ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর নীরবতা by যশবন্ত সিং
দুনিয়াটা মনে হচ্ছে ভূরাজনীতির নৈতিক স্খলনের খপ্পরে পড়েছে। কোনো নেতা, গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান দুনিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে, এমনটা মনে হচ্ছে না। অনেকেই আবার এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে শতবর্ষ আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগের সময়ের একটা মিল দেখতে পাচ্ছেন।
হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও সেই চরম সময়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনে মালয়েশীয় বিমানের ভূপাতিত হওয়ার সঙ্গে ১৯১৪ সালে আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যার ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে। আর কূটনৈতিক লড়ালড়ি যে খুব দ্রুতই সহিংসতায় পর্যবসিত হতে পারে, সে কথা না হয় আর পুনরুক্তি না-ই করলাম।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সত্ত্বেও বিমান সংস্থাটি তার প্রচলিত রুট পরিবর্তন করার কথা ভাবেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ভয়ংকর ঘটনাপ্রবাহের প্রতি কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিক্ষুব্ধতায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে। ফলে ভ্লাদিমির পুতিন যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন তা শিগগির দাবানলে পরিণত হতে পারে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের দিন কয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেজেজিনস্কিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সোভিয়েত-উত্তর দুনিয়ায় আমরা কী দেখব। তিনি বলেছিলেন, সেই দুনিয়ায় শান্তি আসতে পারে, যদি রাশিয়া শুধু তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
তবে পুতিন যে সে পথে হাঁটছেন না, তা পরিষ্কার। ২০০৮ সালে প্রথমে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার পর সম্প্রতি ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করেছে, মানে হারানো সাম্রাজ্যের একটি অংশ পুনরুদ্ধার করেছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা যে বলেছিলেন, কমিউনিজমের পতনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে, সেটা বোধ হয় শিগগির ঘটছে না। চীনের মতোই পুতিনের কর্তৃত্বপরায়ণ পুঁজিবাদ পশ্চিমের উদার গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, অথচ এই উদার গণতন্ত্রেরই জয় হওয়ার কথা ছিল।
পুতিনের দিক থেকে দেখলে ইউক্রেনে রাশিয়ার এই আগ্রহের যথেষ্ট কারণ আছে। পুতিন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জায়গায় রাশিয়ার নেতৃত্বে ইউরেশীয় ইউনিয়ন বানানোর কথা ভাবছেন, সে লক্ষ্যে ইউক্রেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি রাশিয়ার নেতারা ইউক্রেনকে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বাফার হিসেবে দেখে এসেছেন। জ্বালানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট, যে জ্বালানির ওপর ভর করে রাশিয়ার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে।
ইউক্রেনের পশ্চিমাভিমুখিতায় রাশিয়ার এই উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। পুতিন বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনের ২০০৪ সালের অরেঞ্জ রেভল্যুশনের পেছনে সিআইয়ের মদদ ছিল। ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের নির্বাচন জালিয়াতির যে প্রচেষ্টা ছিল, তার বিরুদ্ধে যে গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেটাতেও সিআইয়ের মদদ ছিল। কিন্তু আন্দোলনের ব্যাপকতা ও এর প্রতি পশ্চিমের সমর্থনের কারণে পুতিন সে সময় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেননি। ফলে সামরিক অভিযানে না গিয়ে পুতিন আর্থিক সহায়তা ও জ্বালানি রপ্তানির মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিজের প্রভাববলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আর এবার পুতিন সামরিক অভিযানের পথ বেছে নিলেন। এ সিদ্ধান্তটি রাশিয়ায় বিপর্যয় বয়ে আনছে। পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার কারণে যে হারে পুঁজি পাচার শুরু হয়েছে, সোভিয়েত পতনের পরপরই এমনটা দেখা গেছে, তারপর আর এমনটা হয়নি।
তদুপরি, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুবলের দ্রুত পতনের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, আর পুতিন পশ্চিমা খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছেন। ফলে জনগণের জীবনমান নিচে নামবে, দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্নও হয়ে পড়বে তারা। এতে পুতিনের জনপ্রিয়তা কমে যাবে।
পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ দলবদ্ধ যুদ্ধের রূপ লাভ করেছে, আইনকানুনের কোনো বালাই সেখানে নেই, নিয়ন্ত্রণহীন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে, ফলে সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্য যেমন ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। জুলাইয়ের শেষের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষমেশ একটি সিদ্ধান্ত নিলেও এর ফলে আদতে এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশকে লেলিয়ে দেওয়ার সব ক্ষমতা পুতিনের হাতেই দেওয়া হলো, ডাচ এমইপি মারিয়েতজির মতে। এদিকে জিওফ ডায়ার বলেছেন, এই মালয়েশীয় বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আসলে এক ধন্দে পড়ে গেলেন— তিনি কি ইউরোপের সঙ্গে হাঁটবেন, নাকি সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেবেন।
ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে পশ্চিম যদি দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সেটা সজ্ঞানে চোখ বন্ধ করে থাকার শামিল। চীন রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ইউক্রেনের সংকটে নাক গলানোর বিষয়ে কিছু বলেনি বা সেটাকে অনুমোদন করেছে। ভারতেরও এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, চীন ভারতের কিছু ভূমিতে নিজেদের মালিকানা দাবি করে। কিন্তু এ নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যায়নি।
ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সেটা পুরোপুরি মর্মপীড়ক নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে, তখন ভারত প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেনি। জাতিসংঘে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারে বারবার প্রস্তাব পেশ হলেও ভারত সেখানে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। অথচ অন্য জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো এতে সমর্থন দিয়েছে।
১৯৮০-এর শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান থেকে নিরাপদ ও সম্মানজনক বিদায়ের উপায় খুঁজছিল, তখন ভারতের আর কিছু বলার ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনেও ভারত কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
দুনিয়ার বিধিব্যবস্থার ভিত নড়ে গেলে পরাশক্তিগুলোর এরূপ নিশ্চুপ থাকা ঠিক নয়। উদীয়মান শক্তি যেমন
ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক সবারই উচিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মৌলিক দিকগুলো রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। তাদের ভেবে দেখা উচিত, এই ব্যবস্থার কারণেই তাদের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। তা না হলে দুনিয়ার মাতব্বরেরা যখন শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেবেন, তখন এই দেশগুলো হয়তো দেখবে যে তারা এক কলঙ্কজনক বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগও হয়তো সেদিন আর থাকবে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
যশবন্ত সিং: ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
হ্যাঁ, নিশ্চিতভাবেই চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও সেই চরম সময়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনে মালয়েশীয় বিমানের ভূপাতিত হওয়ার সঙ্গে ১৯১৪ সালে আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যার ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে। আর কূটনৈতিক লড়ালড়ি যে খুব দ্রুতই সহিংসতায় পর্যবসিত হতে পারে, সে কথা না হয় আর পুনরুক্তি না-ই করলাম।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সত্ত্বেও বিমান সংস্থাটি তার প্রচলিত রুট পরিবর্তন করার কথা ভাবেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ভয়ংকর ঘটনাপ্রবাহের প্রতি কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনী বিক্ষুব্ধতায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে। ফলে ভ্লাদিমির পুতিন যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন তা শিগগির দাবানলে পরিণত হতে পারে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের দিন কয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেজেজিনস্কিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সোভিয়েত-উত্তর দুনিয়ায় আমরা কী দেখব। তিনি বলেছিলেন, সেই দুনিয়ায় শান্তি আসতে পারে, যদি রাশিয়া শুধু তার ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
তবে পুতিন যে সে পথে হাঁটছেন না, তা পরিষ্কার। ২০০৮ সালে প্রথমে জর্জিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করার পর সম্প্রতি ক্রিমিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করেছে, মানে হারানো সাম্রাজ্যের একটি অংশ পুনরুদ্ধার করেছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা যে বলেছিলেন, কমিউনিজমের পতনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে, সেটা বোধ হয় শিগগির ঘটছে না। চীনের মতোই পুতিনের কর্তৃত্বপরায়ণ পুঁজিবাদ পশ্চিমের উদার গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, অথচ এই উদার গণতন্ত্রেরই জয় হওয়ার কথা ছিল।
