নির্মূলের রাজনীতি প্রকাশ্যে by সাজেদুল হক
বিপর্যস্ত
বাংলাদেশ। বিপন্ন মানবাধিকার। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ পেট্রলবোমায়, কেউ
গুলিতে, কেউ ‘বন্দুকযুদ্ধে’। বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সারা দুুনিয়া।
সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সে পথে হাঁটছেন না। চলমান
পরিস্থিতিকে কোন রাজনৈতিক সঙ্কটই মনে করেন না তারা। একের পর এক আসছে
ঘোষণা, হুঙ্কার। সব ঠিক আছে পার্টি আবার তৎপর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক- এ
প্রচারণা অবশ্য বঙ্গে নতুন নয়। প্রকাশ্যে এভাবে বলা হয়তো নতুন। আওয়ামী লীগ
নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ অবশ্য মনে করেন, এটা সেন্সরশিপ নয়, নৈতিক
দায়িত্ববোধ। টিভি পর্দায় শুধু একপক্ষের মুখই দেখা যাচ্ছে। ইতিহাস আবার
প্রত্যাবর্তন করেছে বাংলাদেশে। কয়েকদিন ধরে সরকারের সব পর্যায় থেকেই বলা
হচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। সিদ্ধান্ত অবশ্য চূড়ান্ত।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বর্তমান সঙ্কটকে চিহ্নিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা জনিত
সমস্যা হিসেবে। কোথায়ও কোন রাজনীতি দেখছেন না তারা। ঠিক করা হয়েছে বিরোধী
শক্তিকে নির্মূল করে প্রতিষ্ঠা করা হবে শান্তি। এ বার্তা এরই মধ্যে
পৌঁছে দেয়া হয়েছে সর্বত্র। কোন রাখডাক নেই। বাংলাদেশে নির্মূলের রাজনীতি
এমন প্রকাশ্যে অতীতে কোনদিনই দেখা যায়নি। সরকারের একাধিক মন্ত্রী
প্রকাশ্যেই যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। একটি টিভি আলোচনায়
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কটের
সমাধানের কথা বললে সিনিয়র সাংবাদিক আমান উল্লাহ কবির বলেন, কেউ যদি মনে
করেন শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কটের সমাধান করতে পারবেন তবে
নিজেকে স্টুপিড বলা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ১৯৭৫
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিরোধী
শক্তি অর্ধেকের মতো ভোট পেয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও ভোটের এ হার
স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়েছে। এ অবস্থায় বিরোধী শক্তিকে স্বল্প সময়ের জন্য
ঠাণ্ডা করা গেলেও নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। এর পরিণতিতে ভয়ঙ্কর
এক পরিণতির দিকে এগুতে পারে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদের উত্থান থেকে শুরু করে কেউ
কেউ এমনকি গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন
ডিসির গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের
সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিজ মনে করেন বাংলাদেশ বর্তমান সংঘাতময়
পরিস্থিতির জন্য দায়ী ৫ই জানুয়ারির ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেছেন,
অবিলম্বে বাংলাদেশ বর্তমান সঙ্কটের নিরসন করতে না পারলে এর পরিণতি ভয়ঙ্কর
হতে পারে। এমনকি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সঙ্কটের স্থায়ী
সমাধানের জন্য জাতীয়ভাবে সংলাপে বসা উচিত। সেরকম কোন লক্ষণ এই মুহূর্তে
দেখা যাচ্ছে না। আর জাতীয় সংলাপ না হলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে
রাষ্ট্র অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে।
অন্যদিকে, সরকার যখন নির্মূল থিওরিতে এগুচ্ছে তখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। সভা-সমাবেশের প্রশ্ন নয় এখন নির্বাচন প্রশ্নেই সমঝোতা চান তিনি। মধ্যবর্ত্তী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই কেবল সমঝোতার পথ খুলতে পারে বলে মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর কি পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে সংলাপের পক্ষপাতী তারা। এছাড়া অন্য কোন বিষয়ে সমঝোতা করে বর্তমান সঙ্কটের কোন সুরাহা হবে তারা মনে করেন না। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন মনে করেন, নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সঙ্কটের সমাধানের আর কোন পথ নেই। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমি আগেই বলেছি এবার ফাইনাল খেলা হবে। সভা-সমাবেশের সময় এখন চলে গেছে। সরকারকে সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে কখন নির্বাচন হবে এবং কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। এর বাইরে আন্দোলন স্থগিত করার আর কোন পথ নেই।
