সাদাদের সঙ্গে কথা বলতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন নীতিনির্ধারকরা
জাতীয়
স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে দর-কষাকষির জন্য বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের
‘মানসিক দারিদ্র্য’ থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক
প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তিনি বলেছেন, এখনো সাদাদের সঙ্গে কথা
বলার সময় নীতিনির্ধারকরা মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েন। শনিবার বিকালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক অনুষ্ঠানে খায়রুল হক এ কথা বলেন। সেখানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আবুল বারকাত রচিত
‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির
বক্তব্য দেন তিনি। খায়রুল হক বলেন, “আমরা মানসিকভাবে দারিদ্র্যের মধ্যে
আছি। আমাদের মানসকাঠামোয় যে দারিদ্র্য আছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা
এখনো সাদাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সোজা হয়ে কথা বলতে পারি না, মানসিকভাবে
যেন কিছুটা ভেঙে পড়ি।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের ওপর গুরুত্ব
দিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, “১৯৭৩ সালে যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের
কোষাগার একেবারে খালি তখনো বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে
বলতে পেরেছিলেন, তোমরা যদি শর্ত দাও যে ‘পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের
জন্য যে বৈদেশিক সাহায্য খরচ হয়েছিল, তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে’, তাহলে আমি
বলব, তোমাদের কোনো সাহায্যই আমরা নেব না।” খায়রুল হক বলেন, “আমরা কারও ওপর
প্রভুত্ব করতে চাই না। আমরা কাউকে আমাদের ওপর প্রভুত্ব করতে দেব না। যদি
আপনার হাঁটু কাঁপে তাহলে আপনি ৬ ফুট/সাড়ে ৬ ফুট মানুষের সামনে দাঁড়াবেন
কীভাবে?” নেপোলিয়ান বোনাপার্টের শৈর্যের কথা উল্লেখ করে খায়রুল হক বলেন,
“নেপোলিয়ান বোনাপার্ট মাত্র ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ছিলেন। কিন্তু এই
মানুষটিই প্রায় সারা পৃথিবী দখল করে ফেলেছিলেন। তাই শারীরিক শক্তিই নয়,
মানসিক শক্তিই আসল শক্তি। এ ব্যাপারে বাঙালিদের খেয়াল রাখতে হবে।” কয়েক বছর
আগে শ্রীলঙ্কা সফরে এক ফরাসি অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে
ধরে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, “তিনি আমাকে বারবার একটা কথাই বলেছিলেন,
‘তোমাদের যেমন টাকার প্রয়োজন, সাদাদের তেমন তোমাদের তাদের অতিরিক্ত
টাকাগুলো দেয়া প্রয়োজন।’ আমাদের নীতি-নির্ধারকদেরও এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে
হবে।” বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন,
“বঙ্গবন্ধুর ছিল সাগরের মতো বিশাল হৃদয়। কত বড় মাপের মানুষ উনি ছিলেন তা তো
আমি বলতে পারব না। সেই চেষ্টাও আমি করব না।” প্রকাশনা অনুষ্ঠান উদযাপন
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ
অতিথি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর
জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। বইয়ের ওপর আলোচনা
করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, জাতীয়
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও ডাকসুর সাবেক ভিপি
অধ্যাপক মাহফুজা খান।
No comments