নতুন বাদশাহ সালমান
সৌদি
আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর নতুন বাদশাহ হিসেবে
স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তার সৎ ভাই ৭৯ বছর বয়সী সালমান বিন আবদুল আজিজ। বাদশাহ
আবদুল্লাহর সিংহাসনের তৃতীয় উত্তরাধিকারী ছিলেন সালমান। ২০১১ সালের
শেষদিকে ও ২০১২ সালের মাঝামাঝি বড় দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর সালমানই হন
সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী। ২০১২ সালের জুন মাসে ‘ক্রাউন প্রিন্স’ বা
‘পরবর্তী উত্তরাধিকারী’ হিসেবে তার নাম ঘোষণা দেয়া হয়। ২০১১ সালে তিনি
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে দীর্ঘ ৪৮ বছর রিয়াদ
প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশ
সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ হিসেবে সালমান বিন আবদুল আজিজ একই সঙ্গে দেশটির
প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। ১৯৩৫ সালের ৩১শে
ডিসেম্বর প্রিন্সেস হাসা আল সুদাইরির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন বাদশাহ সালমান।
বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার
কারণে বাদশাহর অনেক দায়িত্ব পালন করছেন সালমান। বাদশাহ সালমান সৌদি রাজ
পরিবারের প্রভাবশালী একটি অংশের সদস্য। এ অংশে রয়েছেন প্রয়াত বাদশাহ আবদুল
আজিজ ও তার অন্যতম প্রিয় স্ত্রী প্রিন্সেস হাসা আল সুদাইরির পুত্রসন্তান ও
নাতিরা। সাবেক বাদশাহ ফাহাদ এবং সাবেক দুই ক্রাউন প্রিন্স সুলতান ও নায়েফের
মৃত্যুর পর সালমানই রয়ে যান রাজ পরিবারের এ অংশের সবথেকে ক্ষমতাধর
ব্যক্তিত্ব। রিয়াদের গভর্নর থাকাকালীন মরু শহর থেকে আধুনিক নগরীতে পরিণত
করার পেছনে কৃতিত্ব রয়েছে বাদশাহ সালমানের। সেখানে স্থাপন করেছেন
বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্বের নামীদামি ফুড চেইন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে
তিনি ছিলেন সৌদি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে। তার অধীনেই সৌদি সেনাবাহিনী
আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দেয়। প্রগতিশীল ও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন
যুবরাজ হিসেবে সুনাম রয়েছে সালমানের। এদিকে সৌদি আরবে ক্ষমতার এ পালাবদলটা
বাধাহীনভাবে ও স্বচ্ছন্দেই হবে এবং কিছুটা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও,
দীর্ঘমেয়াদি নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে না, এমনটা আশা করা হচ্ছে। তবে
সাম্প্রতিক সময়ে সালমানের স্বাস্থ্য খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। সে কারণে বড়
ভাই আবদুল্লাহর মতো দীর্ঘ সময় তিনি সৌদি বাদশাহের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন
বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে বাদশাহ আবদুল্লাহর সিংহাসনের
পরবর্তী উত্তরাধিকারী হবেন যুবরাজ মুকরিন। তিনি বাদশাহ আবদুল আজিজের
সর্বকনিষ্ঠ পুত্র। বাদশাহ সালমানের মতো প্রজ্ঞার সঙ্গে তিনিও পুনর্গঠন ও
সংস্কারের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন বলে সুনাম রয়েছে। প্রয়াত সৌদি
বাদশাহ আবদুল্লাহ স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন। ধারণা করা
হচ্ছে, তার উত্তরাধিকারী হিসেবে বাদশাহ সালমানও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন।
বিশেষ করে পররাষ্ট্র ও জ্বালানি নীতিতে পরিবর্তন আসবে না বলেই ধারণা করা
হচ্ছে। তবে রক্ষণশীল সৌদি আরবে তিনি সংস্কার আনতে পারেন। বাদশাহ আবদুল্লাহ
নিজে ক্ষমতায় থাকাকালে শূরা কাউন্সিল বা উপদেষ্টা পরিষদে নারীদের
অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছিলেন। দশাহ আবদুল্লাহর স্বাস্থ্যহানি শুরুর পর
থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ইস্যুতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি। গত
মার্চে সৎ ভাই মুকরিনকে দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন আবদুল্লাহ।
ক্ষমতা হস্তান্তর মসৃণ রাখতে এ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। মুকরিন সাবেক
গোয়েন্দা প্রধান। একজন উদারপন্থি হিসেবে বাদশাহর আস্থাভাজন ছিলেন তিনি।
তিনি বিমান বাহিনীর একজন সদস্যও। ১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া মুকরিন বাদশাহ আবদুল
আজিজ বিন সৌদের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে। আবদুল আজিজের ৪৫ সন্তানের মধ্যে
আবদুল্লাহ, সালমান ও মুকরিন সকলেই একে অপরের সৎ ভাই। নতুন বাদশাহ সালমানকে
বেশ বড় কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে আসছে দিনগুলোতে। তেলের দাম পড়ে
যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয় কমে যাওয়া অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে নতুন বাদশাহ সালমান
অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে স্বীকৃত। তার ওপর বর্তানো দায়িত্ব তিনি দক্ষতার সঙ্গেই
পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
No comments