আত্মহত্যা নয়, রুখে দাঁড়াও by মালেকা বেগম
বাংলাদেশের নারীবৈষম্যের ও কিশোরী নির্যাতনের যে চিত্র বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ এবং ইউনিসেফ সম্প্রতি প্রচার করেছে, তা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও নারী আন্দোলনের জন্য অবশ্যই চিন্তা-উদ্বেগের একটি সতর্কীকরণ বিষয়।
দাতাগোষ্ঠীর সাহায্যে দাতাগোষ্ঠীর অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় যেসব এনজিও-নারী সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে, সেসব সংগঠনের এবং দাতাগোষ্ঠীর জন্যও জাতিসংঘের সর্বশেষ নারীবৈষম্য, নারী হত্যা, কিশোরী আত্মহত্যার প্রতিবেদনগুলো দুঃসংবাদ ও তাদের সাহায্যে পরিচালিত সংগঠনগুলোর কাজের পুনর্মূল্যায়নের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে নিশ্চয়ই।
দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী-কিশোরীকে নিহত হতে হচ্ছে, নির্যাতিত হতে হচ্ছে এবং আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। যদিও নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে গ্রাম-গ্রামান্তরে, শহরে-বন্দরে; তবু দেখি নারী বড় অসহায় হয়ে আজও নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও সহায়তা পাচ্ছে না। আমাদের চারপাশের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বহু সুখবর নারীর ক্ষমতায়িত সুস্থ বিকশিত দৃঢ় অবস্থানের আনন্দ বয়ে আনছে। কিন্তু পরিবারের ভেতরই নারী নির্যাতনের ভয়াবহ নৃশংসতার বৈশ্বিক-তথ্যাদি আমাদের পরিবার, সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির অন্ধকার-গহ্বরের খবরটিও যখন দিচ্ছে, তখন শুধু নারী আন্দোলনের ব্যর্থতাই প্রকট হচ্ছে না, সেই সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির আলোকিত আন্দোলনের ব্যর্থতাও প্রকট হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সনদের ২ নম্বর ও ১৬ নম্বর ধারায় | এবারও বাংলাদেশ সরকার অস্বীকৃতি জানাল। অর্থাৎ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার সনদে স্বীকৃতি দেওয়া বিষয়গুলোতে সরকার সব ক্ষেত্রে এখনই আইনি সংশোধন আনতে অপারগতা জানাল। হিন্দু আইনের বিষয়ে অস্বীকৃতি সংখ্যালঘু নারীর প্রতি নির্যাতন বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে সন্তানের অভিভাবকত্বের অধিকার থেকে মা বঞ্চিত থাকছেন।
ঘরের বাইরের ভালো মানুষটি, (নারী ও পুরুষ উভয়েই) ঘরের ভেতরের পুরুষ-নারী-শিশুকে কীভাবে গড়ে তুলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন অবস্থানের, কাজের, আচরণের বিষয়ে মতবিনিময় হচ্ছে কি না, ঘরের ভেতরের ও ঘরের বাইরের নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়কে সম্মানজনক, সমমর্যাদায় বিবেচনা করছেন কি না, গার্হস্থ্যকাজে পুরুষ সদস্য সমান তালে অংশ নিচ্ছেন কি না—এসবই নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের জন্য সমাজের প্রাথমিক ইউনিট পরিবারের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বহু পুরোনো এই তত্ত্বগত বিষয়টি অতি আবশ্যিক প্রায়োগিক বলে কাজ শুরু করতেই হবে। আর দেরি করার সময় নেই।
পরিবারের চেহারাটা বাংলাদেশে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। ছোট পরিবার, বড় পরিবার, চাকরিজীবী নারী-পুরুষের পরিবার, শ্রমজীবী-গৃহকর্মী-নারী-পুরুষের মেসভিত্তিক জীবনযাপনে পরিবার বিচ্যুত অথচ সংযুক্ত মানুষগুলো আর্থিক-পারিবারিক দায়দায়িত্ব পালনে বিব্রত বিধ্বস্ত। নিজ দেশে শ্রমজীবী বেকার নারী-পুরুষের জন্য কলকারখানা-কাজের ব্যবস্থা না করে যেসব নারী-পুরুষকে সরকার বিদেশে পাঠানোর তৎপরতায় সফল হচ্ছে, সেসব পরিবারের বন্ধন ও ভাঙন এবং নারীর ওপর শোষণ-নির্যাতনের তথ্যচিত্র কম ভয়াবহ নয়। এইডসের ভয়াবহতার খবরও চিন্তার বিষয়।
নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক এবং তার নীতিগত-ধর্মীয়-আইনগত বিধিমালা সমাজ-সংস্কৃতি-পরিবার-রাজনীতি-আইন প্রশাসন-থানা-পুলিশ—সবার নিজ নিজ ধ্যানধারণার সীমাবদ্ধতায় পরিচালিত হয়। সে ক্ষেত্রে পুরুষের যথেচ্ছ যৌন আচরণ এবং ধর্ষণ, যৌন উত্ত্যক্ত করা সমাজ বিচারে সাধারণত ধিক্কৃত নয়। সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই নির্যাতনের শিকার নারীই সমাজ-নিন্দিত, পরিবার-নিন্দিত হয়ে আসছে।
লজ্জা, শরম, ভয় শিশুকাল থেকেই মেয়েটির মন আচ্ছন্ন করে রাখে। পরিবারের নানাজনের শাসন চলে মেয়েটির ওপরই। ছেলেটিকে শেখানোই হয় না যে মেয়ে, সে বোন, মা, খালা, দাদি, নারী, সহপাঠী, বন্ধু যেই হোক না কেন, তাকে সম্মান করতে হবে; হেনস্তা করা যাবে না। বাড়ির শিশুটি মায়ের কাছেই বেশি সময় কাটায়। বাবা বা অন্য পুরুষ সদস্যরা শিশুসন্তানের খোঁজখবর আলগা-আলগা দায়সারাভাবে রাখেন। অনেকে তাও রাখেন না। কিন্তু পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক (বাবা-মা ও অন্য সদস্যদের) আচরণের স্নিগ্ধতা-মাধুর্য অথবা তিক্ততা-নিষ্ঠুরতা শিশুদের মনে সেই আচরণের প্রভাব ফেলে। ফলে ভালো আচরণ সম্পর্কের প্রভাবে ভালো আচরণের শিশু গড়ে ওঠে। মন্দ আচরণের প্রভাবে মন্দ শিশুর মন-মানসিকতা মন্দ হয়।
মনস্তত্ত্ববিদদের প্রয়োজনীয়তা সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। কিন্তু মনস্তত্ত্ববিদের কাজ শুরু হয় অঘটন ঘটার পরে। সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির অঘটন কোন মনস্তত্ত্ববিদ সারিয়ে তুলবেন? সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সুস্থ আন্দোলন-সংগঠনই হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে অঘটন না ঘটানোর মূল চালিকাশক্তি। এসব ক্ষেত্রে সুস্থচর্চার বড়ই অভাব।
নারীর অসহায়ত্ব-নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনাগুলো রুখে দাঁড়ানোর জন্য নারী আন্দোলন-সংগঠনগুলোর সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে নতুন যুগের, নতুন সময়ের প্রয়োজনে নতুন কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-শহরে নারী-পুরুষের মিলিত চর্চায় মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কাজ করতে হবে সব সংগঠনকে সম্মিলিতভাবে। এও এক মুক্তিযুদ্ধ। নারীর মুক্তিযুদ্ধ আজ সমাজের, সংস্কৃতির, রাজনীতির মুক্তিযুদ্ধ। আত্মহত্যা করবে কেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটি? সে রুখে দাঁড়াবে। তখনই সে এই কাজটি করতে পারবে যখন সে নিশ্চিতভাবে জানবে যে সে অপরাধী নয় এবং তাকে সমাজ, পরিবার, প্রশাসন, আইন, বন্ধু—সবাই সমর্থন করছে, সহায়তা দিচ্ছে।
মিডিয়ার ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তাই ইতিবাচক হতেই হবে। টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, ফেসবুক, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম, বিজ্ঞাপন অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে এটাও সত্য এসব মাধ্যম বাণিজ্যিক-পুঁজিবাদের নেতিবাচক বাজার লাভের হিসাব-নিকাশে নারীকে পণ্য করে তুলতে চরম উৎসাহী। এসবের বিরুদ্ধেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নারী আন্দোলনের সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে তুলে কাজ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। নারী নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়ে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে এবং নারীকে সর্ব পর্যায়ে সাহসী করে তোলার জন্য মিডিয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
