হাসিনা কেন বোরকা পরে সীমান্তে গিয়েছিলেন-খালেদা জিয়া by কাজী সুমন ও আবদুল হালিম
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডে শেখ হাসিনা জড়িত এমন অভিযোগ তুলেছেন
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর
উদ্দেশে প্রশ্ন করে বলেছেন, আপনি দেশে আসার ১৩ দিন পর জিয়াউর রহমান শহীদ
হলেন। তাহলে নিশ্চয় কোন কারণ আছে। জিয়ার জানাজায় এত বেশি লোক হয়েছিল, তা
ইতিহাস হয়ে আছে। কেন সেদিন আপনি বোরকা পরে সীমান্তে পালাতে চেয়েছিলেন?
আপনাকে প্রশ্ন করবো, তাহলে কি আপনার মধ্যে ভয় ছিল? আমি এসব বলি না। আপনি
বলেছেন- তাই বলেছি। উত্তরাঞ্চল সফরে গতকাল বিকালে জয়পুরহাটের রামদেও বাজিলা
সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যে বলেন- জিয়া নাকি তাকে দেশে আসতে
দেয়নি। কিন্তু জিয়াউর রহমানই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। তার বাড়িঘরে থাকার
ব্যবস্থা করেছেন। জিয়াউর রহমানই আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম দিয়েছেন। তিনি
বলেন, জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে
স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আর আওয়ামী লীগ হলো সীমান্ত
পাড়ি দেয়া মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দল বিএনপি। জিয়াউর রহমান
মানুষের জন্য আন্দোলন করেছেন। মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। সকলকে নিয়ে একসঙ্গে
খাল কেটেছেন। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন।
‘ঈদের পর সব ধরনের কর্মসূচি আসবে’
তুমুল বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তৃতা চলাকালে কর্মী-সমর্থকরা কর্মসূচি ঘোষণার জন্য স্লোগান দিতে থাকলে খালেদা জিয়া সবাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যখন আন্দোলনে নামতে চাই, তখন ভয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। এবার ঘরে আটকে রাখতে পারবে না। দাবি না মানলে ঈদের পর জোরেশোরে আন্দোলন করে এ খুনি-অত্যাচারী সরকারকে সরাবো। ঈদের পর কর্মসূচি দেবো। কর্মসূচি দিলে কি আপনারা রাস্তায় নামবেন? আমিও আপনাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে থাকবো। আমাকে বাড়িতে বন্দি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। বাধা দিলে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগসহ সব ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৯ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা সকল দলকে আহ্বান জানাই। বাম-ডান, বড়-ছোট সবাই বলছি। আসুন আমরা দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই। দেশ রক্ষার জন্য কাজ করি। প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে হবে। দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তির জন্যই আমরা বলেছিলাম, ‘দেশ বাঁচান, মানুষ বাঁচান’। তিনি বলেন, দেশের সব মানুষ বর্তমান অবৈধ সরকারের হাত থেকে বাঁচতে চায়। নিজেদের জীবন রক্ষা করতে চায়। আপনারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশ ভাইকে বলবো, আপনারা এদেশের সন্তান। অযথা সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালাবেন না। গুলি চালালে এর দায় এড়াতে পারবেন না।
‘বিরোধী দলের নই, আমি জনগণের প্রতিনিধি’
সমাবেশে উপস্থিত জনতাকে খালেদা জিয়া প্রশ্ন রাখেন, আজকে দেশে কোন বৈধ সরকার আছে? সবাই সমস্বরে জবাব দেন, ‘না’। ফের প্রশ্ন রাখেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে গেছিলেন? উত্তর আসে ‘না’। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জবরদখলকারী সরকার। বিদেশীরা বলে দশম জাতীয় নির্বাচনে কোন নির্বাচন হয়নি। সে জন্যই এই সরকারকে কেউ সমর্থন দেয়নি। তাই সরকার আমাদের বলে তাদেরকে বৈধতা দিতে। বৈধতা দেয়ার মালিক আমরা নই। জনগণ। জনগণ সেদিন ভোট দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমি সরকারি দলের কিংবা বিরোধী দলের প্রতিনিধি নই। আমি জনগণের প্রতিনিধি। ৯৫ ভাগ জনগণ আমার সঙ্গে আছে। বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ দল। তাই আলোচনা আমাদের সঙ্গেই করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, হয়নি। তারা জানে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিলে কি পরিণতি হবে। উপজেলার প্রথম পর্বে কিছুটা নিরপেক্ষ হওয়ায় আমরা বিপুল জয় পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম পর্বে এমন কারচুপি করলো, যে তারা জনমত ছিনিয়ে নিলো। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। পাশের দেশের নির্বাচনেও সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তনে তারা নার্ভাস হয়ে গেছে। আমরা চাই প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক। আর এজন্য আরও দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তারা আবোল-তাবোল কথা বলছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণ তো আপনাদের ভোট দেয়নি। তাই আপনারা জনপ্রতিনিধি নন। এ নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। তাই এটা কোন নির্বাচন হয়নি। ৫ই জানুয়ারির ভোটে দেশের জনগণ অংশ নেয়নি। তাই সবার সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারে। আমরা সেই ভোট চাই। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তন হতে পারে একমাত্র ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, দেরি না করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে মানুষের সে দাবি পূরণ করুন। দেখুন জনগণ কাদের সঙ্গে আছে।
