সংবিধান সংশোধনে সমর্থন
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আমলের সংবিধান সংস্কারে সমর্থন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চিকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য পরিবর্তন আনতে সমর্থন দেবেন তিনি। সাবেক জেনারেল থেইন সেইন ২০১১ সালে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের নাটকীয় সংস্কারকাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এর ফলে তিনি আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
থেইন সেইন বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে বিতর্ক অনুষ্ঠান ক্রমবর্ধমানভাবেই ‘রাজনৈতিক পরিপক্বতা’ দেখাচ্ছে। মিয়ানমারের ইংরেজি সংবাদপত্র নিউ লাইট গতকাল তাঁর একটি বক্তব্য ছাপিয়েছে। এতে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সমাজের জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য সময়ে সময়ে একটি সুস্থ সংবিধানে অবশ্যই সংশোধনী আনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, সংবিধানের যেসব ধারায় কোনো ব্যক্তির স্বামী-স্ত্রী বা সন্তানসন্ততি অন্য কোনো দেশের নাগরিক হলে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাধা রয়েছে, সেগুলোয় সংশোধনী আনতে তিনি সমর্থন দেবেন। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির স্বামী একজন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ। তাঁদের দুই ছেলে ব্রিটিশ নাগরিক। মূলত সু চিকে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়া থেকে বিরত রাখতেই সংবিধানে ওই বিধান যুক্ত করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে। থেইন সেইন বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের নেতা হওয়ার অধিকারের পথে কোনো নাগরিকের সামনেই কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা থাকুক, তা আমি চাই না।’ থেইন সেইন আরও বলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় ‘সম্প্রীতি ঘটানোর চেষ্টা’ করেছেন। তবে তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন যে জনগণের দাবি যদি ‘বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোর ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি’ হয়, তবে তা দেশকে রাজনৈতিক অচলাবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে। ২০০৮ সালে অনুমোদিত সংবিধানে পরিবর্তন আনতে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন সু চি।
২০১৫ সালে দেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধানে পরির্বতন আনার বিষয়টিই এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কেননা, ওই নির্বাচনেই চূড়ান্তভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে, সামরিক বাহিনী আসলেই দেশের ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ানো থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছুক কি না। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পার্লামেন্টের মাধ্যমে। গত শনিবার সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জানায়, তারা ২০১৫ সালের নির্বাচন বর্জন করবে না। এমনকি সু চিকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতাসংবলিত ধারাটি সংবিধান থেকে বাদ না দেওয়া হলেও তারা নির্বাচন করতে পারে। মিয়ানমারে সামরিক শাসনের অধীনে দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দী ছিলেন সু চি। তবে ২০১০ সালে বিতর্কিত এক নির্বাচনের পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল সু চির দল। ওই নির্বাচনের পর দেশের দায়িত্ব নেওয়া থেইন সেইনের সরকার দেশে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ছিল ২০১২ সালের ঐতিহাসিক উপনির্বাচনে সু চি ও তাঁর দলকে আমন্ত্রণ জানানো। এএফপি।
No comments