ভিডিও ফুটেজে বিহারি ক্যাম্পে হামলার দৃশ্য by রুদ্র মিজান
সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে ৯
জনকে হত্যা করা হয় রাজধানীর কুর্মিটোলা ক্যাম্পে। গুলি করে হত্যা করা হয়
একজনকে। এসময় লাঠিসোটা দিয়ে বেদম প্রহার করা হয় মুহাম্মদ যশো (২৩)-কে।
ঘটনার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্যাম্পের বাসিন্দারা
জানিয়েছেন। ১৪ই জুনের সকালের সেই নৃশংস হামলার ঘটনায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি
বিহারিদের। আদৌ তারা এ ঘটনার বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মিরপুরের লালমাটি ও বাউনিয়াবাদ এলাকার
যুবলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালান ক্যাম্পে। এসময় মুহাম্মদ যশোকে
রাস্তায় পেয়ে তাকে নৃশংসভাবে মারধর করে তারা। হামলার দৃশ্য ধারণ করা ভিডিও
চিত্রে দেখা গেছে, হামলাকারীদের একজন যশোর কাছে জানতে চায়, তুই বাইরে কেন?
বাইরে কি করছিস্? যশো তাদের জানান, তিনি সওদা কিনতে বের হয়েছেন। এসময় তিনি
বিহারি কিনা জানতে চায় হামলাকারীরা। ‘হ্যাঁ’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মারধর
শুরু করা হয়। সশস্ত্র যুবলীগ কর্মীদের বেদম পিটুনিতে তার মাথা ফেটে রক্তে
পুরো শরীর ভিজে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকেন যশো। হাত-পা নাড়াতে পারেন না।
টেনেহিঁচড়ে নেয়ার কারণে তার রক্তমাখা শার্ট-প্যান্টে ময়লা লাগে। এসময় প্রাণ
বাঁচানোর জন্য বারবার হামলাকারীদের কাছে আকুতি জানান তিনি। ক্যাম্পের
সামনে কালশী নতুন সড়কে তাকে মারধর করা হয়। প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানানোর
সময় নীল পাঞ্জাবি পরা এক যুবক যশোকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তাদের সঙ্গী অন্য
যুবক তাকে উদ্দেশ্য করে করে, এই সুজন আর মারিস্ না। কিন্তু এই সুজনসহ
হামলাকারী কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও পুরো মুখ
কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় কয়েকজন হামলাকারীকে ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে। গতকাল
দুপুরে যশোদের বাসায় গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিহারি ক্যাম্পে হামলা ও
অগ্নিসংযোগের ভিডিও স্থানীয়দের মাধ্যমে বিহারিদের হাতে এসেছে। এছাড়া,
স্থানীয়ভাবেও ওই ভিডিও এক হাত থেকে অন্য হাতে যাচ্ছে। ঘটনার প্রায় পুরোটাই
মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন অনেকে। একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায় হামলাস্থলের
একেবারে কাছে থেকেই ওই ভিডিও করা হয়।
>> ১৪ই জুন বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা যশোকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে যুবলীগ কর্মীরা, ঘটনার দিন থেকেই যশোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
ক্যাম্পের
বাসিন্দা আবদুল গফুর জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে যশোকে পাওয়া যাচ্ছে না।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউজ্জামান জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের
জানা নেই। আতঙ্কের কারণে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে এখন মুখ খুলতে চাচ্ছেন
না ক্যাম্পের বাসিন্দারা। ক্যাম্পের বাসিন্দা মুহাম্মদ আজম জানান,
সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে অনেকে ভয় পেয়েছেন। পুলিশ মুখে তাদের অভয় দিলেও
বাস্তবে দায়েরকৃত ৬ মামলার কোন মামলাতেই হামলাকারী কাউকে আটক করা হয়নি। তাই
পুলিশের প্রতিও আস্থা পাচ্ছেন না তারা।
হামলাকারীরা কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের অর্ধশত দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, পুলিশের সঙ্গেই সশস্ত্র যুবলীগ কর্মীরা হেঁটে যাচ্ছে। কালশী মোড় থেকে পুলিশের সঙ্গে লাঠি, রামদা নিয়ে হেঁটে হেঁটে হামলাকারীদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
