফাঁড়িতে পুলিশের আবাসনসংকট নিরসনে ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাবুপুরা ফাঁড়িতে ১০ তলা ফাঁড়ি ভবন এবং বিভিন্ন জোনের
পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। জায়গার গাছ
কাটা হয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরবরি কালচার বিভাগের অনুমতি নিয়ে।
যথাযথ জরিপ করে এবং নিলামের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার
বিকেলে ফাঁড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখন পুলিশ ফাঁড়ি যে টিনের ঘরে, তা সামনে
সরিয়ে আনার কাজ চলছে। ইটের গাঁথুনি দিয়ে সাময়িক ব্যবহারের জন্য এ ঘর
নির্মাণ করা হচ্ছে। ফাঁড়ির পেছনের অংশে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বড় কয়েকটি
গাছসহ ছোট-মাঝারি ১০-১২টি গাছ কাটার চিহ্ন আছে। কিছু কিছু ডালপালা ও গাছের
অংশ তখনো পড়ে ছিল। ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন,
‘এখানে ভবন হবে কি না জানি না। তবে কয়েক দিন আগে পিডব্লিউডি (গণপূর্ত
অধিদপ্তর) এখানে গাছ কেটেছে। কেন কেটেছে সেটা আমি বলতে পারব না।’ খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে গাছ কাটা শুরু হয়। এ সময় পাশের আনোয়ার
পাশা ভবনের একাধিক শিক্ষক ও ফজলুল হক মুসলিম হলের কয়েকজন ছাত্র এর প্রতিবাদ
করেন। সেখানে গিয়েই তাঁরা ফাঁড়ির জায়গায় পুলিশ আবাসিক ভবন নির্মাণের তথ্য
জানতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা ও সম্পত্তি দেখভাল করে
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট বিভাগ। এর ব্যবস্থাপক সুপ্রিয়া দাস প্রথম আলোকে
বলেন, ১৯৬১ সালের আজম খান কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়কে যে জমি বুঝিয়ে দিয়েছিল,
তাতে এ জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পুরোনো মানচিত্রেও ফাঁড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায়
দেখানো আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে এখান থেকে পুলিশ ফাঁড়িটি
সরানো হয়নি। তার মানে এই নয় যে, জমিটি পুলিশের। তিনি জানান, এর আগেও ২০০৫
ও ২০০৮ সালে পুলিশ এখানে ভবন নির্মাণ করতে চেয়েছিল। তখনো বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা বন্ধ করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গাছপালা
তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরি কালচার সেন্টারের।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কোনো গাছ কাটতে হলে আরবরি কালচারের অনুমতি নিতে হয়।
কিন্তু বাবুপুরা ফাঁড়ির গাছ কাটার ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি
নেওয়া হয়নি বলে জানান আরবরি কালচার বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক মিহির লাল
সাহা। এ সম্পর্কে শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, ‘জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে
আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতাম। কিন্তু এটি গণপূর্ত
অধিদপ্তরের কাছ থেকে ১৯৩৪ সালে পুলিশ নিয়েছে। দখলসূত্রে ৮০ বছর ধরে এটি
পুলিশের মালিকানায়। তাই ভবন নির্মাণ করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া
হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়িটি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ
থেকে নিয়েছি। সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে
অনুমতি নেওয়া হয়েছে।’ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ
আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, যদি তারা বলে থাকে, ১৯৩৪ সাল
থেকে এখানে আছে, তবে তা ভুল। এ জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের। স্বাধীনতার পর তাদের
এখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে। তারা এখানে ভবন নির্মাণ করছে, বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মৌখিকভাবে এ
ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তির কথা জানানো হয়েছে। গাছগুলোর ব্যাপারে
উপাচার্য বলেন, ওখানে গাছগুলো অনেক প্রয়োজনীয় ছিল। আরও যেসব গাছ রয়েছে,
সেগুলো যেন না কাটা হয়, সে জন্য তাদেরকে বলা হয়েছে। নীলক্ষেত পুলিশ
ফাঁড়িতে ভবন নির্মাণের কোনো অনুমতির কথা জানেন না বলে জানান উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের
একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মনে করেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো সংস্থার
স্থায়ী কার্যালয় বা আবাসিক ব্যবস্থা রাখা ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হতে পারে। এ
প্রসঙ্গে তাঁরা গত এক-এগারোর সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌথ বাহিনীর
ক্যাম্প করা এবং তারপর সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
ক্যাম্পাসে পুলিশের জন্য স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সময় এসব বিষয় বিবেচনায়
রাখা উচিত বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
No comments