কর্মপ্রত্যাশীর চাপ ও বিসিএসের সোনার হরিণ by মুনির হাসান
দুই হাজার ৫২টি সরকারি কর্মকর্তার পদের জন্য লড়াই শুরু করেছেন মাত্র
দুই লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন তরুণ-তরুণী! ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম পর্ব
অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪ মে। শুধু সংখ্যাধিক্য নয়, পরীক্ষার আগের রাতে
প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযান ইত্যাদি মনে করিয়ে
দেয়, সরকারি চাকরি এখন কতটা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। গেল কয়েক দিন
সামাজিক যোগাযোগের সাইটে এই সোনার হরিণের পেছনে ধাওয়ারতদের আক্ষেপ,
আকাঙ্ক্ষা আর হতাশার চিত্র দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ কয়েকবার করে
এই বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিসিএস পরীক্ষায়
কর্মপ্রত্যাশীদের চাপ প্রায় গুণোত্তর হারে বেড়ে চলেছে। ৩৩তম বিসিএসে চার
হাজার ২০৬টি পদের জন্য লড়েছেন মাত্র এক লাখ ৯৩ হাজার ৫৯ জন। ৩২তম বিশেষ
বিসিএসের আগে ৩১তম বিসিএসে অংশ নিয়েছেন এক লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ জন প্রার্থী
আর পদ ছিল দুই হাজার ৭২টি। তারও আগে ৩০তম বিসিএসে দুই হাজার ৩৬৭টি পদের
জন্য লড়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৮ জন!
আগামী দিনগুলোয় এই সংখ্যা হ্রাস পাবে, এমন আশা করা বোকামি হবে। গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। ২০০০ সালের ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০ বছরে এটি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিবেচনা করলে শতাংশ বৃদ্ধির শতকরা হার চোখে পড়বেই। এর বাইরে রয়েছে ছদ্মবেকারের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এই হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ; যদিও ২০০৬ সালে এটি ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং যথারীতি এই হার মেয়েদের মধ্যে (৩১%) ছেলেদের (১৪.৪%) তুলনায় অনেক বেশি। আগামী এক দশক ধরে প্রতিবছর প্রায় ২১ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মবাজারে প্রবেশ করবেন। তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের যথাযথ উদ্যোগ নিতে না পারলে আমাদের ‘জনসংখ্যা ডিভিডেন্ড’ শেষ পর্যন্ত ‘জনসংখ্যা হাহাকারে’ পরিণত হতে পারে। বছরওয়ারি সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তার শূন্য পদের পাশাপাশি অন্য শূন্য পদগুলো বিবেচনা করলে প্রতিবছর গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার সরকারি চাকরির সুযোগ থাকবে। তার মানে, এই বিশালসংখ্যক কর্মপ্রত্যাশীর কর্মসংস্থানের দায়ভার নিতে হবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরই। বিগত সময়জুড়ে বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়; যদিও কিছু বদলোকের কারণে যথাযথ স্বীকৃতি পান না আমাদের উদ্যোক্তারা।
অন্যদিকে, আমাদের দেশের কর্মপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমান। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। কিন্তু ভবিষ্যতে এই খাতে আমাদের সব সম্ভাবনা মাঠে মারা যেতে পারে, যদি ঠিকমতো নজর দেওয়া না হয়। কারণ, তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সে দেশের কর্মপ্রত্যাশীদের চাপ। আরব বিশ্বের দেশগুলো তিউনিসিয়ার আরব বসন্তের কারণ ও ফলাফল বিশ্লেষণে সচেতন হয়েছে। তেলসমৃদ্ধ তিউনিসিয়ার আরব বসন্তের মূল কারণ বেকারত্ব। ৩৫ বছরের একজন সৃষ্টিশীল তরুণকে যখন তাঁর চুল কাটার টাকা বাবা বা ভাইয়ের কাছ থেকে নিতে হয়, তখন সেখানে কেবল মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয় না, মৃত্যু হয় আবেগপ্রবণ রাষ্ট্রকাঠামোরও। একই কারণে আমেরিকার মতো দেশও দেশের বাইরে কাজ পাঠিয়ে দেওয়ার (আউটসোর্সিং) বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে। এ কারণে ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর যে রেওয়াজ আমরা গত সাড়ে তিন দশকে গড়ে তুলেছি, সেটির মৃত্যু হবে। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশের কারণে কেবল কায়িক পরিশ্রমভিত্তিক কাজের বাজার ক্রমেই সংকুচিত হবে। অন্যদিকে, ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে জ্ঞানকর্মীর বাজার। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের মূল দুর্বলতা তাঁদের ভাষাজ্ঞানের অদক্ষতা এবং কর্মদক্ষতার সনদ। এই দুই বিষয়ে আমাদের বড় ধরনের নজর দেওয়া দরকার।