‘সুসংহত’ সম্পর্ক চায় চীন
বাংলাদেশ
ও চীনের দীর্ঘদিনের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে বলে
আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা সফররত দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং। ঢাকায়
একাধিক অনুষ্ঠান ও আলোচনায় গতকাল তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রোববার
তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসা চীনের ওই প্রভাবশালী নারী রাজনীতিক গতকাল দিনের
শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে
বক্তৃতা করেন। এরপর রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরে একটি প্রদর্শনীর
উদ্বোধন করেন। দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়। বিকালে প্রেসিডেন্ট আবদুল
হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, সফরের প্রথমদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার
বৈঠক হয়। গণবভনে দুই নেতার ঘণ্টাব্যাপী প্রাণবন্ত আলোচনায় ঢাকা-বেইজিংয়ের
মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহয়োগিতায় নতুন আরও ৬টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়।
কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সর্ম্পক ‘সুসংহত’ করার তাগিদ: এদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বক্তৃতা করেন সফররত চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়েনদং। এ সময় কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুসংহত করার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরনো। উভয় দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিল্প, বিজ্ঞান, ক্রীড়া, সংবাদ মাধ্যম, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশ উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। সহযোগিতার ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর করা উচিত বলেও মত দেন তিনি। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ এর মাধ্যমে পূর্বের রেশম পথ পুনরায় কার্যকর করে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উন্নয়নকে বেগবান করতে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। চীনা সরকার এখন থেকে প্রতি বছর ১০০ বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা বৃত্তি দেবে। এছাড়া, এ বছর ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে চীনের কনফুসিয়াস সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ক্যাম্পে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে ভিসি বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে হাজার বছরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তাই উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক: জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদংয়ের বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, সোমবার দুপুরে সংসদ ভবনে বৈঠকটি হয়েছে। যেখানে চীনা রাজনীতিক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক ধরনের সফল নীতিমালা গ্রহণ করেছে। চীনও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে উপকৃত হতে পারে। এ সময় স্পিকার বাংলাদেশের সমপ্রতিক বিভিন্ন সাফল্য বিশেষ করে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, জেন্ডার সমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি পোশাক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, এ খাতে নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই সরকার তাদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান, আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করে চলেছে। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাণিজ্যসহ সকল প্রকার বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের অব্যাহত সহযোগিতারও আশ্বাস প্রদান করেন। বলেন, চীন শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন সেক্টরে সহায়তা প্রদান করে চলেছে। ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। স্পিকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহায়তার জন্য দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে চীনের শিক্ষামন্ত্রী জুয়ান গুইরেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী লিউ ঝেনমিং, সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-মন্ত্রী ডিং উই, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং উপস্থিত ছিলেন।
চীনের সঙ্গে নতুন ৬ চুক্তি, আরও সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী: দুটি সহযোগিতা চুক্তি, ৩ সমঝোতা স্মারক, এবং শিক্ষা, গণমাধ্যম ও বাণিজ্য খাত সংক্রান্ত একটি পৃথক বিনিময় নোটসহ ঢাকা-বেইজিং বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদারে নতুন ৬টি চুক্তি সই হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের সফররত উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং-এর মধ্যে বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে চুক্তিগুলো সই হয়। দু’দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় ও চীনের প্রেস ও পাবলিকেশন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মধ্যে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত পৃথক এমওইউ’তে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সচিবরা সই করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির (বিএফএসইউ) মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, ফ্যাকাল্টি, স্কলার্স ও প্রশাসনিক স্টাফ বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় আরেকটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও চীনের উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (ডব্লিউটিইউ) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চীনের ডব্লিউটিইউ’র মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইন সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের লক্ষ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওদিকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কন্টেইনার পরিদর্শন সরঞ্জাম প্রকল্প সংক্রান্ত প্রথম বিনিময় নোটও সই হয়েছে। চুক্তি সইয়ের আগে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোতে চীনের আরও সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে শেখ হাসিনা জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে তাঁদের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের (সিইআইজেড) জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমির বরাদ্দ করেছে। একই এলাকায় চীনের একটি বেসরকারি কোম্পানির ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও ৫০৪ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ কৃষি খাতে যৌথ গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে তরুণ বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানানোসহ বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। চীনের ওই রাজনীতিক বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ লক্ষ্য অর্জনে চীন সকল প্রকার সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ ও চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। এর মধ্যদিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলেও আশা করেন সফরক চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনাকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন উপ-প্রধানমন্ত্রী। গণ ভবনের আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, চীনের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান গুইরেন, উপ-মন্ত্রী টং গেং, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সর্ম্পক ‘সুসংহত’ করার তাগিদ: এদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য বক্তৃতা করেন সফররত চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়েনদং। এ সময় কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য পূরণে ঢাকা-বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুসংহত করার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক হাজার বছরের পুরনো। উভয় দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিল্প, বিজ্ঞান, ক্রীড়া, সংবাদ মাধ্যম, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশ উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে। সহযোগিতার ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর করা উচিত বলেও মত দেন তিনি। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ এর মাধ্যমে পূর্বের রেশম পথ পুনরায় কার্যকর করে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উন্নয়নকে বেগবান করতে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। চীনা সরকার এখন থেকে প্রতি বছর ১০০ বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা বৃত্তি দেবে। এছাড়া, এ বছর ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে চীনের কনফুসিয়াস সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ক্যাম্পে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে ভিসি বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে হাজার বছরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তাই উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক: জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদংয়ের বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, সোমবার দুপুরে সংসদ ভবনে বৈঠকটি হয়েছে। যেখানে চীনা রাজনীতিক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক ধরনের সফল নীতিমালা গ্রহণ করেছে। চীনও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে উপকৃত হতে পারে। এ সময় স্পিকার বাংলাদেশের সমপ্রতিক বিভিন্ন সাফল্য বিশেষ করে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, জেন্ডার সমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি পোশাক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, এ খাতে নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই সরকার তাদের জন্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান, আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করে চলেছে। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি বাণিজ্যসহ সকল প্রকার বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের অব্যাহত সহযোগিতারও আশ্বাস প্রদান করেন। বলেন, চীন শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন সেক্টরে সহায়তা প্রদান করে চলেছে। ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। স্পিকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের সহায়তার জন্য দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে চীনের শিক্ষামন্ত্রী জুয়ান গুইরেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী লিউ ঝেনমিং, সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-মন্ত্রী ডিং উই, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং উপস্থিত ছিলেন।
চীনের সঙ্গে নতুন ৬ চুক্তি, আরও সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী: দুটি সহযোগিতা চুক্তি, ৩ সমঝোতা স্মারক, এবং শিক্ষা, গণমাধ্যম ও বাণিজ্য খাত সংক্রান্ত একটি পৃথক বিনিময় নোটসহ ঢাকা-বেইজিং বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদারে নতুন ৬টি চুক্তি সই হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের সফররত উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং-এর মধ্যে বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে চুক্তিগুলো সই হয়। দু’দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় ও চীনের প্রেস ও পাবলিকেশন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মধ্যে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত পৃথক এমওইউ’তে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট সচিবরা সই করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির (বিএফএসইউ) মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, ফ্যাকাল্টি, স্কলার্স ও প্রশাসনিক স্টাফ বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় আরেকটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও চীনের উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (ডব্লিউটিইউ) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চীনের ডব্লিউটিইউ’র মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইন সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের লক্ষ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওদিকে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কন্টেইনার পরিদর্শন সরঞ্জাম প্রকল্প সংক্রান্ত প্রথম বিনিময় নোটও সই হয়েছে। চুক্তি সইয়ের আগে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোতে চীনের আরও সমর্থন ও সহায়তা কামনা করেছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে শেখ হাসিনা জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে তাঁদের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের (সিইআইজেড) জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমির বরাদ্দ করেছে। একই এলাকায় চীনের একটি বেসরকারি কোম্পানির ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য আরও ৫০৪ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ কৃষি খাতে যৌথ গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ থেকে তরুণ বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রণ জানানোসহ বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। চীনের ওই রাজনীতিক বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ লক্ষ্য অর্জনে চীন সকল প্রকার সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ ও চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে। এর মধ্যদিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলেও আশা করেন সফরক চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনাকে সুবিধাজনক সময়ে চীন সফরে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন উপ-প্রধানমন্ত্রী। গণ ভবনের আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, চীনের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান গুইরেন, উপ-মন্ত্রী টং গেং, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
No comments