‘হাসিনা গডফাদারের মা’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গডফাদারের মা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমানের পরিবারকে হাসিনা রক্ষা করতে চান। জয়নাল হাজারীর ভাগিনা নিজাম হাজারীকে সমর্থন দেন। লক্ষ্মীপুরের তাহেরকে সমর্থন দেন। তাহলে বুঝতে হবে গডফাদারের মা যদি জোর করে ক্ষমতায় থাকে, তাহলে বাংলাদেশের মঙ্গল কোনভাবে হবে না। আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত। এরা খুনি। যাদের হাতে মানুষের রক্ত, তাদের হাতে দেশের মানুষে ভাল থাকতে পারে না। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা গু-ামিতে নেমেছে। রাজশাহীতে একজন শিবিরের ছেলেকে পায়ে গুলি করে পা কেটে নিয়ে গেছে। ক’দিন আগে মিরপুরে বিহারিদের ঘরে তালা লাগিয়ে মা, বাচ্চাসহ ৯ জনকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। সেই তথাকথিত এমপিকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো সাধারণ বিহারিদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে কোন ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়। তারা নিরীহ-নিরস্ত্র আলেমদের ওপর মধ্যরাতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। হিন্দুদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বলে, যা-ই করি না কেন- তারা আওয়ামী লীগের বাইরে যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুদের মেয়েরা ধর্ষিত হয়, তাদের বাড়িঘর দখল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হয়। হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুর ও লুট হয়। এমনকি বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরাও এ সরকারের আমলে নিরাপদ নয়। কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের উপর হামলা, বাড়িঘর লুট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। হিন্দু ভাইয়েরা বলেছে, তারা আগে ভুল বুঝেছিল। তারা বিএনপির সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। আমরাও ভবিষ্যতে তাদের পাশে থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। তাই সবাইকে বলবো, আপনারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। শান্তিতে থাকবেন। কারণ আমরা সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুতে বিশ্বাস করি না। আমরা সবার প্রতি সমান আচরণ করি। আমরা সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই দেখি। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে নারী সমাজ অনেক উন্নতি করেছে। এ গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্যোক্তা ভাল কাজ করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এজন্য আমাদের গৌরবান্বিত হওয়া উচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগ এ রকমের একটি লোককে পর্যন্ত অপমান করে, অসম্মান করে। আর আমরা ভাল মানুষের সম্মান ফিরিয়ে দেব। বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক ফিরিয়ে দেয়া হবে। গ্রামীণ ব্যাংকে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
‘মানুষ খুনের জন্য হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে’
জয়পুরহাটের সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ খুনের জন্য শেখ হাসিনাকে জবাবদিহি করতে হবে। দেশ এখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দলের (বিএনপি) ৩১০ জনকে হত্যা করেছে, ৫৬ জনকে গুম করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকার এবং সরকারের বাহিনী। এই র্যাবকে আমরা গড়েছিলাম জঙ্গি দমনে। আমাদের আমলে র্যাবে ভাল ভাল অফিসার নিয়োগ দিয়েছি। কোন আত্মীয়তা বা দলীয় লোক দিইনি। সে সময় র্যাব বড় বড় জঙ্গি ধরেছে। এই সরকার জঙ্গি তো ধরতেই পারেনি উল্টো গ্রেপ্তারকৃতরাও গাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন- কিভাবে নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাটে গুম-খুন করা হচ্ছে। ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম সহ অনেক মানুষকে হত্যা করেছে র্যাব। র্যাবকে আওয়ামী লীগ রক্ষী বাহিনী বানিয়ে ফেলেছে। র্যাবে জিয়া আছে, তারেক সাঈদ আছে, ওরা হত্যাকারী। নাম না জানা অনেকে চুপচাপ ঘাপটি মেরে আছে। এই র্যাব আর প্রয়োজন নেই। র্যাব বাতিল করতে হবে। র্যাব বিলুপ্ত করে প্রয়োজনে নতুন সংগঠন তৈরি করা হবে। গুম-হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিচার করতে হবে।
‘তত্ত্বাবধায়ক কেন তবে বৈধ নয়’
আদালতের প্রতি প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪জন নাকি বৈধ। ১৫৪ জন যদি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়, তাহলে জনগণের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১১ জন অনির্বাচিতদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে কেন? তারা তো কোন আইন পাস করবে না। দৈনন্দিন কাজ আর নির্বাচন করবে। খালেদা জিয়া বলেন, ১৫৪জন ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। ভোট ছাড়া কি জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়। তাই মোজাহার-ই এখনও আপনাদের এমপি। কারণ আগের পার্লামেন্ট বাতিল হয়নি। তিনি বলেন, বিচারকরা নিজেদের মতো রায় দিতে পারছেন না, আওয়ামী লীগ তাদের ইচ্ছেমতো রায় দিতে বাধ্য করছে। এখন দেশে দুই রকমের বিচার। বিরোধী দল হলে এক রকমের, আওয়ামী লীগের হলে অন্যরকম। এক দেশে দুই রকমের বিচার চলতে পারে না। বিদেশীরাও বিচার ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহর পরে বিচারকরা। আপনারা নিরপেক্ষ বিচার করুন। আপনারা নির্ভয়ে নিরপেক্ষ বিচার করুন, যাতে সাধারণ মানুষ কোন রকম হয়রানির শিকার না হয়।
