ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হেলপার রহিমের মৃত্যু
‘আপনারা
কেউ রহিমকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। দয়া করে আপনারা আলোচনা করে এই
পরিস্থিতির সমাধান করুন। এ অস্থিরতা চলতে থাকলে আরও অনেক রহিমকে জীবন দিতে
হবে। এটা চলতে পারে না। কি অপরাধ করেছে রহিম, কেন তাকে এভাবে জীবন দিতে
হলো?’ দুই নেত্রীর উদ্দেশে এই আর্তনাদ আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত আব্দুর রহিমের
বড় ভাই রমযান আলীর। বগুড়ায় পণ্যবাহী ট্রাকে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ
রহিম গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রহিমের বড় ভই রমজান আলী
জানান, দীর্ঘ ৮ বছর মালয়েশিয়া ছিলেন রহিম। দেশে ফিরে কৃষি পণ্যের পাইকারি
ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসার কাজে গিয়েই এ ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, দরিদ্র
পরিবার। তারা সাত ভাই নিজেদের সংসার নিয়েই ব্যস্ত। এর মধ্যে অনেক কষ্ট করে
দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাতেন আবদুর রহিম। তার মৃত্যুতে এ পরিবারের সামনে
এখন অন্ধকার। নিহতের লাশের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল দুপুর ১টায় লাশ গ্রহণ
করেন তার আত্মীয় সাখাওয়াত হোসেন সুজন। সুজন জানান, রহিমের বাড়ি সাতক্ষীরা
সদরে তাকে দাফন করা হবে। রহিমের মৃত্যুর খবর শুনে তার বাড়িতে ভিড় করেন
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্বজনরা। সাতক্ষীরা সদরের বোমরা ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম জানান, দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম
ব্যক্তি আব্দুর রহিম। ক্ষুদ্র ব্যবসা করে তিনি সংসার চালাতেন। বুধবার
ব্যবসার কাজে বগুড়া যান আবদুর রহিম। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ফার্নিচার
ব্যবসায়ী বন্ধু সাজু খলিফার সঙ্গে ট্রাকে করে ফিরছিলেন তিনি। তখনই ঘটে এই
ঘটনা ঘটে। বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার জানান,
রাত ৮টার দিকে বগুড়া-নামুজা সড়কের নুনগোলায় তাদের ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়ে
যায় দুর্বৃত্তরা। এতে আবদুর রহিম, ফার্নিচারের মালিক সাজু মিয়া ও চালকসহ
তিনজন দগ্ধ হন। ট্রাকটির অধিকাংশই পুড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের বগুড়া
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি
ঘটলে আবদুর রহিম ও সাজু মিয়াকে ভোর ৫টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা
হয়। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল
জানান, শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় আব্দুর রহিমকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আগুনে তার
শরীরের ৩৩ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে তার মৃত্যু
হয়। এছাড়া ওই ট্রাকে থাকা সাজু মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।
এছাড়া দগ্ধ ট্রাক চালককে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন তার সন্তানদের জড়িয়ে ধরে তিনি আর্তনাদ করে
বলছিলেন, আমার স্বামীকে কেন এভাবে খুন করা হলো। এখন এই বাচ্চাদের কি হবে,
কে এদের লেখাপড়া করাবে? নিহত আবদুর রহিম সাতক্ষীরা জেলা সদরের শ্রীরামপুরের
বাসিন্দা। তার পিতা মৃত মালেক মোড়ল। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের
জনক। তার পুত্র সানজিদ আহমেদ সম্রাট নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং কন্যা সুমাইয়া
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
No comments