সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায়
থাইল্যান্ডে সামরিক শাসন কায়েমের পর এক বছর বেশ শান্তভাবেই কেটে গেল। এই এক বছরে সামরিক আইন জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী, সংবিধান স্থগিত করেছে এবং গোটা দেশটির নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেছে, আর এসবে জনগণের আপত্তির বহিঃপ্রকাশ খুব একটা লক্ষ্যণীয় নয়। থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ২০১৪ সালের ২২ মে দেশটির সেনাবাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণ করে।
একটি প্রস্তাবিত রাজক্ষমাবিষয়ক বিলের বিরোধিতা করে তৎকালীন থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার পদত্যাগ চেয়েছিল সরকারবিরোধীরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারবিরোধীদের শক্তির কিছুটা নমুনা পাওয়া গিয়েছিল এবং এরপরই দ্রুত ক্ষমতাচ্যুত হন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগে একটি সাংবিধানিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন এবং তার প্রধানমন্ত্রিত্ব স্থগিত করা হয়। অবশ্য ওই বছরের ৭ মে-তেই আবার ইংলাককে নির্দোষ হিসেবে মামলা খারিজও করে দেয়া হয়। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান প্রায়ুথ চ্যান-ওচা দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠেন এবং বিরোধীদের চুপ করিয়ে দেন। গণহারে গ্রেফতার, হুমকি ও হয়রানির কারণে অধিকাংশ সমালোচক নিশ্চুপ হয়ে যান। ছাত্রকর্মী থ্যান রিত্তিফ্যান আল জাজিরাকে বলেন, ‘ওরা আমাদের বাড়িঘর তছনছ করে দিয়েছে, দরজায় লাথি মেরেছে, আমাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। অভ্যুত্থানের মাত্র এক বছর হয়েছে? মনে হচ্ছে এরই মধ্যে চার বছর পেরিয়ে গেছে।’ রেডশার্ট নেতা নাত্তায়ুত সায়কুয়াব বলেন, ‘সবাই নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। আমি আশা করি সেনাবাহিনী তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’ শেষবার এক বছর আগে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা উঠেছিল। প্রতিবাদে মুখর সেই বন্ধুদের আজ কারাগারে দেখা ভীষণ কষ্টকর, জানান থ্যান। যারা কারাগারে নেই, সেই সাবেক বিক্ষোভকারীদের আজও গ্রেফতারের আশংকায় নিয়মিত জায়গা বদলাতে হয় বলেও জানান তিনি। গত বছরের ২২ মে টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনী বলেন, ‘দেশকে সঠিক পথে সহজে পরিচালিত করতে ২০০৭ সালের সংবিধান স্থগিত করা হচ্ছে। তবে এই স্থগিতাদেশ বহির্ভূত থাকছে রাজতন্ত্রের অধ্যায়টি।’ ১৯৩২ সাল থেকে থাইল্যান্ডে সাংবিধানিকভাবে রাজতন্ত্র বহাল রয়েছে।
অভ্যুত্থানের পরপর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে রাজধানী ব্যাংককে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিরোধীরা। অভ্যুত্থানের মাত্র দু’দিনেই দেশটির কয়েকশ’ শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরোধিতার অপরাধে গ্রেফতার করে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডার (এনসিপিও)। গ্রেফতার থেকে বাঁচতে পালিয়ে যান আরও অনেকে। থাই আইনি অধিকার কেন্দ্র আই-ল’র তথ্য অনুযায়ী- সাড়ে সাতশ’র বেশি মানুষ গত এক বছরে আটক হয়ে সেনাশিবিরে রয়েছেন। পাঁচজনের বেশি মানুষের একসঙ্গে হওয়ার ওপর সেনাবাহিনী নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় অন্তত ১৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের উপস্থিতির বিষয়ে জানেন না তাদের স্বজনরা। আটককৃতদের স্বজনদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে তাদের অনুসরণ করেন গোয়েন্দারা। গত বুধবার এফআইডিএইচ জানিয়েছে, এনসিপিও ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও অন্তত ৪৭ জনকে বিতর্কিত একটি আইনে আটক রাখা হয়েছে যা নজিরবিহীন। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাই হোক না কেন, সামরিক আইনের অধীনেও তারা ন্যূনতম মৌলিক কিছু অধিকার আশা করতে পারেন। সেনাবাহিনী একজন আটককৃতকে অভিযোগ ছাড়া সর্বোচ্চ ১০ দিন পর্যন্ত আটক রাখতে পারে, যা ক্ষমতার প্রতি ভীত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে বলে জানান আই-ল’র নির্বাহী পরিচালক জন উংফাকর্ন। থাই স্বৈরশাসক প্রায়ুথ যেখানে যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন, সেখানে খুব শিগগিরই এই দিন দেখার ব্যাপারে আশাবাদী নন অনেকেই। অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য ১৫ মাস সময় চাওয়া হয়েছিল, যা শেষ হবে আগামী জুন মাসে। এরই মধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে অক্টোবরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
No comments