নিজ চোখে দেখে আসুন by মু আ কুদ্দুস
খবরের কাগজ ছিঁড়ে ফেললেন। এরপর লাফ দিয়ে উঠলেন। উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, এটা কি দেশ! এখানে একজনও সত্য কথা বলেন না!
যারা
রাজনীতি করেন তারাও নিজের কথাই বলে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ কেমন আছে একবারও
কি কোন নেতা গ্রামে গিয়ে দেখেছেন? সাধারণ মানুষ কি খায়, কিভাবে বেঁচে আছেন?
তারা শুধুই বলেই যাচ্ছেন আমরা ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষ সুখে থাকবে।
সন্ত্রাস হবে না। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধ হয়ে যাবে। লোকটার খুব কাছেই
ছিলাম আমি। উত্তরা থেকে মতিঝিল যাচ্ছেন। মনে হলো তিনি কোন ব্যাংকের
কর্মকর্তা। কিছুক্ষণ পর তিনি একেবারেই শান্ত হয়ে গেলেন। মিনিট পনের পর
জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, পত্রিকাটা ছিঁড়ে ফেললেন যে! খুব শান্তভাবে তিনি হাত
বাড়িয়ে দিলেন পায়ের কাছে। পত্রিকার টুকরোগুলো তুলে দেখালেন- এটা কি দেশ?
নাকি মিথ্যার কারখানা? পত্রিকাটা আবার ছুড়ে ফেলে দিলেন। বললেন, ২০০ গজ যেতে
সময় গেল দেড় ঘণ্টা। আর এই পত্রিকায় ফিচার এসেছে রাজধানীতে যানজট নেই।
বলেন, এটা কি সহ্য করা যায়? তার কথায় অনেকে সমর্থন করলেন। এরপর তার কাছ
থেকে কথাটা ছড়িয়ে পড়লো বাসের সব যাত্রীর কাছে। শুরু হলো রাজনীতি। একজন
বয়স্ক ব্যক্তি। কোন এক সময় সরকারের আমলা ছিলেন। যাচ্ছেন সচিবালয়ে। তিনি
বললেন, আগের দিনে রাজা-বাদশারা প্রজাদের সুখ-দুঃখ দেখার জন্য গ্রামে যেতেন
ছদ্মবেশে। প্রজারা কোনদিন রাজাকে চিনতেন না। এখন কোন মন্ত্রী কিংবা
রাজনীতিবিদ কি ছদ্মবেশে কোন গরিবের বাড়িতে ঢুঁ মারেন? যদি দিতেন তাহলে
সাধারণ মানুষের কষ্ট হতো না। কারণ, কোন রাজনীতিবিদের এমন চর্চা নেই। যদি
থাকতো তাহলে দেশের বর্তমান সমস্যা সমাধান হতো ১৫ মিনিটে। এ সময় অন্য একজন
বললেন, সেটা কিভাবে ভাই? যেখানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দু’জনের টানাপড়েন। খবরের
কাগজে বিস্তর লেখাজোখা। টিভিগুলোতে টকশো। বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন ভাবে
পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কই কেউ তো কারও কথা মানছেন না! জবাবে বললেন, যদি
আমাদের নেতাকে ভালবাসি, দেশপ্রেমিক হই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করি,
লোভ-লালসা না থাকে তাহলে ১৫ মিনিটেই সম্ভব সব সমস্যার সমাধান। তিনি বলেন,
দেশে সংঘাতময় মুহূর্তে দেশপ্রধানের উচিত কাউকে কিছু না বলে গোপনে একা চলে
যাওয়া বিরোধীদলীয় নেতার বাসায়। সরাসরি যাবেন তার ঘরে। গিয়ে বলবেন, আমরা
দেশকে ভালবাসি। দেশ সেবাই আমাদের উদ্দেশ্য। আসুন আপনার শর্ত নিয়ে আলোচনায়
বসি। যে পদ্ধতি স্বাধীনতাকে সমুন্নত করবে, যে পদ্ধতি দেশকে শোষণমুক্ত করার
পথ দেখাবে, বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, এমন একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত নিয়ে সব
দলই নির্বাচনে চলে যাই। সবাই তার কথায় হাততালি দিলেন। বললেন, এই যদি হয়
তাহলে হঠাৎ করে দেশ পাল্টে যাবে। নতুন এক বাংলাদেশ এসে দাঁড়াবে ষোল কোটি
মানুষের সামনে। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়ে ৭
কোটি বাঙালি এক হয়েছিল ’৭১-এ। পাকিস্তানিরা টিকতে পারেনি। পালিয়েছে। আজ কেন
সেই মহান নেতার সম্মানে দাঁড়াতে পারি না? বাধা কোথায়? দেশ তো বাঙালিরাই
চালাচ্ছে। তাহলে কোন বাধা দেশকে সাংঘর্ষিক করে তুলছে? সবাই বললেন, সত্যি
ভাই, আপনার ভাবনাগুলো যেন সত্য হয়। কিন্তু না, অন্য একজন বলেই উঠলেন-
‘সেদিন আসিবে কবে, মাটির মানুষ সোনার সূর্য হবে’।
No comments