চোরাই পথে ইলিশ যাচ্ছে ওপারে by পরিতোষ পাল
রুপালি
ইলিশে ভরা কলকাতা ও আশেপাশের বাজার। নববর্ষের আগের দিনেই বাঙালি হামলে
পড়েছে ইলিশ কিনতে। তবে চাহিদা পদ্মা-মেঘনার ইলিশের। সওয়া কিলো ওজনের ইলিশের
দাম ১২০০ থেকে দেড় হাজার রুপি। তাতেও পরোয়া নেই বাঙালির। নববর্ষের পাতে
ইলিশ চাই-ই। তবে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি তো বন্ধ তাহলে ইলিশ আসছে
কোত্থেকে? জবাব দিলেন বারাসাত বড়বাজারের মাছের আড়তের এক ব্যবসায়ী। তিনিই
জানালেন, সীমান্তের সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই চোরাই পথে আসছে টন টন
ইলিশ। জাটকা ইলিশ নয়। একবারে সওয়া কিলো বা তার বেশি ওজনের সব ইলিশ। এবার
বাংলাদেশে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি বেশি করে। ফলে এপারে চোরাপথ গলে
থার্মোকলের বাক্সে বন্দি হয়ে ইলিশ সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসছে বনগাঁয়। সেখান
থেকে বারাসাতের বড়বাজার হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে কলকাতার বড় বড় বাজারগুলোতে। গত
তিন দিনে বনগাঁ সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বারাসাতে বড়বাজারের আড়তেই এসেছে বেশ
কয়েক টন ইলিশ। পদ্মার ইলিশের চাহিদা যে এপারে প্রবল তা পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী ঢাকা সফরে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আবদার করেছিলেন, ইলিশ
পাঠাতে। সেই আবদার রাখার কোন আশ্বাস বাংলাদেশ সরকার দেয়নি। তবে নিষেধাজ্ঞা
যে কোন চাহিদাকেই আটকাতে পারে না তা বোঝা যাচ্ছে ইলিশের চোরপথে এপারে
প্রবেশ থেকে। সীন্তের শুল্ক অফিসাররাও মেনে নিয়েছেন যে, চোরাপথে প্রতিদিন
ইলিশ আসছে এপারে। উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের সহকারী কমিশনার
এস আর বিষ্ণু জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি বন্ধ।
তবে এদেশে বাংলাদেশের যে ইলিশ মিলছে, তা আশপাশের চোরাপথ দিয়েই ঢুকছে।
বিএসএফ কর্তারাও বিষয়টি জানেন। জানা গেছে, রাতের অন্ধকারে
ঢাকা-খুলনা-বরিশাল থেকে যশোর হয়ে সীমান্তে চলে আসছে ইলিশ। বিভিন্ন এলাকা
দিয়ে যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশায় করে অন্য মাছের আড়ালে ইলিশ পাঠিয়ে দেয়া
হচ্ছে এপারে। চোরাকারবারি এ ব্যাপারে নববর্ষের দুদিন আগে থেকেই বেশ তৎপরতার
সঙ্গে কাজটি করছে। জয়ন্তিপুর, আংরাইল সীমান্তের ফাঁক ফোকর গলে প্রতিদিন টন
টন ইলিশ আসছে এপারে। আর পদ্মা-মেঘনার মাছ পেয়ে এপারের মাছের ব্যবসায়ীরা যে
বেশ খুশি তা বারাসাতের আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেই স্পষ্ট হযেছে। এক
ব্যবসায়ী খুশিতে ডগমগ হয়ে জানালেন, দেড় হাজার রুপিতে বিক্রি হয়ে যাবে এই
মাছ। ভোজন রসিক ইলিশপ্রেমী বাঙালি দামের কোন তোয়াক্কা না করেই কিনে নিচ্ছেন
সেসব ইলিশ। তবে বেচারা মধ্যবিত্ত বাঙালি সেই দামে হাত পোড়াতে খুব একটা
সাহস করছেন না। ইলিশের বাজারে উঁকিঝুকি দিয়েই সরে পরছেন অন্য কিছু কেনার
আশায়।
No comments