পুতিনের দিক থেকে দেখলে ইউক্রেনে রাশিয়ার এই আগ্রহের যথেষ্ট কারণ আছে। পুতিন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জায়গায় রাশিয়ার নেতৃত্বে ইউরেশীয় ইউনিয়ন বানানোর কথা ভাবছেন, সে লক্ষ্যে ইউক্রেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি রাশিয়ার নেতারা ইউক্রেনকে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বাফার হিসেবে দেখে এসেছেন। জ্বালানি রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট, যে জ্বালানির ওপর ভর করে রাশিয়ার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে।
ইউক্রেনের পশ্চিমাভিমুখিতায় রাশিয়ার এই উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। পুতিন বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনের ২০০৪ সালের অরেঞ্জ রেভল্যুশনের পেছনে সিআইয়ের মদদ ছিল। ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের নির্বাচন জালিয়াতির যে প্রচেষ্টা ছিল, তার বিরুদ্ধে যে গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেটাতেও সিআইয়ের মদদ ছিল। কিন্তু আন্দোলনের ব্যাপকতা ও এর প্রতি পশ্চিমের সমর্থনের কারণে পুতিন সে সময় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেননি। ফলে সামরিক অভিযানে না গিয়ে পুতিন আর্থিক সহায়তা ও জ্বালানি রপ্তানির মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিজের প্রভাববলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। আর এবার পুতিন সামরিক অভিযানের পথ বেছে নিলেন। এ সিদ্ধান্তটি রাশিয়ায় বিপর্যয় বয়ে আনছে। পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞার কারণে যে হারে পুঁজি পাচার শুরু হয়েছে, সোভিয়েত পতনের পরপরই এমনটা দেখা গেছে, তারপর আর এমনটা হয়নি।
তদুপরি, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুবলের দ্রুত পতনের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, আর পুতিন পশ্চিমা খাদ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছেন। ফলে জনগণের জীবনমান নিচে নামবে, দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্নও হয়ে পড়বে তারা। এতে পুতিনের জনপ্রিয়তা কমে যাবে।
পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ দলবদ্ধ যুদ্ধের রূপ লাভ করেছে, আইনকানুনের কোনো বালাই সেখানে নেই, নিয়ন্ত্রণহীন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে, ফলে সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্য যেমন ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। জুলাইয়ের শেষের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শেষমেশ একটি সিদ্ধান্ত নিলেও এর ফলে আদতে এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশকে লেলিয়ে দেওয়ার সব ক্ষমতা পুতিনের হাতেই দেওয়া হলো, ডাচ এমইপি মারিয়েতজির মতে। এদিকে জিওফ ডায়ার বলেছেন, এই মালয়েশীয় বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আসলে এক ধন্দে পড়ে গেলেন— তিনি কি ইউরোপের সঙ্গে হাঁটবেন, নাকি সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেবেন।
ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে পশ্চিম যদি দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সেটা সজ্ঞানে চোখ বন্ধ করে থাকার শামিল। চীন রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ইউক্রেনের সংকটে নাক গলানোর বিষয়ে কিছু বলেনি বা সেটাকে অনুমোদন করেছে। ভারতেরও এ বিষয়ে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, চীন ভারতের কিছু ভূমিতে নিজেদের মালিকানা দাবি করে। কিন্তু এ নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখা যায়নি।
ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সেটা পুরোপুরি মর্মপীড়ক নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান দখল করে, তখন ভারত প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেনি। জাতিসংঘে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারে বারবার প্রস্তাব পেশ হলেও ভারত সেখানে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। অথচ অন্য জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো এতে সমর্থন দিয়েছে।
১৯৮০-এর শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান থেকে নিরাপদ ও সম্মানজনক বিদায়ের উপায় খুঁজছিল, তখন ভারতের আর কিছু বলার ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনেও ভারত কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
দুনিয়ার বিধিব্যবস্থার ভিত নড়ে গেলে পরাশক্তিগুলোর এরূপ নিশ্চুপ থাকা ঠিক নয়। উদীয়মান শক্তি যেমন
ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক সবারই উচিত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মৌলিক দিকগুলো রক্ষায় সোচ্চার হওয়া। তাদের ভেবে দেখা উচিত, এই ব্যবস্থার কারণেই তাদের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। তা না হলে দুনিয়ার মাতব্বরেরা যখন শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেবেন, তখন এই দেশগুলো হয়তো দেখবে যে তারা এক কলঙ্কজনক বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগও হয়তো সেদিন আর থাকবে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
যশবন্ত সিং: ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
No comments