২০ বছর পর দেখা মা-মেয়ের
প্রতিবারের
মতো এবারও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই বাংলায় অবস্থানরত মানুষ আপনজনদের
সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। প্রতিবেশী ভারতের দেয়া ৭ ফুটের কাঁটাতারের বেড়া
তাদের দমাতে পারেনি। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় কেউবা আনন্দে, কেউবা দুঃখে
কেঁদেছে। ২০ বছর পর দেখা হলো মা- মেয়ের এমন ঘটনাও ঘটেছে। ভারতের জলপাইগুড়ি
জেলার ভক্তিনগর থানার আশিঘর থেকে মাকে দেখতে আসেন ফুলমতি (৪০)। তার মা সরলা
রানী (৮৫) থাকেন সদর উপজেলার উৎকুড়া বানিয়াপাড়া গ্রামে। সরলা রানী জানান,
২০ বছর আগে মেয়ে ফুলমতিকে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর জামাই মেয়েকে নিয়ে ভারতে
চলে যান। এরপর থেকে আর তাদের দেখা হয়নি। ২০ বছর পর মা-মেয়েতে দেখা হওয়ায়
চোখের জলে তাদের বুক ভাসে। এমনি অনেক ভুক্তভোগী আছেন। যেমন ভারতের
জলপাইগুড়ি জেলার বাহাদুর জিপি এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী নেহার বেগম ও
ফজলুর রহমান এসেছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। দেখা
হয় ৪০ বছর পর। নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার ছিট রাজীব দুন্দিয়াপাড়া
থেকে পঞ্চগড়ে এসেছেন বিনোদ চন্দ্র রায় (৮২)। ভারতে অবস্থানরত বড়বোন ময়না
রানী রায়ের (৯৫) সঙ্গে দেখা হয় ৬০ বছর পর। বিনোদ চন্দ্রের বোন ময়না রানীর
সঙ্গে দেখা হয় ৫ যুগ পর। ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার কোতোয়ালি থানার কনপাখুরীর
তফাজ উদ্দিন (৬৫)। সঙ্গে বোদাপাড়া গ্রামের বড়বোন হামিদা খাতুনের দেখা হয় ১৮
বছর পর। অমরখানা ও বোদাপাড়া গ্রাম এবং ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ
থানার খালপাড়া, ভিমভিটা, গোমস্তাবাড়ী ও বড়ুয়াপাড়া গ্রামের কাঁটাতারের বেড়ায়
দুই পাশ বিভক্ত। সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর
সাব-পিলার পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডজুড়ে উভয়
দেশের লাখো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারকাঁটার বেড়ায়। বেলা আড়াইটার দিকে
বিজিবি-বিএসএফের বাঁশির ফুতে শেষ হয় মিলনমেলা। উভয় দেশের নাগরিকরা ফিরে যান
তাদের নিজ বাড়িতে। বেঁচে থাকলে দেখা হবে এক বছর পর এ দিনটিতে। স্থানীয়রা
জানান, পাক-ভারত বিভক্তির আগে বর্তমান পঞ্চগড় জেলা ছিল ভারতের জলপাইগুড়ি
জেলার অধীন। ’৪৭-এ পাক-ভারত বিভক্তির পর সীমান্তবর্তী এ দেশের অনেকের
আত্মীয়স্বজন ভারতীয় অংশে থেকে যায়। ’৭০-এর দশকের উভয় দেশের লোকজন প্রায়
বিনা বাধায় যাতায়াত করতে পারলেও ’৮০-এর দশকে তা থেমে যায়। এ ছাড়া ভারতীয়
কর্তৃপক্ষ সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় যাতায়াত একেবারে বন্ধ
হয়ে যায়। পরবর্তীকালে অর্থের অভাবে পাসপোর্ট ও ভিসা করতে অসমর্থ হওয়ায়
আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর সে কারণে নববর্ষের এ
দিনটির জন্য অপেক্ষা করে উভয় দেশে বসবাসকারী লোকজন। দেখা-সাক্ষাতের সময়
প্রিয়জন ও আত্মীয়স্বজনের সামর্থ্য অনুযায়ী উপহারসামগ্রী তুলে দেন একে
অপরকে। এ ব্যাপারে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল
মোহাম্মদ আরিফুল হক বলেন, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের সহযোগিতায় অমরখানা
সীমান্তে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে দুই বাংলার নাগরিকদের মিলনমেলা হয়। এবারও
তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুরুতে বিএসএফ রাজি না থাকলেও তাদের দেশের নাগরিকদের
চাপে তারা বেড়ার কাছে আসতে দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পর্যাপ্ত
বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। নির্ধারিত সময়ের পর সবাই যে যার গন্তব্যে চলে
যান।
No comments