একদিকে হুঙ্কার। অন্যদিকে, অবরোধ। পোড়া মানুষের গন্ধ। নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম। চলছে দমন অভিযান। বাড়ি ছেড়ে ছুটে পালাচ্ছে মানুষ। যে ছবি দেখে সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সায়ীদের মনে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কথা। অভিযানে নামে ভাঙচুর আর আগুন দেয়া হচ্ছে বাড়িতে। ক্রসফায়ার আর গুম সংস্কৃতি ফিরে এসেছে প্রকাশ্যে। এ দুঃসহ সময়ে লেখক ও বিবিসি’তে কর্মরত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আপনারা এর গোড়ার দিকে তাকান। ওখান থেকে জীবাণুটা দূর করেন। মন্ত্রীরা, সরকারি দলের রাজনীতিকরা বার্ন ইউনিটে যাচ্ছেন। পোড়া মানুষের ছবি প্রচার করছেন আর বলছেন দেখুন ওরা কতো খারাপ। ওরা যে খারাপ সেটা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। খারাপ না হলে ওরা নিজেদের বাপ মা ভাই বোনকে পেট্রলের আগুনে এভাবে পোড়াতে পারে না। কিন্তু আপনারা কি ভাল? একবার ভেবে দেখুনতো ওই বার্ন ইউনিটের পেছনে কি কারণ? আজ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলো কি কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি?
অন্যদিকে, সরকার যখন নির্মূল থিওরিতে এগুচ্ছে তখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও অনড় অবস্থানে রয়েছেন। সভা-সমাবেশের প্রশ্ন নয় এখন নির্বাচন প্রশ্নেই সমঝোতা চান তিনি। মধ্যবর্ত্তী নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই কেবল সমঝোতার পথ খুলতে পারে বলে মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর কি পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে সংলাপের পক্ষপাতী তারা। এছাড়া অন্য কোন বিষয়ে সমঝোতা করে বর্তমান সঙ্কটের কোন সুরাহা হবে তারা মনে করেন না। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন মনে করেন, নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সঙ্কটের সমাধানের আর কোন পথ নেই। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমি আগেই বলেছি এবার ফাইনাল খেলা হবে। সভা-সমাবেশের সময় এখন চলে গেছে। সরকারকে সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে কখন নির্বাচন হবে এবং কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। এর বাইরে আন্দোলন স্থগিত করার আর কোন পথ নেই।
একদিকে হুঙ্কার। অন্যদিকে, অবরোধ। পোড়া মানুষের গন্ধ। নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম। চলছে দমন অভিযান। বাড়ি ছেড়ে ছুটে পালাচ্ছে মানুষ। যে ছবি দেখে সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সায়ীদের মনে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কথা। অভিযানে নামে ভাঙচুর আর আগুন দেয়া হচ্ছে বাড়িতে। ক্রসফায়ার আর গুম সংস্কৃতি ফিরে এসেছে প্রকাশ্যে। এ দুঃসহ সময়ে লেখক ও বিবিসি’তে কর্মরত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, আপনারা এর গোড়ার দিকে তাকান। ওখান থেকে জীবাণুটা দূর করেন। মন্ত্রীরা, সরকারি দলের রাজনীতিকরা বার্ন ইউনিটে যাচ্ছেন। পোড়া মানুষের ছবি প্রচার করছেন আর বলছেন দেখুন ওরা কতো খারাপ। ওরা যে খারাপ সেটা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। খারাপ না হলে ওরা নিজেদের বাপ মা ভাই বোনকে পেট্রলের আগুনে এভাবে পোড়াতে পারে না। কিন্তু আপনারা কি ভাল? একবার ভেবে দেখুনতো ওই বার্ন ইউনিটের পেছনে কি কারণ? আজ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলো কি কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি?
No comments