খোঁজ নেই ৩১ যুবকের
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে নিখোঁজ হওয়া কয়েকজন |
মানব
পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও বেকার যুবকরা
সাগর পথে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড যাত্রা করছেন। তাদেরকে ভালো
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা নিয়ে গেলেও পরে তাদের জিম্মি করে আদায় করা
হয় লাখ লাখ টাকা। এসব যুবকের বেশির ভাগই এখন নিখোঁজ রয়েছেন। হবিগঞ্জ ও
মাদারীপুরে এমনিভাবে নিখোঁজ হয়েছেন ৩১ যুবক। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে
গণকবর আবিষ্কারের পর এবং সাগরে ভাসমান অভিবাসীদের খবরে ওইসব যুবকের
স্বজনদের মাঝে দেখা দেয় অজানা আতংক। আদরের সন্তানদের খোঁজে পাগলপ্রায়
তাদের মা-বাবা। হবিগঞ্জ থেকে যুগান্তর প্রতিনিধি সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন
জানান, সাগর পথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন হবিগঞ্জের ২৪ যুবক।
দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না তাদের
পরিবারের সদস্যরা। এ অবস্থায় প্রতিটি পরিবারেই এখন শুধু কান্নার রোল।
পুত্রশোকে পাথর চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের নিখোঁজ জসিমের বাবা আবদুল হাই জানান, তার ছেলেকে জিম্মি করে স্থানীয় টেকেরঘাট গ্রামের দালাল বাচ্চু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ইতিমধ্যেই তারা ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। তিনি সর্বস্ব বিক্রি করে এ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সন্তানের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।
আরেক নিখোঁজ যুবক আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিমভাগের তিনকোশা মহল্লার মৃত নিহার মনির চৌধুরীর ছেলে নোমান চৌধুরী। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবার মৃত্যুর পর তিনি স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করে পরিবার চালাতেন। সম্প্রতি দালালদের মাধ্যমে কম খরচে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব পেয়ে রাজি হয়ে যান। পাড়ি জমান নৌপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তার পরিবার জানে না। একদিনও তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়নি। এ কথা জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমভাগের গোপী চন্দ্র চন্দ ও নোমান ভাই মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ৫৩ দিন আগে রওনা হন। দালালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরেক নিখোঁজ বানিয়াচং উপজেলা সদরের শরীফ উদ্দিন রোডের রশিদ আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জুসেদ (২৭)। শোকে পাথর তার বাবা রশিদ আহমদ জানান, মানব পাচারকারী দলের খপ্পরে পড়ে জুসেদ। তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে কাউকে না জানিয়ে ১ এপ্রিল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। ৭ মে জুসেদের বাবাকে জানানো হয় তার ছেলে মালয়েশিয়ার বর্ডারে আছে। ০০৬৬৮০৫৩৯১৪৮৯৩ ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে জুসেদকে পাবেন। সে অনুযায়ী তিনি ওই নাম্বারে ফোন করে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। তখন জুসেদ জানায়, তারা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বর্ডারে অমানবিক কষ্টে জাহাজে আছে। শিবপাশা ইউপির রহমত আলীর ছেলে মেম্বার আবদুল আজিজ ও আলী আকবরের ছেলে মকবুল আলীর মাধ্যমে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানান তিনি। আজিজ ও মকবুলের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও ছেলেকে উদ্ধারের কোনো কূলকিনারা না পেয়ে তারা এখন পীর ফকিরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
চুনারুঘাটের দালাল হিরাই ও বাচ্চু মিয়ার মা রহিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কিভাবে তারা বিদেশ গেছে সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। তাদের সঙ্গে তার কখনোই দেখা হয় না।
বানিয়াচংয়ের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে জানান, তার এলাকা ও আজমিরীগঞ্জে শিবপাশার ইউপি মেম্বার আবদুল আজিজ দালাল চক্রের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব দালাল চক্রের সদস্যদের বিচার দাবি করেন তিনি। গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ যুবকদের দেশে ফিরিয়ে আনা, তাদের টাকা উদ্ধার ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি উদ্যোগ নেবেন।
চুনারুঘাট থানার ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আজ (রোববার) উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেছেন, তার ইউনিয়নে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে তাদের কি অবস্থা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, সভায় আমি বলেছি নির্দিষ্ট করে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ১৫ মার্চ মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের ৭ যুবককে ঢাকা নিয়ে যায় একই উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের পাখুল্যা গ্রামের মানব পাচারকারী দালাল সাদেক বয়াতী ও এহছাক মল্লিক। এরপর থেকেই ওই ৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল।
