সাকা–মুজাহিদের ফাঁসি: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ, রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু
মুক্তিযুদ্ধকালের
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন
কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান
মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়
গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। সন্ধ্যায় তা আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে এ দুজনের বিরুদ্ধে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। তবে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি প্রকাশিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বের হয়েছে। এখন এটি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। একই বেঞ্চ গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুজাহিদের আপিলের ১৯১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা এ রায়ের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আর সাকা চৌধুরীর আপিলের ২১৭ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা তাঁর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছে। আজ বৃহস্পতিবার রায় দুটি ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ দুজনেই কারাগারে রয়েছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আর মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁরা দুজনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন।
রায় যেভাবে কার্যকর হবে: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তাঁরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।
রায় কীভাবে কার্যকর হবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে পূর্ণাঙ্গ রায় বিচারিক আদালতে, অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগের বেঁধে দেওয়া সময় অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্র। তবে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তখন মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। আপিল বিভাগ যদি আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন, তাহলে সব শেষে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তবে আসামি ক্ষমা না চাইলে তখন দণ্ড কার্যকর করতে কোনো বাধা থাকবে না।
অবকাশের মধ্যে আপিল বিভাগে পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি হতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এটা পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার।
সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে অবকাশ চলছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ অবকাশ চলবে। ১ নভেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় দেড় মাস পর তা কার্যকর হয়েছিল। জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর হয়। এ দুজনের কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি।
গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫তম দিনে (৫ মার্চ) তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ সামনে থাকায় আসামিপক্ষ শুনানি মুলতবি চায়, আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে ৫ এপ্রিল পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি হয়, ৬ এপ্রিল তা খারিজ করেন আদালত। ১২ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সরকার।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় অবশ্য পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সময়সীমা নিয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ নেয় সরকার। সেদিন নির্ধারিত সময়ের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে চেম্বার বিচারপতির কাছে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কাদের মোল্লা। ১২ ডিসেম্বর তাঁর আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। ওই রাতেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কাদের মোল্লার পুনর্বিবেচনার আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন আদালত।
রায়ে যা বলেছেন আদালত: মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। আর এই হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদ প্ররোচনা, উসকানি, পরামর্শ ও সহায়তা করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা শুধু হিটলারের গ্যাস চেম্বার গণহত্যার সঙ্গে তুলনীয়। তিনি নিঃসন্দেহে একজন যুদ্ধাপরাধী এবং এ জন্য তাঁকে ট্রাইব্যুনাল যে সাজা দিয়েছেন, শুধু সে সাজাই দেওয়া যায়।
সাকা চৌধুরীর রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, আসামি সর্বোচ্চ নির্মমতা ও চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটিত করেছেন। তিনি বেসামরিক ও নিরস্ত্র মানুষকে নিপীড়ন করেছেন, তাঁদের নির্যাতন করে হত্যা করেছেন, নিরীহ মানুষদের গুম করেছেন এবং মানুষের সম্পদে বাধাহীন লুটতরাজ চালিয়েছেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণে তিনি এসব অপরাধ করেছেন পরিকল্পিতভাবে তাঁর প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য। ট্রাইব্যুনাল যে এ জন্য তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন, এতে হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণই থাকতে পারে না।
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলাটিরও আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। আপিল বিভাগ তাঁকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে এ দুজনের বিরুদ্ধে রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। তবে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি প্রকাশিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বের হয়েছে। এখন এটি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। একই বেঞ্চ গত ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। এই বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুজাহিদের আপিলের ১৯১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা এ রায়ের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আর সাকা চৌধুরীর আপিলের ২১৭ পৃষ্ঠার রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা তাঁর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় দুটি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেছে। আজ বৃহস্পতিবার রায় দুটি ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ দুজনেই কারাগারে রয়েছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আর মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁরা দুজনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন।
রায় যেভাবে কার্যকর হবে: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তাঁরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।
রায় কীভাবে কার্যকর হবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে পূর্ণাঙ্গ রায় বিচারিক আদালতে, অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে পাঠাবেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল আসামিদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগের বেঁধে দেওয়া সময় অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। আর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারবে রাষ্ট্র। তবে ১৫ দিনের মধ্যে আসামিরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তখন মৃত্যু পরোয়ানা ও দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। আপিল বিভাগ যদি আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন, তাহলে সব শেষে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তবে আসামি ক্ষমা না চাইলে তখন দণ্ড কার্যকর করতে কোনো বাধা থাকবে না।
অবকাশের মধ্যে আপিল বিভাগে পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি হতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এটা পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার।
সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে অবকাশ চলছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এ অবকাশ চলবে। ১ নভেম্বর থেকে সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় দেড় মাস পর তা কার্যকর হয়েছিল। জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর হয়। এ দুজনের কেউ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি।
গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫তম দিনে (৫ মার্চ) তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ সামনে থাকায় আসামিপক্ষ শুনানি মুলতবি চায়, আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে ৫ এপ্রিল পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি হয়, ৬ এপ্রিল তা খারিজ করেন আদালত। ১২ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সরকার।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় অবশ্য পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সময়সীমা নিয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ নেয় সরকার। সেদিন নির্ধারিত সময়ের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে চেম্বার বিচারপতির কাছে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কাদের মোল্লা। ১২ ডিসেম্বর তাঁর আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। ওই রাতেই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কাদের মোল্লার পুনর্বিবেচনার আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায়ে পুনর্বিবেচনার আবেদনের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন আদালত।
রায়ে যা বলেছেন আদালত: মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা হাতে নিয়ে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। আর এই হত্যাকাণ্ডে মুজাহিদ প্ররোচনা, উসকানি, পরামর্শ ও সহায়তা করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা শুধু হিটলারের গ্যাস চেম্বার গণহত্যার সঙ্গে তুলনীয়। তিনি নিঃসন্দেহে একজন যুদ্ধাপরাধী এবং এ জন্য তাঁকে ট্রাইব্যুনাল যে সাজা দিয়েছেন, শুধু সে সাজাই দেওয়া যায়।
সাকা চৌধুরীর রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, আসামি সর্বোচ্চ নির্মমতা ও চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটিত করেছেন। তিনি বেসামরিক ও নিরস্ত্র মানুষকে নিপীড়ন করেছেন, তাঁদের নির্যাতন করে হত্যা করেছেন, নিরীহ মানুষদের গুম করেছেন এবং মানুষের সম্পদে বাধাহীন লুটতরাজ চালিয়েছেন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণে তিনি এসব অপরাধ করেছেন পরিকল্পিতভাবে তাঁর প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য। ট্রাইব্যুনাল যে এ জন্য তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন, এতে হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণই থাকতে পারে না।
জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলাটিরও আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। আপিল বিভাগ তাঁকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এর পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি।
No comments