স্যুয়ারেজ লাইনে জীবন-মৃত্যু by সাজেদুল হক
কথাসাহিত্যিক
হুমায়ূন আহমেদ বলতেন, আমাদের স্মৃতিশক্তি অ্যাকোরিয়ামের মাছের মতো। এক
মাথা থেকে অন্য মাথায় যেতে সব ভুলে যাই। হুমায়ূন বোধ হয় ঠিকই ধরেছিলেন।
বিস্মৃতিপরায়ণ এক জাতি আমরা। ভুলে যেতে পারি খুব দ্রুত। এজন্যই হয়তো
নিষ্ঠুরতা আমাদের জীবনে বারবার ফিরে আসে। যেন আমরা অতীত ভুলে যেতে না পারি।
জিহাদের কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে গেছি। রাজনৈতিক উত্তেজনার একদিনে ওয়াসার পরিত্যাক্ত খোলা পাইপের মুখ দিয়ে পড়ে গিয়েছিল শিশুটি। চার বছর বয়সের দুরন্ত শিশুটির এভাবে পড়ে যাওয়া সেসময় তোলপাড় তৈরি করেছিল। তারপর পাওয়া গিয়েছিল তার লাশ। না সে লাশও রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থা তুলতে পারেনি। কয়েক তরুণ নিজস্ব পদ্ধতিতে জিহাদের লাশ উপরে তুলেছিল। এ নির্মম মৃত্যু কিছুদিন আমাদের ব্যথিত করেছে। কিন্তু ম্যানহোলের মুখ বন্ধ হয়নি। এ রাজধানী শহরে এখনও বহু ম্যানহোলের মুখ খোলা। কারণ এখানে জীবনের দাম সর্বনিম্ন। এ মাতৃভূমিতে সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে, শুধু কমেছে জীবনের দাম। মৃত্যুর আমরা নানা নাম দিই। ধর্ম আর রাজনীতিভেদে শোককেও করি আলাদা। সব শোক এখানে এক নয়। সব মৃত্যুও এক নয়। যেমন আলাদা বৈরুত আর প্যারিসের মানুষের জীবনের দাম।
আরও একটি মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই উপত্যকায় জীবনের দাম কত। ছোট্ট শিশু নীরব। ছেলটি চিরতরে নীরব হয়ে গেল ম্যানহোলে পড়ে। স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে তার লাশ ভেসে উঠেছে বুড়িগঙ্গায়। এ বুড়িগঙ্গায় এখন কত মানুষের লাশই না ভেসে ওঠে। প্রায়শই পত্রিকায় খবর আসে। কখনও খবর আসে না। জীবন আর মৃত্যুর গল্প যেন একই। না নীরবের জন্য তেমন কোন শোকগাঁথা রচিত হয়নি। সবটিভি চ্যানেল সমান গুরুত্ব দিয়ে এ সংবাদ প্রকাশ করেনি। সব পত্রিকায়ও পায়নি গুরুত্ব। ভাবমূর্তির প্রশ্নটি এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি জমানায় একবার মূর্তি চুরি হয়েছিল। সেসময় এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেছিলেন, ভাবতো আগেই গিয়েছিল। এবার মূর্তিও গেল।
যাক সে কথা। বলছিলাম জীবন আর মৃত্যুর কথা। নীরবের স্যুয়ারেজ মৃত্যুতে শোক জানাতে কোন প্রভাবশালী যাননি। এ মৃত্যুর দায় এখনও কেউ স্বীকার করেননি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে কেউ কোন বিবৃতিও দেননি। আশার কথা অবশ্য আছে। কেউ এখনও বলেননি, এই আর এমন কি? যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে বন্দুকদারীদের আক্রমণে আরও ঢের বেশি মানুষ মারা যায়।
অ্যাকোরিয়াম পিস হিসেবে আমরাও খুব বেশি দিন মনে রাখবো না নীরবকে। অচিরেই সে চলে যাবে বিস্মৃতির খাতায়। নতুন কোন ঘটনা ঘটবে। আমরা আবার লিখতে বসবো, নতুন কোন বিষয় নিয়ে। কিন্তু একটি প্রশ্ন রয়েই যাবেÑ কবে থামবে এমন মৃত্যু।
জিহাদের কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে গেছি। রাজনৈতিক উত্তেজনার একদিনে ওয়াসার পরিত্যাক্ত খোলা পাইপের মুখ দিয়ে পড়ে গিয়েছিল শিশুটি। চার বছর বয়সের দুরন্ত শিশুটির এভাবে পড়ে যাওয়া সেসময় তোলপাড় তৈরি করেছিল। তারপর পাওয়া গিয়েছিল তার লাশ। না সে লাশও রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থা তুলতে পারেনি। কয়েক তরুণ নিজস্ব পদ্ধতিতে জিহাদের লাশ উপরে তুলেছিল। এ নির্মম মৃত্যু কিছুদিন আমাদের ব্যথিত করেছে। কিন্তু ম্যানহোলের মুখ বন্ধ হয়নি। এ রাজধানী শহরে এখনও বহু ম্যানহোলের মুখ খোলা। কারণ এখানে জীবনের দাম সর্বনিম্ন। এ মাতৃভূমিতে সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে, শুধু কমেছে জীবনের দাম। মৃত্যুর আমরা নানা নাম দিই। ধর্ম আর রাজনীতিভেদে শোককেও করি আলাদা। সব শোক এখানে এক নয়। সব মৃত্যুও এক নয়। যেমন আলাদা বৈরুত আর প্যারিসের মানুষের জীবনের দাম।
আরও একটি মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই উপত্যকায় জীবনের দাম কত। ছোট্ট শিশু নীরব। ছেলটি চিরতরে নীরব হয়ে গেল ম্যানহোলে পড়ে। স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে তার লাশ ভেসে উঠেছে বুড়িগঙ্গায়। এ বুড়িগঙ্গায় এখন কত মানুষের লাশই না ভেসে ওঠে। প্রায়শই পত্রিকায় খবর আসে। কখনও খবর আসে না। জীবন আর মৃত্যুর গল্প যেন একই। না নীরবের জন্য তেমন কোন শোকগাঁথা রচিত হয়নি। সবটিভি চ্যানেল সমান গুরুত্ব দিয়ে এ সংবাদ প্রকাশ করেনি। সব পত্রিকায়ও পায়নি গুরুত্ব। ভাবমূর্তির প্রশ্নটি এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি জমানায় একবার মূর্তি চুরি হয়েছিল। সেসময় এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেছিলেন, ভাবতো আগেই গিয়েছিল। এবার মূর্তিও গেল।
যাক সে কথা। বলছিলাম জীবন আর মৃত্যুর কথা। নীরবের স্যুয়ারেজ মৃত্যুতে শোক জানাতে কোন প্রভাবশালী যাননি। এ মৃত্যুর দায় এখনও কেউ স্বীকার করেননি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে কেউ কোন বিবৃতিও দেননি। আশার কথা অবশ্য আছে। কেউ এখনও বলেননি, এই আর এমন কি? যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে বন্দুকদারীদের আক্রমণে আরও ঢের বেশি মানুষ মারা যায়।
অ্যাকোরিয়াম পিস হিসেবে আমরাও খুব বেশি দিন মনে রাখবো না নীরবকে। অচিরেই সে চলে যাবে বিস্মৃতির খাতায়। নতুন কোন ঘটনা ঘটবে। আমরা আবার লিখতে বসবো, নতুন কোন বিষয় নিয়ে। কিন্তু একটি প্রশ্ন রয়েই যাবেÑ কবে থামবে এমন মৃত্যু।
No comments