‘আওয়ামী লীগ সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে’
সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, এ আওয়ামী লীগ একটা দুর্নীতিবাজ সরকার। আওয়ামী লীগ জনগণের টাকা চুরি করে আত্মসাৎ করেছে। তারা পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চুরি করেছে। অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিতে নিতে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার পথে। কাগজে বের হয়েছে সুইস ব্যাংকে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে রাখা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। নিরপেক্ষ তদন্ত করে সুইস ব্যাংকে কার টাকা এবং কারা টাকা পাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, দুদক সাহেবকে বলছি? আপনারা কি এক চোখা, আপনারা এখন দেখছেন না কেন? এই টাকা কাদের, কারা এত টাকা রেখেছেন। আমরা জানতে চাই- দুদক কেন শুধু বিএনপিকে দেখে তারা আওয়ামী লীগকে কেন দেখে না। তারা কি চোখ বন্ধ করে আছে? মিথ্যা মামলা দিয়ে কেবল বিএনপিকে হয়রানি করছেন। চোখ দু’টি খুলে রাখেন। আওয়ামী লীগের যারা টাকা পাচার করেছে, তাদের ধরেন। তিনি বলেন, ফরমালিনের নামে কৃষকের ফল ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ দেশে ফরমালিন আমদানি করছে শেখ হাসিনা। তাকে ফরমালিন আমদানির জন্য ধরা উচিত। বিএনপিকে নাকি ফরমালিন দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে হাসিনা। তিনি বলেন, এইভাবে আম নষ্ট না করে নোটিশ দিয়ে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এভাবে বাংলাদেশের আম নষ্ট করে বিদেশীদের আম যাতে আমাদের বাজারে আসে, সেটার ব্যবস্থা করছে।
‘বিদেশী বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ করবো’
১৯দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ও লুটপাটের কারণে কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী এদেশে আসে না। দেশের এখন বিদেশী বিনিয়োগ নেই। এদেশের যারা বিনিয়োগকারী তারাও ভয়ে এদেশে বিনিয়োগ করে না। আমি বিদেশীদের বলবো- বিএনপির নেতৃত্বে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করবো। আওয়ামী লীগ সরকার গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তা কিছুই দিতে পারে না। আমরা সেগুলোর নিশ্চিত করব। আমরা বিদেশীদের নিশ্চয়তা দেবো। তিনি বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো। প্রতিটি জায়গায় শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা করবো। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। জয়পুরহাটবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ভারি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আপনার এখানে এসেছেন। আপনাদের দেখে আমি সাহস পাচ্ছি। এই জয়পুরহাটে সরকার পতন আন্দোলনে ১২ জন শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন। তাদের অনেককে আমরা আর্থিক সহযোগিতা করেছি। আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সাহসি ভূমিকা রাখার জন্য জয়পুরহাটবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ, আসাদুল হাবিব দুলু, ড্যাব নেতা ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জয়পুরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সদর পৌর মেয়র আজিজুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের ঢল
বগুড়া থেকে রওনা দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যখন শিবগঞ্জ পেরিয়ে জয়পুরহাটে পৌঁছায়, তখনো মুষলধারায় বারিপাত হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে পঞ্চশ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে স্থানে স্থানে বৃষ্টিসিক্ত নারী-পুরুষের বিপুল উপস্থিতি আর তাদের স্লোগান মুখরতা বর্ষার শব্দকে ছাপিয়ে যায়। খালেদা জিয়া জমায়েতগুলোতে বক্তৃতা দিতে না পারলেও গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি জয়পুরহাটে পৌঁছে সরাসরি সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত হন। তখন জনসভা মাঠে ঢেউ খেলছিল হাঁটু সমান পানি। তবুও মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনায় কমতি ছিল না। যবুথবু মানুষ পানিতে দাঁড়িয়ে, আশপাশের দোকানপাট, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে যেখানে পেরেছে, সেখানে অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তৃতা শুনেছে। তার আগমন উপলক্ষে জয়পুরহাটকে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। খালেদা জিয়া সমাবেশ শেষে স্থানীয় সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নেন এবং নামাজ আদায় করেন। পরে রাতে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর আগে দুপুরে বগুড়া সার্কিট হাউজে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। সেখানে তিনি গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে নিহত যুবদল নেতা ইউসুফ আলীর পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা সহায়তা দেন।
@কাজী সুমন ও আবদুল হালিম, >>>জয়পুরহাট
No comments