স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি কথা রাখবেন?
রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কত
দিন চলবে, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে বিষয়টি আলোচিত হলেও কোনো সুপারিশ
করা হয়নি। সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ
অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯ মে ঢাকা শহরে এক মাস
সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন। সংঘাত-সহিংসতা ও নাশকতা রোধ
করতেই এ ধরনের ব্যবস্থা বলে জানানো হয়েছে। এক মাসের জন্য এ ব্যবস্থা
নেওয়া হলে আগামী ১৯ জুন এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু সংসদীয়
কমিটির সভার পর মনে হচ্ছে, অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা
কার্যকর থাকবে। এটা ঠিক যে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ ও
রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
ঘোষিত কর্মসূচির সময় যেমন এ সহিংসতা ঘটেছে, তেমনি কর্মসূচির বাইরেও
চোরাগোপ্তা হামলা ও সহিংসতা হয়েছে। সভা-সমাবেশ বা কর্মসূচি আহ্বানকারী
দলগুলো এসব সংঘাত ও সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না। যে রাজনৈতিক দল বা
গোষ্ঠী সভা-সমাবেশ বা কর্মসূচি দিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে তা পালন করা এবং
দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখাও সেই দল বা গোষ্ঠীর দায়িত্ব। গত কয়েক মাসে দেখা
গেছে, রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই সংঘাত-সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা।
হরতালের ঘোষণা দেওয়ার পর গাড়িতে আগুন লাগানো বা হরতাল পালনে বাধ্য করার
জন্য হরতালের দিন যানবাহনের ওপর আক্রমণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখন প্রশ্ন
হচ্ছে, এ ধরনের সংঘাত-সহিংসতা বন্ধ করার পথ কি সভা-সমাবেশ অনির্দিষ্টকালের
জন্য নিষিদ্ধ করে রাখা? আমরা মনে করি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক এবং
এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত
হবে। সরকার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে, কিন্তু হরতালের মতো কর্মসূচি পালিত
হচ্ছে সেই একই রকম সহিংস কায়দায়। রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক বা যারাই
সংঘাত-সহিংসতা করুক, তা ফৌজদারি অপরাধ। যারা এ ধরনের অপরাধ করছে, তাদের
চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করাই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
কাজ। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের উচিত রাজনৈতিক
বিচার-বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে কঠোর হাতে এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়া। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোনো
নাশকতা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দিলে যে কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া
হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি তাঁর কথা রাখবেন কি না? তাঁকে মনে রাখতে হবে,
গণতন্ত্র এবং সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা একসঙ্গে চলতে পারে না। আমরা আশা
করব, সরকার অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে এবং যেকোনো
সংঘাত-সহিংসতা প্রয়োজনীয় আইনি পথেই সামাল দেবে। অন্যদিকে, সংঘাত-সহিংসতার
পথ ছেড়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধী পক্ষ তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি ও
সভা-সমাবেশ করবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
No comments