আদালতে খালেদা
বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ই জুন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
রাজধানীর বকশীবাজারে কারা-অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত (অস্থায়ী)
বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের
প্রেক্ষিতে এ দিন নির্ধারণ করেন। তবে, মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের
জন্য করা পৃথক আরও একটি আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। আসামিপক্ষের
আইনজীবীরা জানিয়েছেন তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
গতকাল সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালিন সময়ে আদালতে হাজির ছিলেন খালেদা জিয়া। মামলার
অন্য আসামি ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না, মনিরুল ইসলাম কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
এদিকে বকশীবাজারে কারা-অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ
জজ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকে পুরো এলাকায়
নেয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর কড়া নিরাপত্তায় নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে আদালতে হাজির হন বেগম খালেদা জিয়া। হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পরিহিত খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করে কাঠগড়ার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। একপর্যায়ে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়ার বসার জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেন। আদালত অনুমতি দিলে খালেদা জিয়া তার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসেন। আদালতের কার্যক্রম চলাকালিন পুরোটা সময় তিনি কারও সঙ্গে কোন কথা বলেননি। ১২টা ৩৫ মিনিটে আবারও কড়া নিরাপত্তায় আদালত ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। গত ৫ই মে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তিনি আংশিক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। গতকাল জবানবন্দি শেষে তাকে জেরা করার জন্য আদালত নির্দেশ দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই মর্মে আবেদন করেন তারা। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ১৮ই জুন জেরা করার দিন ধার্য করেন। অন্য একটি আবেদনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষীর পূর্বের সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত হয়নি এমন দাবি করে সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা জানান তারা এই নামঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এর আগে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে তা বিধিসম্মত হয়নি। এ ধরনের সাক্ষ্যগ্রহণ আইনানুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। শুনানির একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে সব বদল হয়ে যাবে। এই মামলাও বদলে যাবে। দীর্ঘ দিন ধরেই এ রকম দেখছি। শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আইনানুযায়ী মামলার বাদী যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা বৈধ। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের করা ‘এক্সপাঞ্জ’ শব্দটিতে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোথাও এক্সপাঞ্জ বলে কোন শব্দ নেই। এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলতে কোন বাধা নেই। একপর্যায়ে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, যে আদেশ (সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর) আপনি (আদালত) দিয়েছেন তাতে আমরা বিক্ষুব্ধ। আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব। বিচারক আবু আহমেদ জমাদার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে জানিয়ে বলেন, উচ্চ আদালতে যাওয়া না যাওয়া ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। বার কাউন্সিলের নির্বাচনের জন্য আপনারা ব্যস্ত ছিলেন সে বিবেচনায় সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করা হলো। গতকাল মামলার সাক্ষী হারুনুর রশিদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আদ্যপান্ত জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২ ধারা এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ সংগঠিত করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে উক্ত অবৈধ অর্থের লেনদেন করেন। জবানবন্দির একপর্যায়ে সাক্ষী লিখিত কাগজ দেখে জবানবন্দি দিচ্ছেন এ রকম অভিযোগ তোলেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা এভাবে সাক্ষ্য দেয়া অবৈধ বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, এভাবে জবানবন্দি দেয়া বিধিসম্মত নয়। একজন তদন্ত কর্মকর্তাই শুধু এভাবে জবানবন্দি দিতে পারেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে আইনবহির্ভূত বিচারকাজ হচ্ছে। এভাবে কাগজে লেখা দেখে সাক্ষ্য দেয়া আইনসম্মত নয়। এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে উভয়পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিত শান্ত হলে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ আইনসম্মত হয়নি মর্মে করা আমাদের আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। তারপরও খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন। আমরা আদালতকে বিচারে সহযোগিতা করতে চাই। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারা দুটি আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইনানুগ পদ্ধতিতেই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এদিকে গতকাল বকশীবাজার কারা-অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ভোর থেকেই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। সকাল থেকেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই এলাকায় প্রবেশের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এলাকার বাসিন্দাসহ এই এলাকায় চলাচলকারী পথচারিরা দুর্ভোগের শিকার হন।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সমপরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তখনকার সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। খালেদা জিয়া ছাড়াও এই মামলার আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব ও বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় ৬ জনের নামে একটি মামলা করেন দুদকের কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ। মামলার আসামিরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে ও একই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শারফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। গত বছরের ১৯শে মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের তখনকার বিচারক বাসুদেব রায়।
সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর কড়া নিরাপত্তায় নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত হয়ে আদালতে হাজির হন বেগম খালেদা জিয়া। হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পরিহিত খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করে কাঠগড়ার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। একপর্যায়ে তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার খালেদা জিয়ার বসার জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেন। আদালত অনুমতি দিলে খালেদা জিয়া তার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসেন। আদালতের কার্যক্রম চলাকালিন পুরোটা সময় তিনি কারও সঙ্গে কোন কথা বলেননি। ১২টা ৩৫ মিনিটে আবারও কড়া নিরাপত্তায় আদালত ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদ তার জবানবন্দি শুরু করেন। গত ৫ই মে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তিনি আংশিক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। গতকাল জবানবন্দি শেষে তাকে জেরা করার জন্য আদালত নির্দেশ দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই মর্মে আবেদন করেন তারা। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ১৮ই জুন জেরা করার দিন ধার্য করেন। অন্য একটি আবেদনে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষীর পূর্বের সাক্ষ্যগ্রহণ বিধিসম্মত হয়নি এমন দাবি করে সাক্ষ্য বাতিলের আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা জানান তারা এই নামঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এর আগে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে তা বিধিসম্মত হয়নি। এ ধরনের সাক্ষ্যগ্রহণ আইনানুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। শুনানির একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, হাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে সব বদল হয়ে যাবে। এই মামলাও বদলে যাবে। দীর্ঘ দিন ধরেই এ রকম দেখছি। শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আইনানুযায়ী মামলার বাদী যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা বৈধ। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের করা ‘এক্সপাঞ্জ’ শব্দটিতে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোথাও এক্সপাঞ্জ বলে কোন শব্দ নেই। এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলতে কোন বাধা নেই। একপর্যায়ে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, যে আদেশ (সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর) আপনি (আদালত) দিয়েছেন তাতে আমরা বিক্ষুব্ধ। আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে যাব। বিচারক আবু আহমেদ জমাদার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে জানিয়ে বলেন, উচ্চ আদালতে যাওয়া না যাওয়া ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার। বার কাউন্সিলের নির্বাচনের জন্য আপনারা ব্যস্ত ছিলেন সে বিবেচনায় সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি করা হলো। গতকাল মামলার সাক্ষী হারুনুর রশিদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আদ্যপান্ত জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২ ধারা এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ সংগঠিত করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থেকে উক্ত অবৈধ অর্থের লেনদেন করেন। জবানবন্দির একপর্যায়ে সাক্ষী লিখিত কাগজ দেখে জবানবন্দি দিচ্ছেন এ রকম অভিযোগ তোলেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা এভাবে সাক্ষ্য দেয়া অবৈধ বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, এভাবে জবানবন্দি দেয়া বিধিসম্মত নয়। একজন তদন্ত কর্মকর্তাই শুধু এভাবে জবানবন্দি দিতে পারেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে আইনবহির্ভূত বিচারকাজ হচ্ছে। এভাবে কাগজে লেখা দেখে সাক্ষ্য দেয়া আইনসম্মত নয়। এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে উভয়পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিত শান্ত হলে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ আইনসম্মত হয়নি মর্মে করা আমাদের আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। তারপরও খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন। আমরা আদালতকে বিচারে সহযোগিতা করতে চাই। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারা দুটি আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিলের আবেদন আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইনানুগ পদ্ধতিতেই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এদিকে গতকাল বকশীবাজার কারা-অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ভোর থেকেই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। সকাল থেকেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই এলাকায় প্রবেশের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এলাকার বাসিন্দাসহ এই এলাকায় চলাচলকারী পথচারিরা দুর্ভোগের শিকার হন।
প্রসঙ্গত, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সমপরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তখনকার সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। খালেদা জিয়া ছাড়াও এই মামলার আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব ও বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই রমনা থানায় ৬ জনের নামে একটি মামলা করেন দুদকের কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ। মামলার আসামিরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে ও একই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শারফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। গত বছরের ১৯শে মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের তখনকার বিচারক বাসুদেব রায়।
No comments