তৃণমূলে শাস্তির বিধান
তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রসারিত করা না গেলেও দুর্নীতির তৃণ-মূল্যায়ন
মোটামুটি সম্পন্ন। প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৩০ জন জনপ্রতিনিধি
বরখাস্ত হয়েছেন আর অর্থবরাদ্দ বন্ধ হয়েছে ১১২টি ইউনিয়নে। প্রমাণিত
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সব সময়ই ইতিবাচক ঘটনা। কিন্তু
তৃণমূলের প্রতিনিধিদের দুর্নীতি প্রমাণ করা যত সহজ, যাঁরা ক্ষমতার মগডালে
বিচরণ করেন তাঁদের কিছু করা ততটাই কঠিন। স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্প
(এলজিএসপি) স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি মাত্র প্রকল্প। অথচ এই প্রকল্পেই
জনপ্রতিনিধিরা প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেবল
৩০ জন বরখাস্তই হননি, পাশাপাশি ১১২টি ইউনিয়নে অর্থবরাদ্দ বন্ধ করা
হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি এতই প্রকট যে সেগুলো লুকিয়ে রাখা যায়
না। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকাটি এতই ছোট যে কাজ বা অকাজ উভয়ই জনগণের নজরের
মধ্যে থেকেই করতে হয়। কিন্তু যেখানে পরিসর আরও বড়, সংসদীয় আসন বা জেলা
বা দেশ; সেখানে অনেক প্রকল্পের ধরন, অর্থের ব্যবহার, প্রকল্পের কাজ পাইয়ে
দেওয়ার আয়োজনের মধ্যে পদে পদে দুর্নীতি ঘটে, কিন্তু সেগুলো প্রায়ই
ধামাচাপা পড়ে যায়। পদের ক্ষমতা যত বেশি, সেই পদের দুর্নীতি আলোচিত হওয়ার
সুযোগ ততই কম। জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বিষয়ে প্রথম আলোর গত বুধবারের
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)
চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন তাঁদেরই সহকর্মী ইউপি
সদস্যরা। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযুক্ত
দুর্নীতির ভাগ না দেওয়া কিংবা আরও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের কারও দুর্নীতিতে
সায় না দেওয়ায় প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে অনুযোগ করেছেন। সুতরাং
ব্যাপারটা যাতে বড় মাছের ছোট মাছ ভক্ষণ না হয়ে যায়, সেটা দেখতে হবে।
ছোট-বড় কোনো দুর্নীতিকেই ছাড় দেওয়া যাবে না। ক্ষমতার অপব্যবহারের
অভিযোগে এই পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ অর্থাৎ সরকারের নির্বাহী
বিভাগ। এ ঘটনাকে যাতে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের
ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে ব্যবহার করা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে
হবে সরকারকেই।
No comments