এসময় কালশী মোড়ে ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান। সাঁজোয়া যান এবং ওই মোড় থেকে পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছিল। অন্যদিকে ক্যাম্পের নতুন সড়ক সংলগ্ন সুরাইয়া হেয়ার সেলুন, ফয়সাল ইলেকট্রনিক্সে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা রামদা দিয়ে দোকানের শাটার কাটে। একই ভাবে রাস্তার অন্যপাশে কুর্মিটোলা নতুন ক্যাম্পের বিভিন্ন দোকানেও তারা লুটপাট করে। ‘বিহারিদের সাহস বেশি বেড়ে গেছে। আজ শেষ করে দেবো।’ এরকম নানা বাক্য বলতে বলতে ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যায় হামলাকারীদের এক দল।
ওই সময়ে কিছু যুবককে আগুন লাগাতে দেখা যায়। আগুন জ্বলে সুরাইয়া হেয়ার সেলুনের পাশে ও ইয়াছিন আলীর ঘরে। এসময় ক্যাম্পবাসীদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে হামলাকারীরা। আগুনের ধোঁয়ায় তখন অন্ধকার দেখায় ক্যাম্পের মূল সড়ক। ক্যাম্পের ভেতর থেকে তখন নারীদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সঙ্গে আগুন, আগুন ও ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। কিন্তু কাউকে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, হামলার প্রাক্কালে পুলিশই তাদের ঘরের ভেতরে যেতে বাধ্য করেছে। বিহারিরা পুলিশের কথামতো দরজা বন্ধ করে ঘরে ছিল। এসময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ইয়াসিন আলীর ঘরের বাইরে তালা দিয়ে আগুন দিয়ে ৯ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহজাদী অভিযোগ করেন, অগ্নিসংযোগে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পল্লবী থানার এসআই রফিকও অংশ নিয়েছে। দাউ দাউ করে যখন ক্যাম্পে আগুন জ্বলছিল তখন আর বসে থাকতে পারেননি কুর্মিটোলা নতুন ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহাজাদী ও সালমি। পাশের বাইতুর রহমত জামে মসজিদের মাইকে সালমি ক্যাম্পবাসীকে সাবধান করে বলেন, তামাম মেহেজরিনকো আগা কিয়া জাতা হ্যায়। হামারি ক্যাম্প মে হামলা হুকো ক্যা হ্যা। আপছাব ঘর দে বাহারা হ্যা।
কিন্তু বেশিক্ষণ তিনি ঘোষণা দিতে পারেননি। পুলিশ এসে তার মাইক কেড়ে নিয়ে যায়। শাহজাদীকে এসময় লাঞ্ছিত করেন পল্লবী থানার এসআই জহির। মাইকে ঘোষণার কারণে বিহারিরা অনেকেই সচেতন হয়ে যান। নতুবা আরও প্রাণহানি ঘটতো বলে মনে করেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা। মাইকে ঘোষণা শুনে এগিয়ে যান আজাদ। আগুন নেভানোর জন্যই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন বলে জানান ক্যাম্পের বাসিন্দা রানা। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মুহাম্মদ আজম জানান, হামলাকারীরা অর্ধশত দোকানের শাটার রামদা দিয়ে কেটে লুটপাট করেছে। আয়েশা বেগমসহ অনেকের ছাগল পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। ঘণ্টাব্যাপী এই হামলার ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হামলাকারীদের বেশির ভাগের বয়স ৩০ বছরের কম। তাদের অনেকের পরনে জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি। কারও কারও মাথায় টুপি। এমনকি লুঙ্গি পরেও কিছু লোককে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
এই হামলার ৮ দিন অতিবাহিত হলেও বিহারিদের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে দু’টি ও পুলিশের আস্থাভাজন লোককে বাদী সাজিয়ে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলাতে নির্যাতিত বিহারিদেরই আসামি করা হয়েছে। সমপ্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ বিহারিদের জানান, নিহতের পরিবার বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে। ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যের পরও হুমকি-ধমকির কারণে আতঙ্কে রয়েছেন বিহারিরা। উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক শাহীদ আলী বাবলু জানান, আতঙ্কের কারণে মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। এই আতঙ্ক কেটে যেতো যদি সরকারের কোন প্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতেন।
হামলাকারীরা কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের অর্ধশত দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, পুলিশের সঙ্গেই সশস্ত্র যুবলীগ কর্মীরা হেঁটে যাচ্ছে। কালশী মোড় থেকে পুলিশের সঙ্গে লাঠি, রামদা নিয়ে হেঁটে হেঁটে হামলাকারীদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
