নির্বাচন ও হরতাল
অবিরাম অবরোধসহ হিংসাত্মক আন্দোলনের মধ্যে ১৮-দলীয় জোটের ডাকা হরতাল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দুই বিবদমান পক্ষের রেষারেষির মধ্যে দেশের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। লাশের সংখ্যা বাড়ছে, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। কত মানুষ যে আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, সমাজ ও পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে, তার হিসাব নেই। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বিকার। গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক একতরফা ভোট ঠেকাতে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করেছেন। অথচ তিনি এই কর্মসূচি যাতে সহিংস না হয়, মানুষের ওপর জবরদস্তি করা না হয়, সে ব্যাপারে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেননি। ১৮-দলীয় জোট সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংস কর্মকাণ্ডের দায়ে কারও বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। যদিও তারা মুখে কদাচিৎ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের দোহাই দিয়ে থাকে। অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারা এবং তাঁদের নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র সব সহিংসতা ও নাশকতার দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দায়িত্ব এড়াতে সচেষ্ট। কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতি, এমনকি যুদ্ধের মধ্যেও নিরীহ নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রধান দায় রাষ্ট্রপরিচালকদেরই। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে,
সাম্প্রতিক সহিংসতায় হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার কী করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহের তথ্য সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। কিন্তু সেই দলীয় তহবিল থেকে সহিংসতায় হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতাসীনদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বহু মানুষের জীবন গেছে। আর একটি প্রাণহানিও ঘটতে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্র ও জনগণের হেফাজতকারী হিসেবে সরকারকে সেই দায়িত্বের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে ঐতিহ্য বাংলাদেশ সমাজের রয়েছে, তা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের মোকাবিলায়ও প্রত্যাশিত। দেশের মানুষকে মেরে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন বা সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের যে মহড়া যুযুধান দুই পক্ষ দিয়ে আসছে, অবিলম্বে তার অবসান হওয়া প্রয়োজন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হোক কিংবা তামাশার নির্বাচন প্রতিহত করার কর্মসূচি হোক, মানুষের জীবনকে তুচ্ছ করে এর কোনোটিই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে সব দলের কাছ থেকে স্পষ্ট অঙ্গীকার ও দলীয় নির্দেশনা দাবি করি। সরকারের কাছে যেমন আমরা মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই, তেমনি বিরোধী পক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালনের দাবি জানাই।
No comments