আওয়ামী লীগের ভেতরে কোন্দল বাড়ছে কেন
রাজধানীর
কাছে গাজীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন যুবলীগের এক
অনুষ্ঠান চলাকালে ওই দলের একজন নেতা খুন হওয়ার এক দিন পর তার সমর্থকরা
শনিবার বিক্ষোভ করেছে। অভিযোগ উঠেছে যে যুবলীগের অন্তঃকলহের কারণে তিনি খুন
হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে
বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের সংঘাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক
দিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় দলটির নেতাকর্মীরা কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে
পড়েছে। তবে দলটির একজন নেতা বলছেন, নতুন করে যারা আওয়ামী লীগে যোগ
দিচ্ছেন, তারাই এই কোন্দল-সহিংসতার জন্য দায়ী। সরকারের একজন মন্ত্রীর
উপস্থিতিতে শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের পরপর গাজীপুরে
প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন যুবলীগের নেতা রফিকুল ইসলাম। সাম্প্রতিক সময়ে
দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ধরনের
সংঘাত সহিংসতার বেশ কিছু খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন
সৃষ্টি করেছে মাগুরায় ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের মধ্যকার সংঘর্ষে একজন
অন্তঃসত্ত্বা নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি। কিন্তু হঠাৎ করে এসব ঘটনা
বাড়ছে কেন ? বিবিসি বাংলোর রাকিব হাসনাতের এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক
বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তার
ধারণা অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে মাঠপর্যায়ে দলটির নেতাকর্মীরা
কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে। আর দলের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে যথাযথ
পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন, কোন্দল-দ্বন্দ্ব-সংঘাত হচ্ছে সামাজিক
নানা কারণে। আর এ জন্য তিনি দায়ী করেন আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নতুন
নেতাকর্মীদের। এর সঙ্গে অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার কোনো সম্পর্ক নেই বলে
মন্তব করেন তিনি। মাগুরায় একজন নিহত ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর গুলিবিদ্ধ
হওয়ার পর ওই মামলার অভিযুক্ত স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক একজন নেতা এবং
ঢাকার হাজারীবাগে একটি কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের
একজন নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত
হয়েছেন। এর আগে পনের আগস্টেই কুষ্টিয়ায় শোক দিবসের কর্মসূচি শেষে
আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আরো একজন। ওই ঘটনার পর স্থানীয়
প্রশাসন সেখানকার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ১০টি অস্ত্রের লাইসেন্স
বাতিল করে। পরে এ মামলার প্রধান আসামিও এখন নিখোঁজ বলে দাবি করেছে তার
পরিবার। বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজনের নিহত হওয়ার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে সৈয়দ
মনজুরুল ইসলাম বলছেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় না এনে ভিন্ন
পন্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও খুব একটা ভালো ফল আনবে না। তিনি
বলেন, দলের অভ্যন্তরে সমন্বয় ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি নিশ্চিত করতে না
পারলে সেটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মাহবুব উল আলম
হানিফ বলছেন, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দলের প্রতিটি স্তরেই নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে যে যারা দলে এলে কোন্দল-সংঘাত বাড়তে পারে, এমন কাউকে দলে
নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। হানিফ বলেন, এরপরেও কেউ কোনো নেতিবাচক
ঘটনা ঘটালে দল বা সরকার তাকে ছেড়ে দেবে না।- বিবিসি।
No comments