নারায়ণগঞ্জ-৫ উপনির্বাচন- ওসমান পরিবার বনাম পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি by তানভীর সোহেল ও আসিফ হোসেন
মাত্র তিন দিন পরই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের
উপনির্বাচন। এখানে নির্বাচন মানেই ওসমান পরিবারের সঙ্গে অন্যদের ভোটের
লড়াই। এবারও দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জের ভোটার ও
রাজনীতিবিদেরা।
২৬ জুন অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে এবার ওসমান পরিবারের প্রার্থী সেলিম ওসমান। সাংসদ শামীম ওসমানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সেলিম এ আসনে মনোনয়ন পেতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তঁার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বদলে শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেওয়ায় স্বেচ্ছায় দল থেকে পদত্যাগ করেন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই রাজনীতিক।
স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাঁরা ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ, তাঁরা সেলিম ওসমানকে সমর্থন দিচ্ছেন৷ অন্যদিকে ওসমান পরিবারবিরোধী আওয়ামী লীগের নেতা, স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং মেয়র আইভীর সমর্থকেরা আছেন এস এম আকরামের পক্ষে। বন্দর এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এবং সেখানকার সাবেক সাংসদ হওয়ার কারণে এলাকায়ও জনপ্রিয় আকরাম৷
জাতীয় পার্টির সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য হয়। বিএনপি ও জামায়াত এ নির্বাচন বর্জন করেছে৷ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দিয়ে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহর আওয়ামী লীগের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন,নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন আর সন্ত্রাস কিংবা কোনো পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে চান না। তাই তাঁরা সুযোগ পেলেই ওসমান পরিবারের বিপক্ষে রায় দেবেন। বিষয়টি বুঝতে পেরেই আওয়ামী লীগ এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। আবার এস এম আকরাম এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত৷ তিনি নির্বাচিত হয়ে এলে আওয়ামী লীগ সেটিকে স্বাগত জানাবে৷
স্থানীয় ভোটররা জানান, নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই ওসমান পরিবারের অঘোষিত রাজত্ব চলে আসছে। সাংসদ শামীম ওসমানের কারণে এ পরিবারটি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। নারায়ণগঞ্জে গুম, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে এই পরিবারের নাম জড়িয়ে আছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ওই পরিবারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচন করেন। তখন এস এম আকরাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা প্রকাশ্যে আইভীর পক্ষে অবস্থান নেন৷ এ অবস্থায় এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে আইভীর কাছে হেরে যান শামীম ওসমান।
এবার ত্বকী হত্যাকাণ্ড এবং সর্বশেষ সাত খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওসমান পরিবার আরও বেশি বিতর্কিত৷ দুটো ঘটনাতেই ঘুরে-ফিরে এই পরিবারের নাম এসেছে৷
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, মেয়র হওয়ার কারণে আইভী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। তবে তঁার পুরো সমর্থন রয়েছে আকরামের প্রতি৷
সেলিম ওসমান প্রথম আলোকে বলেছেন, নির্বাচন করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। জনগণের চাপে তিনি প্রার্থী হয়েছেন৷
এস এম আকরাম বলেন,‘জনগণ সন্ত্রাসের পক্ষে নেই। এ জন্যই তাঁরা আমাকে ভোট দিয়ে শান্তির পক্ষেই তাঁদের অবস্থান জানাবেন। আর এ এলাকার সাংসদ হিসেবে আমার ভূমিকা মানুষ জানে। কাজেই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আশাবাদী।’
২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো এবারের উপনির্বাচনও বর্জন করেছে বিএনপি। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন, ওসমান পরিবারের কেউ এখানে নির্বাচিত না হোক। আর তাই ভোট বর্জন করলেও নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে না। অবশ্য স্থানীয়ভাবে একটি কথা প্রচলিত আছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার ওসমান পরিবারের কথায় চলেন৷ তিনি দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি৷ জেলা বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাঁকে সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে৷
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল প্রথম আলোকে বলেন, -তাঁরা কোনো সন্ত্রাসের পক্ষে থাকবেন না। সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত এমন কাউকে ভোট দেবেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা৷
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, এস এম আকরাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়েছেন৷ সরকারের অতিরিক্ত সচিবও ছিলেন। তঁার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
অন্যদিকে সেলিম ওসমান উচ্চমাধ্যমিক পাস। তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা ফৌজদাির মামলার কার্যক্রম বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে৷ এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ থানায় দায়ের করা তিনটি ফৌজদারি মামলার মধ্যে দুটি রাষ্ট্রীয় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, একটিতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। তঁার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় করা অস্ত্র মামলাটিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷
No comments