ভারতের রাজনীতিতে ‘দাগি’ রুখতে প্রস্তুত খসড়া বিল
রাজনীতির অপরাধীকরণ রুখতে নতুন খসড়া বিল প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে যে সংশোধন আনতে চলেছে, তা কার্যকর হলে গুরুতর অভিযোগে অভিযোগপত্রভুক্ত রাজনীতিকেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। বুধবারই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে অপরাধীদের বাদ দেওয়া হবে কি না, তা ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীরাই। সংবিধান তাঁদের অপার ক্ষমতা দিয়েছে। দেশের স্বার্থেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের আশা। সুপ্রিম কোর্টের সংবিধান বেঞ্চের এই রায়ের পরই সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতির অপরাধীকরণ রুখতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করেছে। তা করার আগে আইন কমিশনের সুপারিশও নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলে খসড়া বিলটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তা পাস করানোর চেষ্টা হবে। খসড়া বিলে বলা হয়েছে, গুরুতর কোনো অপরাধে কোনো রাজনীতিকের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় এবং সেই অপরাধের শাস্তি যদি হয় অন্তত সাত বছর কারাবাস, তা হলে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সাজার পরবর্তী ছয় বছরও সেই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
অর্থাৎ, সাত বছরের কারাবাস ও ছয় বছরের নির্বাসন, মোট ১৩ বছর সংশ্লিষ্ট রাজনীতিককে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে হবে। আইন কমিশনের সুপারিশ ছিল পাঁচ বছর সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের এ আইনের আওতায় আনা। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় তা বাড়িয়ে সাত বছর করে। মন্ত্রণালয়ের অভিমত, গুরুতর অপরাধকেই এ ক্ষেত্রে গ্রাহ্য করা হচ্ছে। একমাত্র গুরুতর অপরাধেরই কম করে সাত বছর কারাবাস হয়ে থাকে। তা ছাড়া এই প্রথম অভিযোগপত্র ও অভিযোগ গঠনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগপত্রভুক্ত কোনো নেতা আদালতের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, সেটাই এই আইনের লক্ষ্য। মন্ত্রণালয়ের ধারণা, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের এই সংশোধন হলে রাজনীতির অপরাধীকরণে রাশ টানা সম্ভব হবে। দুর্নীতিবিরোধী লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনার সময় অনেকেই রাজনৈতিক চক্রান্তের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, প্রায় সব নেতাকেই নানাবিধ চক্রান্তের শিকার হতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষ রক্ষাকবচ থাকা জরুরি। এই বিল তৈরির সময় আইন মন্ত্রণালয় সেই রক্ষাকবচের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। খসড়া বিলে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক চক্রান্ত রুখতে শুধু সেই অভিযোগপত্রকে গ্রাহ্য করা হবে, যা ভোটের তারিখ ঘোষণার অন্তত ১৮০ দিন আগে পেশ করা হয়েছে। সরকার আরও ঠিক করেছে, কোনো সংসদ বা বিধায়ক যদি মিথ্যা হলফনামা দিয়ে নির্বাচনে জেতেন, তা হলে তাঁর নির্বাচনও খারিজ হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্রের কথায়, এই সুপারিশগুলো কার্যকর হলে নির্বাচন সংস্কারের পথে অনেকটাই এগোনো যাবে।
No comments