সিলেট-আখাউড়া রেললাইনে ক্লিপ চুরির হিড়িক by আলাউদ্দিন কবির

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭৮ কিলোমিটার। এ রেললাইনে ঝুঁকি নিয়ে ও স্বাভাবিক গতির চেয়ে কম গতিতে চলাচল করে ট্রেন। কারণ রেললাইনের বেশির ভাগ ক্লিপ চুরি হয়ে গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে রহস্যময় কারণে উদাসীন। সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ৫টি সেকশনে ভাগ করা। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ছাতকবাজার সিলেট সেকশন। ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত কুলাউড়া সেকশন। কুলাউড়া থেকে লস্করপুর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল সেকশন। লস্করপুর থেকে মুকুন্দপুর পর্যন্ত সায়েস্তাগঞ্জ সেকশন এবং মুকুন্দপুর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত আখাউড়া সেকশন। এ ৫ সেকশনের ১৭৮ কিলোমিটার রেলপথকে নির্বিঘ্ন করতে রয়েছেন ৫ জন ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ)। কতটা নির্বিঘ্ন করতে পারছেন রেলপথকে? এ প্রশ্ন এখন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের।
সরজমিন কুলাউড়া থেকে লংলা, লংলা থেকে টিলাগাঁও এবং টিলাগাঁও থেকে মনু স্টেশনে গেলেও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উদাসীনতার নজির চোখে পড়বে। শতকরা ৫০ ভাগ রেলের ক্লিপ নেই। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। শুধু ঝুঁকি নিয়ে নয় স্বাভাবিক গতির চেয়ে কম গতিতে ট্রেন চলাচল করে থাকে। কেননা গতি বাড়ালেই ট্রেনের বগি লাফায় এবং বাড়াবাড়ি করে। এর অন্যতম কারণ রেলের ক্লিপ না থাকা। ট্রেন চালকরা দুর্ঘটনা এড়াতে মূলত কম গতিতে ট্রেন চালান। ফলে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো প্রায় নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক-দুই ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছে। তা ছাড়া ক্লিপ ও ফিশপ্লেট চুরির কারণে প্রায়ই ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের ক্লিপ চুরির অন্যতম কারণ লোকবল সঙ্কটের কারণে স্টেশন বন্ধ হওয়া। কুলাউড়ার ভাটেরা, লংলা ও টিলাগাঁও স্টেশন বন্ধ। নামকাওয়াস্তে চলছে ছকাপন ও মনু স্টেশন। যদি একটা উপজেলার মধ্যে ৫টি স্টেশন বন্ধ থাকে তবে এর মধ্যবর্তী রেলপথ অনেকটাই অরক্ষিত থাকে। স্টেশন চালু থাকলে সেসব স্টেশনে কর্মরতরাও বিষয়টি তদারকি করে। তাদের মতে, এখন তো রেলের ক্লিপ নিচ্ছে। কিছুদিন পর বন্ধ স্টেশনের মালামালও নিয়ে যাবে চোরচক্র।
স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে চোরচক্র এ ক্লিপ খুলে নেয়। দিনে নিলে মানুষের নজরে পড়তো। এসব ক্লিপ ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করা হয়। ভাঙাড়ি মালামালের সঙ্গে ট্রাকবোঝাই করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাচার হয়। ভাঙাড়ি মালবোঝাই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালালে রেলের ক্লিপ, ফিশপ্লেট, পাত পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র জানায়। অতীতে অনেকবার ধরাও পড়েছে এ চক্রের সদস্যরা। মামলা হয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে জামিনে এসে ফের ধান্দা চালিয়ে যান ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা। রেললাইনের ক্লিপ চোরচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে রেলপথ অনেকাংশেই নিরাপদ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এরফানুর রহমান জানান, চুরি হচ্ছে মূলত বিভিন্ন সময়ে। ইতিমধ্যে একটি চাহিদা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া আছে। তা ছাড়া মেরামতও করা হচ্ছে সময় সময়।