এসময় কালশী মোড়ে ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান। সাঁজোয়া যান এবং ওই মোড় থেকে পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছিল। অন্যদিকে ক্যাম্পের নতুন সড়ক সংলগ্ন সুরাইয়া হেয়ার সেলুন, ফয়সাল ইলেকট্রনিক্সে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা রামদা দিয়ে দোকানের শাটার কাটে। একই ভাবে রাস্তার অন্যপাশে কুর্মিটোলা নতুন ক্যাম্পের বিভিন্ন দোকানেও তারা লুটপাট করে। ‘বিহারিদের সাহস বেশি বেড়ে গেছে। আজ শেষ করে দেবো।’ এরকম নানা বাক্য বলতে বলতে ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে যায় হামলাকারীদের এক দল।
ওই সময়ে কিছু যুবককে আগুন লাগাতে দেখা যায়। আগুন জ্বলে সুরাইয়া হেয়ার সেলুনের পাশে ও ইয়াছিন আলীর ঘরে। এসময় ক্যাম্পবাসীদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে হামলাকারীরা। আগুনের ধোঁয়ায় তখন অন্ধকার দেখায় ক্যাম্পের মূল সড়ক। ক্যাম্পের ভেতর থেকে তখন নারীদের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সঙ্গে আগুন, আগুন ও ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। কিন্তু কাউকে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, হামলার প্রাক্কালে পুলিশই তাদের ঘরের ভেতরে যেতে বাধ্য করেছে। বিহারিরা পুলিশের কথামতো দরজা বন্ধ করে ঘরে ছিল। এসময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ইয়াসিন আলীর ঘরের বাইরে তালা দিয়ে আগুন দিয়ে ৯ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহজাদী অভিযোগ করেন, অগ্নিসংযোগে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পল্লবী থানার এসআই রফিকও অংশ নিয়েছে। দাউ দাউ করে যখন ক্যাম্পে আগুন জ্বলছিল তখন আর বসে থাকতে পারেননি কুর্মিটোলা নতুন ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহাজাদী ও সালমি। পাশের বাইতুর রহমত জামে মসজিদের মাইকে সালমি ক্যাম্পবাসীকে সাবধান করে বলেন, তামাম মেহেজরিনকো আগা কিয়া জাতা হ্যায়। হামারি ক্যাম্প মে হামলা হুকো ক্যা হ্যা। আপছাব ঘর দে বাহারা হ্যা।
কিন্তু বেশিক্ষণ তিনি ঘোষণা দিতে পারেননি। পুলিশ এসে তার মাইক কেড়ে নিয়ে যায়। শাহজাদীকে এসময় লাঞ্ছিত করেন পল্লবী থানার এসআই জহির। মাইকে ঘোষণার কারণে বিহারিরা অনেকেই সচেতন হয়ে যান। নতুবা আরও প্রাণহানি ঘটতো বলে মনে করেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা। মাইকে ঘোষণা শুনে এগিয়ে যান আজাদ। আগুন নেভানোর জন্যই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন বলে জানান ক্যাম্পের বাসিন্দা রানা। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মুহাম্মদ আজম জানান, হামলাকারীরা অর্ধশত দোকানের শাটার রামদা দিয়ে কেটে লুটপাট করেছে। আয়েশা বেগমসহ অনেকের ছাগল পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। ঘণ্টাব্যাপী এই হামলার ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হামলাকারীদের বেশির ভাগের বয়স ৩০ বছরের কম। তাদের অনেকের পরনে জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি। কারও কারও মাথায় টুপি। এমনকি লুঙ্গি পরেও কিছু লোককে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
এই হামলার ৮ দিন অতিবাহিত হলেও বিহারিদের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে দু’টি ও পুলিশের আস্থাভাজন লোককে বাদী সাজিয়ে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলাতে নির্যাতিত বিহারিদেরই আসামি করা হয়েছে। সমপ্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ বিহারিদের জানান, নিহতের পরিবার বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে। ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যের পরও হুমকি-ধমকির কারণে আতঙ্কে রয়েছেন বিহারিরা। উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক শাহীদ আলী বাবলু জানান, আতঙ্কের কারণে মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। এই আতঙ্ক কেটে যেতো যদি সরকারের কোন প্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াতেন।
No comments