মালেকা বেগম: নারীনেত্রী। অধ্যাপক, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
দাতাগোষ্ঠীর সাহায্যে দাতাগোষ্ঠীর অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় যেসব এনজিও-নারী সংগঠনগুলো পরিচালিত হচ্ছে, সেসব সংগঠনের এবং দাতাগোষ্ঠীর জন্যও জাতিসংঘের সর্বশেষ নারীবৈষম্য, নারী হত্যা, কিশোরী আত্মহত্যার প্রতিবেদনগুলো দুঃসংবাদ ও তাদের সাহায্যে পরিচালিত সংগঠনগুলোর কাজের পুনর্মূল্যায়নের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে নিশ্চয়ই।
দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী-কিশোরীকে নিহত হতে হচ্ছে, নির্যাতিত হতে হচ্ছে এবং আত্মহত্যা করতে হচ্ছে। যদিও নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে গ্রাম-গ্রামান্তরে, শহরে-বন্দরে; তবু দেখি নারী বড় অসহায় হয়ে আজও নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও সহায়তা পাচ্ছে না। আমাদের চারপাশের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বহু সুখবর নারীর ক্ষমতায়িত সুস্থ বিকশিত দৃঢ় অবস্থানের আনন্দ বয়ে আনছে। কিন্তু পরিবারের ভেতরই নারী নির্যাতনের ভয়াবহ নৃশংসতার বৈশ্বিক-তথ্যাদি আমাদের পরিবার, সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির অন্ধকার-গহ্বরের খবরটিও যখন দিচ্ছে, তখন শুধু নারী আন্দোলনের ব্যর্থতাই প্রকট হচ্ছে না, সেই সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির আলোকিত আন্দোলনের ব্যর্থতাও প্রকট হয়ে উঠছে। নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সনদের ২ নম্বর ও ১৬ নম্বর ধারায় | এবারও বাংলাদেশ সরকার অস্বীকৃতি জানাল। অর্থাৎ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার সনদে স্বীকৃতি দেওয়া বিষয়গুলোতে সরকার সব ক্ষেত্রে এখনই আইনি সংশোধন আনতে অপারগতা জানাল। হিন্দু আইনের বিষয়ে অস্বীকৃতি সংখ্যালঘু নারীর প্রতি নির্যাতন বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে সন্তানের অভিভাবকত্বের অধিকার থেকে মা বঞ্চিত থাকছেন।
ঘরের বাইরের ভালো মানুষটি, (নারী ও পুরুষ উভয়েই) ঘরের ভেতরের পুরুষ-নারী-শিশুকে কীভাবে গড়ে তুলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন অবস্থানের, কাজের, আচরণের বিষয়ে মতবিনিময় হচ্ছে কি না, ঘরের ভেতরের ও ঘরের বাইরের নারী-পুরুষ উভয়ে উভয়কে সম্মানজনক, সমমর্যাদায় বিবেচনা করছেন কি না, গার্হস্থ্যকাজে পুরুষ সদস্য সমান তালে অংশ নিচ্ছেন কি না—এসবই নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের জন্য সমাজের প্রাথমিক ইউনিট পরিবারের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বহু পুরোনো এই তত্ত্বগত বিষয়টি অতি আবশ্যিক প্রায়োগিক বলে কাজ শুরু করতেই হবে। আর দেরি করার সময় নেই।
পরিবারের চেহারাটা বাংলাদেশে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। ছোট পরিবার, বড় পরিবার, চাকরিজীবী নারী-পুরুষের পরিবার, শ্রমজীবী-গৃহকর্মী-নারী-পুরুষের মেসভিত্তিক জীবনযাপনে পরিবার বিচ্যুত অথচ সংযুক্ত মানুষগুলো আর্থিক-পারিবারিক দায়দায়িত্ব পালনে বিব্রত বিধ্বস্ত। নিজ দেশে শ্রমজীবী বেকার নারী-পুরুষের জন্য কলকারখানা-কাজের ব্যবস্থা না করে যেসব নারী-পুরুষকে সরকার বিদেশে পাঠানোর তৎপরতায় সফল হচ্ছে, সেসব পরিবারের বন্ধন ও ভাঙন এবং নারীর ওপর শোষণ-নির্যাতনের তথ্যচিত্র কম ভয়াবহ নয়। এইডসের ভয়াবহতার খবরও চিন্তার বিষয়।
নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক এবং তার নীতিগত-ধর্মীয়-আইনগত বিধিমালা সমাজ-সংস্কৃতি-পরিবার-রাজনীতি-আইন প্রশাসন-থানা-পুলিশ—সবার নিজ নিজ ধ্যানধারণার সীমাবদ্ধতায় পরিচালিত হয়। সে ক্ষেত্রে পুরুষের যথেচ্ছ যৌন আচরণ এবং ধর্ষণ, যৌন উত্ত্যক্ত করা সমাজ বিচারে সাধারণত ধিক্কৃত নয়। সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই নির্যাতনের শিকার নারীই সমাজ-নিন্দিত, পরিবার-নিন্দিত হয়ে আসছে।
লজ্জা, শরম, ভয় শিশুকাল থেকেই মেয়েটির মন আচ্ছন্ন করে রাখে। পরিবারের নানাজনের শাসন চলে মেয়েটির ওপরই। ছেলেটিকে শেখানোই হয় না যে মেয়ে, সে বোন, মা, খালা, দাদি, নারী, সহপাঠী, বন্ধু যেই হোক না কেন, তাকে সম্মান করতে হবে; হেনস্তা করা যাবে না। বাড়ির শিশুটি মায়ের কাছেই বেশি সময় কাটায়। বাবা বা অন্য পুরুষ সদস্যরা শিশুসন্তানের খোঁজখবর আলগা-আলগা দায়সারাভাবে রাখেন। অনেকে তাও রাখেন না। কিন্তু পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক (বাবা-মা ও অন্য সদস্যদের) আচরণের স্নিগ্ধতা-মাধুর্য অথবা তিক্ততা-নিষ্ঠুরতা শিশুদের মনে সেই আচরণের প্রভাব ফেলে। ফলে ভালো আচরণ সম্পর্কের প্রভাবে ভালো আচরণের শিশু গড়ে ওঠে। মন্দ আচরণের প্রভাবে মন্দ শিশুর মন-মানসিকতা মন্দ হয়।
মনস্তত্ত্ববিদদের প্রয়োজনীয়তা সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। কিন্তু মনস্তত্ত্ববিদের কাজ শুরু হয় অঘটন ঘটার পরে। সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির অঘটন কোন মনস্তত্ত্ববিদ সারিয়ে তুলবেন? সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সুস্থ আন্দোলন-সংগঠনই হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে অঘটন না ঘটানোর মূল চালিকাশক্তি। এসব ক্ষেত্রে সুস্থচর্চার বড়ই অভাব।
নারীর অসহায়ত্ব-নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনাগুলো রুখে দাঁড়ানোর জন্য নারী আন্দোলন-সংগঠনগুলোর সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে নতুন যুগের, নতুন সময়ের প্রয়োজনে নতুন কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে। পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়, গ্রামে-শহরে নারী-পুরুষের মিলিত চর্চায় মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কাজ করতে হবে সব সংগঠনকে সম্মিলিতভাবে। এও এক মুক্তিযুদ্ধ। নারীর মুক্তিযুদ্ধ আজ সমাজের, সংস্কৃতির, রাজনীতির মুক্তিযুদ্ধ। আত্মহত্যা করবে কেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটি? সে রুখে দাঁড়াবে। তখনই সে এই কাজটি করতে পারবে যখন সে নিশ্চিতভাবে জানবে যে সে অপরাধী নয় এবং তাকে সমাজ, পরিবার, প্রশাসন, আইন, বন্ধু—সবাই সমর্থন করছে, সহায়তা দিচ্ছে।
মিডিয়ার ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তাই ইতিবাচক হতেই হবে। টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, ফেসবুক, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম, বিজ্ঞাপন অত্যন্ত শক্তিশালী। তবে এটাও সত্য এসব মাধ্যম বাণিজ্যিক-পুঁজিবাদের নেতিবাচক বাজার লাভের হিসাব-নিকাশে নারীকে পণ্য করে তুলতে চরম উৎসাহী। এসবের বিরুদ্ধেও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-নারী আন্দোলনের সম্মিলিত মঞ্চ গড়ে তুলে কাজ করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। নারী নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়ে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে এবং নারীকে সর্ব পর্যায়ে সাহসী করে তোলার জন্য মিডিয়াকে সর্বাত্মক সহযোগিতার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
মালেকা বেগম: নারীনেত্রী। অধ্যাপক, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
No comments