৩ বছরে আইএসকে নির্মূল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়ংকর হয়ে ওঠা জঙ্গিসংগঠন ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র কী কৌশল বা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, তা জানা যাবে কাল বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাষণে। তবে তাঁর প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন বছরের মধ্যে আইএসকে নির্মূল করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে মার্কিন বাহিনী। অভিযান চলবে তিন ধাপে, এর প্রথম ধাপ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। প্রেসিডেন্ট ওবামা গত রোববার একটি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকারে বলেন, আইএসকে মোকাবিলায় তাঁর সরকার কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বুধবার দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তা তুলে ধরবেন তিনি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, আইএসকে রুখতে প্রথম ধাপের অভিযানের অংশ হিসেবে ইরাকে জঙ্গি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। গত মাসে ইরাকে আইএসের অবস্থানে অন্তত ১৪৫ বার বিমান হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মার্কিন কূটনীতিক, গোয়েন্দা, সামরিক সদস্য ও স্থাপনা রক্ষায় ওই হামলা চালানো হয়। এটা বেশ কাজেও দিয়েছে। ইরাকের পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অনেকটাই পিছু হটেছে আইএস। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র আইএসবিরোধী দ্বিতীয় ধাপের অভিযান শুরু হবে ইরাকে সরকার গঠনের পর পরই। চলতি সপ্তাহেই দেশটিতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকার গঠিত হলে ইরাকি বাহিনী, কুর্দি যোদ্ধা ও উপজাতি কিছু গোষ্ঠীর প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তা বাড়ানো হবে। সেই সহায়তা হবে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, আইএসবিরোধী তৃতীয় ও সর্বশেষ ধাপের অভিযান হবে সবচেয়ে কঠিন। এই অভিযান রাজনৈতিকভাবেও বিতর্কিত হবে। এই ধাপে সিরিয়ার অভ্যন্তরে আইএসের অবস্থান লক্ষ্য করে অভিযান চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামার মেয়াদ শেষে নতুন প্রশাসন না আসা পর্যন্ত আইএসবিরোধী অভিযান পুরোপুরি শেষ করা হয়তো সম্ভব হবে না। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, আইএসবিরোধী তিন ধাপের অভিযান কমপক্ষে তিন বছর চলবে। এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে গত রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা জানান, যুক্তরাষ্ট্র শুধু সাময়িকভাবে জঙ্গিদের দুর্বল করতে সেখানে যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা পদ্ধতিগতভাবে জঙ্গিদের সামর্থ্য কমিয়ে আনতে যাচ্ছি। জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ড কমিয়ে আনা সর্বোপরি তাদের পরাজিত করতেই যাচ্ছি আমরা।’ ওবামা সামরিক অভিযানের ধরন কী হবে, তা স্পষ্ট করেননি। তবে মার্কিন সেনারা যে আইএসের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেবে না, সেটা একরকম নিশ্চিত।
তবে এটাও নিশ্চিত যে লিবিয়ায় কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিবিরোধী অভিযানের মতো পেছন থেকে নয়, আইএসকে নিশ্চিহ্ন করতে সামনে থেকে মূল ভূমিকা পালন করবে যুক্তরাষ্ট্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, আইএস নির্মূলে ইরাকে হামলা চালানোর পক্ষে অনেক দেশই মত দিয়েছে। সিরিয়ায় হামলা চালানোর পক্ষেও মত আছে। তবে সিরিয়ার হামলা চালানোর ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশটিতে যুদ্ধ চলায় আইএসের অবস্থান শনাক্ত করে হামলা চালানোটা হবে বেশ কঠিন। ইরাক ও সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে তুরস্কের। বিদেশি যোদ্ধারা তুরস্ক দিয়ে ওই দুই দেশে প্রবেশ করে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আইএসবিরোধী অভিযান চালাতে সেই তুরস্ককেই ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল তুরস্কের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তুরস্ক সেই সাড়া দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, কূটনীতিকসহ তুরস্কের ৪৯ জন নাগরিক আইএসের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন। গত জুনে ইরাকের মসুল শহরে তুর্কি কনস্যুলেট থেকে তাদের অপহরণ করে আইএসের জঙ্গিরা।
No comments