নিখোঁজরা হলেন- তেলিগ্রামের বান্দু মাতুব্বরের ছেলে হান্নান মাতুব্বর (২৮), সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে জহিরুল মাতুব্বর (২০), আবেদ আলীর ছেলে রাসেল মোল্যা (২১), মতি শেখের ছেলে হানিফ শেখ (১৮), জাহাঙ্গীর খাঁর ছেলে ওবায়দুর খাঁ (১৬), তৌয়ব আলী খাঁয়ের ছেলে অহিদুল খাঁ (১৮), কাজল খাঁর ছেলে বিনাদ খাঁ (২৪)।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্ বলেন, ‘নিখোঁজদের পরিবারের অভিযোগ পেলে তাদের ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পুত্রশোকে পাথর চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় গ্রামের নিখোঁজ জসিমের বাবা আবদুল হাই জানান, তার ছেলেকে জিম্মি করে স্থানীয় টেকেরঘাট গ্রামের দালাল বাচ্চু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। ইতিমধ্যেই তারা ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। তিনি সর্বস্ব বিক্রি করে এ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সন্তানের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তিনি।
আরেক নিখোঁজ যুবক আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের পশ্চিমভাগের তিনকোশা মহল্লার মৃত নিহার মনির চৌধুরীর ছেলে নোমান চৌধুরী। ৬ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবার মৃত্যুর পর তিনি স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করে পরিবার চালাতেন। সম্প্রতি দালালদের মাধ্যমে কম খরচে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব পেয়ে রাজি হয়ে যান। পাড়ি জমান নৌপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে। কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা তার পরিবার জানে না। একদিনও তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ হয়নি। এ কথা জানিয়েছেন তার ছোট ভাই উমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমভাগের গোপী চন্দ্র চন্দ ও নোমান ভাই মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ৫৩ দিন আগে রওনা হন। দালালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরেক নিখোঁজ বানিয়াচং উপজেলা সদরের শরীফ উদ্দিন রোডের রশিদ আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জুসেদ (২৭)। শোকে পাথর তার বাবা রশিদ আহমদ জানান, মানব পাচারকারী দলের খপ্পরে পড়ে জুসেদ। তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে কাউকে না জানিয়ে ১ এপ্রিল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। ৭ মে জুসেদের বাবাকে জানানো হয় তার ছেলে মালয়েশিয়ার বর্ডারে আছে। ০০৬৬৮০৫৩৯১৪৮৯৩ ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে জুসেদকে পাবেন। সে অনুযায়ী তিনি ওই নাম্বারে ফোন করে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। তখন জুসেদ জানায়, তারা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বর্ডারে অমানবিক কষ্টে জাহাজে আছে। শিবপাশা ইউপির রহমত আলীর ছেলে মেম্বার আবদুল আজিজ ও আলী আকবরের ছেলে মকবুল আলীর মাধ্যমে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানান তিনি। আজিজ ও মকবুলের কাছে বারবার ধরনা দিয়েও ছেলেকে উদ্ধারের কোনো কূলকিনারা না পেয়ে তারা এখন পীর ফকিরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
চুনারুঘাটের দালাল হিরাই ও বাচ্চু মিয়ার মা রহিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কিভাবে তারা বিদেশ গেছে সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। তাদের সঙ্গে তার কখনোই দেখা হয় না।
বানিয়াচংয়ের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে জানান, তার এলাকা ও আজমিরীগঞ্জে শিবপাশার ইউপি মেম্বার আবদুল আজিজ দালাল চক্রের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব দালাল চক্রের সদস্যদের বিচার দাবি করেন তিনি। গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ যুবকদের দেশে ফিরিয়ে আনা, তাদের টাকা উদ্ধার ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি উদ্যোগ নেবেন।
চুনারুঘাট থানার ওসি অমূল্য কুমার চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘আজ (রোববার) উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা তাজুল ইসলাম বলেছেন, তার ইউনিয়নে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে তাদের কি অবস্থা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, সভায় আমি বলেছি নির্দিষ্ট করে যদি কেউ অভিযোগ দেয় তবে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ১৫ মার্চ মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের ৭ যুবককে ঢাকা নিয়ে যায় একই উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের পাখুল্যা গ্রামের মানব পাচারকারী দালাল সাদেক বয়াতী ও এহছাক মল্লিক। এরপর থেকেই ওই ৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল।
নিখোঁজরা হলেন- তেলিগ্রামের বান্দু মাতুব্বরের ছেলে হান্নান মাতুব্বর (২৮), সোহরাব মাতুব্বরের ছেলে জহিরুল মাতুব্বর (২০), আবেদ আলীর ছেলে রাসেল মোল্যা (২১), মতি শেখের ছেলে হানিফ শেখ (১৮), জাহাঙ্গীর খাঁর ছেলে ওবায়দুর খাঁ (১৬), তৌয়ব আলী খাঁয়ের ছেলে অহিদুল খাঁ (১৮), কাজল খাঁর ছেলে বিনাদ খাঁ (২৪)।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ্ বলেন, ‘নিখোঁজদের পরিবারের অভিযোগ পেলে তাদের ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
No comments