দুর্নীতি কতটা কমে সেটাই দেখার
লোকপাল বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এখন প্রশ্ন, দুর্নীতি রোধে কত দ্রুত ভারতে কেন্দ্রীয় স্তরে লোকপাল ও রাজ্য স্তরে লোকায়ুক্ত গঠিত হবে। আরও দ্রষ্টব্য, লোকপাল গঠনের পর দেশে দুর্নীতির বহর কতটা কমে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বুধবার লোকপাল বিলে সই করেন। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সংসদে বেশ কিছু সংশোধনীসহ বিলটি পাস হয়। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর আইন মন্ত্রণালয় বিলটি আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া শেষ করবে। তারপর গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। লোকপাল আইন প্রণীত হওয়ার পর এক বছরের মধ্যে রাজ্য স্তরে লোকায়ুক্ত নিযুক্ত করার কথা। লোকপালের বহর ও তার নিযুক্তি কীভাবে হবে, বিলে সে কথা নির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। লোকপালের প্রধান ও তার বাকি আট সদস্যকে নিযুক্ত করা হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী নেতা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ—এই পাঁচজন নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সহমতের ভিত্তিতে প্রধান লোকপাল ও বাকি আট সদস্যকে মনোনীত করবেন। প্রধান লোকপালকে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি হতে হবে। বাকি সদস্যদের মধ্যে চারজনকে সুপ্রিম কোর্ট অথবা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি হতে হবে। এই আটজনের মধ্যে চারজনকে আবার নিযুক্ত করতে হবে সংখ্যালঘু, মহিলা, তফসিল জাতি-উপজাতি ও অনগ্রসরদের মধ্য থেকে।
একবার নিয়োগ হয়ে গেলে সরকার ইচ্ছামতো লোকপাল বা তার সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে না। সাংবিধানিক পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যেভাবে অভিসংশন (ইমপিচ) করতে হয়, তেমনভাবেই সরাতে হবে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এমনকি এ দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলন করা খোদ আন্না হাজারে এই লোকপালকে সমর্থন জানালেও আম আদমি পার্টি (এএপি) কংগ্রেস-বিজেপির এই যৌথ উদ্যোগে সায় দেয়নি। এএপি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল একসময় আন্না হাজারের সঙ্গে মিলে এ নিয়ে আন্দোলন করেছেন। কেজরিওয়াল ‘টিম আন্না’ ছেড়ে এএপি গঠনের পর থেকেই বলে আসছেন, এই বিলে দেশের দুর্নীতি দূর হবে না। তাঁরা ক্ষমতায় এলে নিজেদের মতো করে জন লোকপাল বিল প্রণয়ন করবেন। বর্তমানে লোকপাল বিলে প্রভাবশালী তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে সরকারের আওতায় রাখা হয়েছে। লোকপালের পাঠানো অভিযোগের তদন্তে সিবিআইয়ের যাঁরা নিযুক্ত হবেন, তদন্ত শেষ না হলে তাঁদের বদলি করা যাবে না। কেজরিওয়ালদের জন লোকপালে সিবিআইকে সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন করার দাবি জানানো হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁরা সিটিজেন্স চার্টার ও হুইসল ব্লোয়ার (গোপন তথ্য ফাঁসকারী) বিলও পাস করানোর দাবি জানিয়েছিলেন। পাস হওয়া বিলে তা অনুপস্থিত। তবে রাহুল গান্ধী সম্প্রতি দুর্নীতি রোধে অন্য বিলগুলোও আনার একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য সংসদের আগামী অধিবেশনের দিকে তাকিয়ে না থেকে রাহুল অধ্যাদেশ জারির জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
No comments