ডেটলাইন ২৫শে অক্টোবর: সর্বনাশের সঙ্কেত? by মাহফুজ পারভেজ
একটি দৈনিকে আলী রীয়াজ [ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে পাবলিক পলিসি স্কলার, উড্রো
উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারস, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র]
লিখেছেন:
‘‘রোজ কেয়ামত হলেও নির্বাচন হবে’ বলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের সঙ্গে আক্ষরিকভাবে একমত হওয়ার অবকাশ নেই। তবে তাঁর এ বক্তব্যের মর্মবস্তু বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না; সরকারি দল বিরোধী দলের সঙ্গে কোন রকম আপসের কথা বিবেচনা করবে না, যেভাবেই হোক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারি দলের নেতারা, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী সংকল্পবদ্ধ। অন্যদিকে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন যে তাঁরা নির্বাচন প্রতিহত করবেন। এসব বক্তব্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ২৫শে অক্টোবরের পর সরকারের কাজ দৈনন্দিন দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকের মনেই প্রশ্ন, ২৫শে অক্টোবরের পর পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?’’ বিরোধী দলও ২৫শে অক্টোবরের পর তাদের শক্তির প্রমাণ দেবে মর্মে হুঙ্কার দিচ্ছে। আজকের (গতকাল) প্রিন্টেড মানবজমিন-এ এদিকে, বৃটেনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ফ্ল্যাউড ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়াল পুশ বাংলাদেশ টু দ্যা এ্যাজ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের পরিচিত ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। কিন্তু শেষ দুই দশকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এই সময়ে অপুষ্টি, শিশু মৃত্যুর হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, বেড়েছে সাক্ষরতা এবং জীবনযাত্রার মান। এইসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম দেশ বাংলাদেশ- চীন এবং ইতালির সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। যদিও গার্মেন্ট কারখানায় আগুন এবং ভবন ধসের ঘটনায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের খ্যাতি নষ্ট হয়েছে। ভবন ধসের ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক মারা যায়। যদিও রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্জন আজ হুমকির মুখে। বিশেষত বিরোধীদের দমনে, তাদের ফাঁসি দিতে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগের সংকল্পের কারণে বাংলাদেশে অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাইব্যুনাল তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সন্দেহ নেই, সর্বত্র প্রশ্ন আর সংশয়। বাংলাদেশে চলমান সবকিছু দেখে-শুনে কি কেউ বলতে পারবে পুরো পরিস্থিতি ও বিচিত্র ঘটনা প্রবাহ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? মানুষ ও সমাজকে আসলে কোনদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আসলে কি হবে ২৫শে অক্টোবরের পর? অর্থাৎ সংঘাত, সমঝোতার কথা বলতে বলতে সকলেই মুখে ফেনা তুলে ফেললেও সেটা হয় নি। এমন কি, সঙ্কট সম্পর্কে দায়িত্বপূর্ণ কথাবার্তা বা সংলাপ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে পারে নি। পরিণামে আমরা সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছি। এখন ১৫ দিন বাদের ২৫শে অক্টোবরকে দিন ধার্য করে ক্ষমতার দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল, সুশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়মতান্ত্রিক পথচলা সর্বনাশা ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, ২৫শে অক্টোবরের পরেই সেটা জানা যাবে। সেই জানাটা সুখকর না দুঃখজনক হবে, সেটা নিয়েও ভরপুর আশঙ্কা বিদ্যমান। প্রসঙ্গত সর্বনাশ নিয়ে একটি আপ্ত বাক্য স্মরণ করা যেতে পারে। সুপ্রাচীন পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা বলেছিলেন, ‘সর্বনাশ সমুৎপন্ন হলে অর্ধেক ত্যাগ করে বাকি অর্ধেক রক্ষা করতে হয়।’ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রাজ্ঞ নেতারা নিশ্চয়ই প্রাচীন নীতি-কাহিনী ‘পঞ্চতন্ত্র’ জানেন। কিন্তু তাঁরা বোধ করি সুকুমার রায়ের শ্লেষাত্মক ছড়াও পড়েছেন। ফলে বলা যায়, রাজনীতিবিদগণ এই সত্যও অবগত আছেন যে, ব্যাকরণ শিংয়ের সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়ে ফেললে বাকি আধখানা মরে যায়। অর্থাৎ ‘পরিণামকৈবল্যবাদী’ হলে গণতন্ত্রের চলে না। নীতি, পদ্ধতি এবং আচরণ যথাযথ হওয়াই গণতন্ত্রে সমান আবশ্যক। এক অর্থে এই শর্তগুলো পরিণাম অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। এই মূল্য সকলেই সমানভাবে অনুধাবন করেন না। যেমন, সপ্তদশ শতকে ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন ‘আমিই রাষ্ট্র’। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণের বোঝা দরকার, লুইয়ের কথার পর চার শ’ অতিক্রান্ত হয়ে এখন একবিংশ শতাব্দী। বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে নেতারা গণতান্ত্রিক মানসিকতা জাহির করেছেন। এবার সর্বনাশ ঠেকিয়ে গণতান্ত্রিকতার প্রমাণ দিলেই মানুষ খুশি হবে; জাতি উদ্ধার পাবে।