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের নজর দিতে হবে বেসরকারি পর্যায়ে স্বতন্ত্র ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য। সাধারণভাবে কর্মপ্রত্যাশীদের ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে উদ্যোক্তা বানিয়ে ফেলতে পারলেই কর্মসংস্থানের সমীকরণের একধরনের সমাধান করে ফেলা যায়। আমেরিকার মতো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্যোক্তাবান্ধব দেশও তাই সব সময় নানাভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকে। ওবামা প্রশাসনের চলতি বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্ট নিজেই উঠেপড়ে লেগেছেন। যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নতুন লোককে চাকরি দেবেন তাঁদের ১০ শতাংশ কর রেয়াত, দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত ব্যাংকঋণের সব ফি প্রত্যাহারসহ এর দালিলিক চাহিদা কমিয়ে ফেলা, পুনঃ অর্থায়নের সহজ সুযোগ সৃষ্টিসহ উদ্যোক্তাদের পরিচর্যা করার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা পরিচর্যাকেন্দ্রের (ইনকিউবেশন সেন্টার) জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দ ইত্যাদি এবারের মার্কিন বাজেটের বৈশিষ্ট্য। কেবল তা-ই নয়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তাদানের সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানোরও নানা উদ্যোগ সেখানে রয়েছে।
আমাদের দেশেও সরকারি বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা থাকা দরকার। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উদ্যমী ব্যাংকারকেই উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বানিয়ে দিতে হয়! এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে যে প্রতিষ্ঠানটি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই ফাউন্ডেশন), সেটির শীর্ষ নির্বাহী পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদটি শিল্পমন্ত্রী নিজেই অলংকৃত করে বসে আছেন। আর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটিও পূরণের কোনো দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরে কেবল চীনেই প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরি উদ্বৃত্ত হবে। উদ্যোগ নিলে তার মধ্যে দেড় কোটিই বাংলাদেশে নিয়ে আসা সম্ভব। আর সে জন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উদ্যোগ। এর মধ্যে বাজেটে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যেমন অনেক প্রণোদনা থাকতে হবে, তেমনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের একটি উদ্যোগ ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি ভার্চুয়াল গ্রুপ আগ্রহী অনেক তরুণ-তরুণীকে তাঁদের পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আমার সামান্য বুদ্ধিতে বুঝতে পারছি, ব্রডব্যান্ড সংযোগ, সামান্য জ্ঞান-সহায়তা, আর্থিক সহায়তা ও নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের যুবাদের বড় একটি অংশকেই আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যমী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। যেকোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা এ রকম হাজারো যুবাকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসএমই পল্লি ও এসএমই পরিচর্যাকেন্দ্র গড়ে তুলে এই ক্ষুদ্র সহায়তা প্রদান শুরু করা যায়। মনে রাখা দরকার, সব দূরের যাত্রাই ঘর থেকে দুই পা ফেলে শুরু করতে হয়।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডকমিটি।
আগামী দিনগুলোয় এই সংখ্যা হ্রাস পাবে, এমন আশা করা বোকামি হবে। গত এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে। ২০০০ সালের ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১০ বছরে এটি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিবেচনা করলে শতাংশ বৃদ্ধির শতকরা হার চোখে পড়বেই। এর বাইরে রয়েছে ছদ্মবেকারের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এই হার ২০ দশমিক ৩ শতাংশ; যদিও ২০০৬ সালে এটি ছিল ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং যথারীতি এই হার মেয়েদের মধ্যে (৩১%) ছেলেদের (১৪.৪%) তুলনায় অনেক বেশি। আগামী এক দশক ধরে প্রতিবছর প্রায় ২১ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মবাজারে প্রবেশ করবেন। তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের যথাযথ উদ্যোগ নিতে না পারলে আমাদের ‘জনসংখ্যা ডিভিডেন্ড’ শেষ পর্যন্ত ‘জনসংখ্যা হাহাকারে’ পরিণত হতে পারে। বছরওয়ারি সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তার শূন্য পদের পাশাপাশি অন্য শূন্য পদগুলো বিবেচনা করলে প্রতিবছর গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার সরকারি চাকরির সুযোগ থাকবে। তার মানে, এই বিশালসংখ্যক কর্মপ্রত্যাশীর কর্মসংস্থানের দায়ভার নিতে হবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরই। বিগত সময়জুড়ে বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়; যদিও কিছু বদলোকের কারণে যথাযথ স্বীকৃতি পান না আমাদের উদ্যোক্তারা।