mahfuzparvez@gmail.com
‘‘রোজ কেয়ামত হলেও নির্বাচন হবে’ বলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের সঙ্গে আক্ষরিকভাবে একমত হওয়ার অবকাশ নেই। তবে তাঁর এ বক্তব্যের মর্মবস্তু বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না; সরকারি দল বিরোধী দলের সঙ্গে কোন রকম আপসের কথা বিবেচনা করবে না, যেভাবেই হোক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারি দলের নেতারা, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী সংকল্পবদ্ধ। অন্যদিকে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন যে তাঁরা নির্বাচন প্রতিহত করবেন। এসব বক্তব্যের পাশাপাশি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, ২৫শে অক্টোবরের পর সরকারের কাজ দৈনন্দিন দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকের মনেই প্রশ্ন, ২৫শে অক্টোবরের পর পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে?’’ বিরোধী দলও ২৫শে অক্টোবরের পর তাদের শক্তির প্রমাণ দেবে মর্মে হুঙ্কার দিচ্ছে। আজকের (গতকাল) প্রিন্টেড মানবজমিন-এ এদিকে, বৃটেনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ফ্ল্যাউড ওয়ার ক্রাইমস ট্রায়াল পুশ বাংলাদেশ টু দ্যা এ্যাজ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের পরিচিত ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। কিন্তু শেষ দুই দশকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। এই সময়ে অপুষ্টি, শিশু মৃত্যুর হার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, বেড়েছে সাক্ষরতা এবং জীবনযাত্রার মান। এইসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৫ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম দেশ বাংলাদেশ- চীন এবং ইতালির সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। যদিও গার্মেন্ট কারখানায় আগুন এবং ভবন ধসের ঘটনায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের খ্যাতি নষ্ট হয়েছে। ভবন ধসের ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি শ্রমিক মারা যায়। যদিও রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্জন আজ হুমকির মুখে। বিশেষত বিরোধীদের দমনে, তাদের ফাঁসি দিতে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগের সংকল্পের কারণে বাংলাদেশে অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাইব্যুনাল তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সন্দেহ নেই, সর্বত্র প্রশ্ন আর সংশয়। বাংলাদেশে চলমান সবকিছু দেখে-শুনে কি কেউ বলতে পারবে পুরো পরিস্থিতি ও বিচিত্র ঘটনা প্রবাহ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? মানুষ ও সমাজকে আসলে কোনদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আসলে কি হবে ২৫শে অক্টোবরের পর? অর্থাৎ সংঘাত, সমঝোতার কথা বলতে বলতে সকলেই মুখে ফেনা তুলে ফেললেও সেটা হয় নি। এমন কি, সঙ্কট সম্পর্কে দায়িত্বপূর্ণ কথাবার্তা বা সংলাপ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে পারে নি। পরিণামে আমরা সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছি। এখন ১৫ দিন বাদের ২৫শে অক্টোবরকে দিন ধার্য করে ক্ষমতার দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল, সুশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়মতান্ত্রিক পথচলা সর্বনাশা ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে কোথায় গিয়ে পৌঁছায়, ২৫শে অক্টোবরের পরেই সেটা জানা যাবে। সেই জানাটা সুখকর না দুঃখজনক হবে, সেটা নিয়েও ভরপুর আশঙ্কা বিদ্যমান। প্রসঙ্গত সর্বনাশ নিয়ে একটি আপ্ত বাক্য স্মরণ করা যেতে পারে। সুপ্রাচীন পণ্ডিত বিষ্ণুশর্মা বলেছিলেন, ‘সর্বনাশ সমুৎপন্ন হলে অর্ধেক ত্যাগ করে বাকি অর্ধেক রক্ষা করতে হয়।’ সরকারি ও বিরোধী দলের প্রাজ্ঞ নেতারা নিশ্চয়ই প্রাচীন নীতি-কাহিনী ‘পঞ্চতন্ত্র’ জানেন। কিন্তু তাঁরা বোধ করি সুকুমার রায়ের শ্লেষাত্মক ছড়াও পড়েছেন। ফলে বলা যায়, রাজনীতিবিদগণ এই সত্যও অবগত আছেন যে, ব্যাকরণ শিংয়ের সেজোমামার আধখানা কুমিরে খেয়ে ফেললে বাকি আধখানা মরে যায়। অর্থাৎ ‘পরিণামকৈবল্যবাদী’ হলে গণতন্ত্রের চলে না। নীতি, পদ্ধতি এবং আচরণ যথাযথ হওয়াই গণতন্ত্রে সমান আবশ্যক। এক অর্থে এই শর্তগুলো পরিণাম অপেক্ষা অধিক মূল্যবান। এই মূল্য সকলেই সমানভাবে অনুধাবন করেন না। যেমন, সপ্তদশ শতকে ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন ‘আমিই রাষ্ট্র’। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদগণের বোঝা দরকার, লুইয়ের কথার পর চার শ’ অতিক্রান্ত হয়ে এখন একবিংশ শতাব্দী। বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে নেতারা গণতান্ত্রিক মানসিকতা জাহির করেছেন। এবার সর্বনাশ ঠেকিয়ে গণতান্ত্রিকতার প্রমাণ দিলেই মানুষ খুশি হবে; জাতি উদ্ধার পাবে।
mahfuzparvez@gmail.com
No comments