অন্যদিকে, আমাদের দেশের কর্মপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমান। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ষষ্ঠ রেমিট্যান্স পাওয়া দেশ। কিন্তু ভবিষ্যতে এই খাতে আমাদের সব সম্ভাবনা মাঠে মারা যেতে পারে, যদি ঠিকমতো নজর দেওয়া না হয়। কারণ, তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সে দেশের কর্মপ্রত্যাশীদের চাপ। আরব বিশ্বের দেশগুলো তিউনিসিয়ার আরব বসন্তের কারণ ও ফলাফল বিশ্লেষণে সচেতন হয়েছে। তেলসমৃদ্ধ তিউনিসিয়ার আরব বসন্তের মূল কারণ বেকারত্ব। ৩৫ বছরের একজন সৃষ্টিশীল তরুণকে যখন তাঁর চুল কাটার টাকা বাবা বা ভাইয়ের কাছ থেকে নিতে হয়, তখন সেখানে কেবল মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয় না, মৃত্যু হয় আবেগপ্রবণ রাষ্ট্রকাঠামোরও। একই কারণে আমেরিকার মতো দেশও দেশের বাইরে কাজ পাঠিয়ে দেওয়ার (আউটসোর্সিং) বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে। এ কারণে ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর যে রেওয়াজ আমরা গত সাড়ে তিন দশকে গড়ে তুলেছি, সেটির মৃত্যু হবে। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশের কারণে কেবল কায়িক পরিশ্রমভিত্তিক কাজের বাজার ক্রমেই সংকুচিত হবে। অন্যদিকে, ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে জ্ঞানকর্মীর বাজার। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের মূল দুর্বলতা তাঁদের ভাষাজ্ঞানের অদক্ষতা এবং কর্মদক্ষতার সনদ। এই দুই বিষয়ে আমাদের বড় ধরনের নজর দেওয়া দরকার।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের নজর দিতে হবে বেসরকারি পর্যায়ে স্বতন্ত্র ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য। সাধারণভাবে কর্মপ্রত্যাশীদের ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে উদ্যোক্তা বানিয়ে ফেলতে পারলেই কর্মসংস্থানের সমীকরণের একধরনের সমাধান করে ফেলা যায়। আমেরিকার মতো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্যোক্তাবান্ধব দেশও তাই সব সময় নানাভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকে। ওবামা প্রশাসনের চলতি বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেখানে নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্ট নিজেই উঠেপড়ে লেগেছেন। যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নতুন লোককে চাকরি দেবেন তাঁদের ১০ শতাংশ কর রেয়াত, দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত ব্যাংকঋণের সব ফি প্রত্যাহারসহ এর দালিলিক চাহিদা কমিয়ে ফেলা, পুনঃ অর্থায়নের সহজ সুযোগ সৃষ্টিসহ উদ্যোক্তাদের পরিচর্যা করার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তা পরিচর্যাকেন্দ্রের (ইনকিউবেশন সেন্টার) জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দ ইত্যাদি এবারের মার্কিন বাজেটের বৈশিষ্ট্য। কেবল তা-ই নয়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তাদানের সরকারি প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানোরও নানা উদ্যোগ সেখানে রয়েছে।
আমাদের দেশেও সরকারি বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা থাকা দরকার। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উদ্যমী ব্যাংকারকেই উদ্যোক্তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বানিয়ে দিতে হয়! এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে যে প্রতিষ্ঠানটি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই ফাউন্ডেশন), সেটির শীর্ষ নির্বাহী পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পদটি শিল্পমন্ত্রী নিজেই অলংকৃত করে বসে আছেন। আর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটিও পূরণের কোনো দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরে কেবল চীনেই প্রায় সাড়ে আট কোটি চাকরি উদ্বৃত্ত হবে। উদ্যোগ নিলে তার মধ্যে দেড় কোটিই বাংলাদেশে নিয়ে আসা সম্ভব। আর সে জন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উদ্যোগ। এর মধ্যে বাজেটে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যেমন অনেক প্রণোদনা থাকতে হবে, তেমনি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের একটি উদ্যোগ ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি ভার্চুয়াল গ্রুপ আগ্রহী অনেক তরুণ-তরুণীকে তাঁদের পথ খুঁজে নিতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আমার সামান্য বুদ্ধিতে বুঝতে পারছি, ব্রডব্যান্ড সংযোগ, সামান্য জ্ঞান-সহায়তা, আর্থিক সহায়তা ও নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের যুবাদের বড় একটি অংশকেই আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যমী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। যেকোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা এ রকম হাজারো যুবাকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসএমই পল্লি ও এসএমই পরিচর্যাকেন্দ্র গড়ে তুলে এই ক্ষুদ্র সহায়তা প্রদান শুরু করা যায়। মনে রাখা দরকার, সব দূরের যাত্রাই ঘর থেকে দুই পা ফেলে শুরু করতে হয়।
মুনির হাসান: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডকমিটি।
No comments