ধূমপান বর্জনে ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন অগ্রাহ্য করে
জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও নেশাজাতীয় বিভিন্ন প্রকারের
বর্জনীয় বস্তু গ্রহণ করে, যা ধীরে ধীরে উগ্র নেশায় পরিণত হয়। এর মধ্যে
বিড়ি, সিগারেট, তামাক, চুরুট, হুক্কা—এসব ধূমপানের সামগ্রী অন্যতম।
ধূমপানে নেশা যদিও কম হয়, তবে যে ব্যক্তি প্রথমবারের মতো ধূমপান শুরু করেন
তিনি এর নেশা তীব্রভাবে অনুভব করেন। ইসলামি শরিয়তের বিধানমতে, ‘যে জিনিস
নেশার উদ্রেক করে সে জিনিসের পরিমাণ কম হলেও তা হারাম।’ এ নীতিমালার আলোকে
ধূমপানে নেশা কম হলেও এটা নিষিদ্ধ। কারণ, ধূমপানের বদভ্যাস মানুষকে আসক্ত
করে আর সব ধরনের আসক্তিই হারাম। তাই ধূমপান নিষিদ্ধ ও বর্জনীয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নেশাজাতীয় বস্তু নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘যাবতীয়
নেশার বস্তু হারাম।’ (মুসলিম) ইসলামের দৃষ্টিতে সব ধরনের অপব্যয় ও অপচয়
পরিত্যাজ্য। আর্থিক অপচয়ের দিক বিবেচনায় ধূমপানজনিত ব্যয় একজন ব্যক্তির
জন্য বড় ধরনের অপচয়। ধূমপানজনিত রোগের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় আরও কয়েক
গুণ বেশি। ধূমপানে অহেতুক প্রচুর অর্থ-সম্পদ অপব্যয় হয়। নেশার খরচ জোগাতে
অনেক সময় ধূমপায়ীকে পরিবার থেকে জোরপূর্বক অথবা অন্য কারও কাছ থেকে
ছিনতাই-চাঁদাবাজির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। নেশাগ্রস্ত
হয়ে তারা ধর্মকর্ম ভুলে থাকে এবং নানা ধরনের অপকর্ম করে নিজের ও পরিবারের
অর্থনৈতিক ক্ষতি, দুঃখ ও দারিদ্র্য ডেকে আনে। অনর্থক অপব্যয় অত্যন্ত
গুরুতর অপরাধ। পবিত্র কোরআনে অপচয় করতে নিষেধবাণী ঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা
কিছুতেই অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই যারা অপব্যয় করে, তারা শয়তানের ভাই।’
(সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৬-২৭)
ধূমপানের দুর্গন্ধ মুখে নিয়ে ইবাদত করলে তা কবুল হয় না। যেহেতু সিগারেটের তামাক পাতায় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেহেতু ধূমপায়ীদের মুখের দুর্গন্ধ বিশেষত ওই ধরনের তামাকজাত দ্রব্য থেকেই সৃষ্টি হয়। এমন অসহনীয় দুর্গন্ধ নিয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করা যায় না। তাই নবী করিম (সা.) সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুর্গন্ধময় দ্রব্য খায়, সে যেন ওই অবস্থায় মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।’ ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কষ্ট হয়, যা ইসলাম-পরিপন্থী অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এভাবে নামাজ আদায়কারীর একাগ্রতা বিনষ্ট করার জন্য ধূমপায়ী দায়ী। সুতরাং ধূমপান আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্তরায়।
ধূমপান যে মারাত্মক বিষাক্ত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ, এর সঙ্গে খোদ সেবনকারী, উৎপাদক, বিপণনকারীসহ সবাই একমত পোষণ করেন। এমনকি সিগারেটের বিজ্ঞাপনেও লেখা থাকে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ ধূমপান ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অমঙ্গলজনক। যেকোনো রোগীকে সর্বাগ্রে ধূমপান না করার চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়। একখণ্ড পরিচ্ছন্ন কাগজে মোড়া সিগারেট সুদৃশ্য হলেও তা জনস্বাস্থ্যের জন্য এমন ক্ষতিকর উগ্র নিকোটিনের বিষে ভরা, যা ইনজেকশনের মাধ্যমে কোনো সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করালে তার মৃত্যু অনিবার্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। ধূমপানে যেহেতু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়, সেহেতু জেনেশুনে ধূমপান আত্মহত্যার শামিল। ধূমপান ও তামাককে বিষপানের সমকক্ষ বললেই যথার্থ হয় না, বরং ধূমপান বিষপানের চেয়েও মারাত্মক। কেননা বিষপানে শুধু পানকারীরই ক্ষতি হয় আর ধূমপানে তার পরিবেশে অধূমপায়ী এমনকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও সর্বনাশ হয়ে থাকে। প্রত্যেক নাগরিকেরই নির্মল পরিবেশে সুস্থ-সুন্দরভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। একজন ধূমপায়ী নিজেকে নিঃশেষ করার পাশাপাশি অন্যদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে না। ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য সমাজের মানুষকে বোঝাতে হবে যে ‘ধূমপান নিষিদ্ধ সামগ্রী’। ধূমপানের আসক্তি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি করে। জনগণকে বেশি করে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন ও তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে। ধূমপানকে ‘না’ বলার সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা দরকার। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারণা ও গণসচেতনতা চালিয়ে ধূমপান প্রতিরোধ করা যায়। তা ছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুস্থ জীবন যাপন করলে এবং ধূমপান ও তামাকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখলে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক সমাজ ও মসজিদের ইমাম-খতিবরা ধূমপান ও তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেহেতু তামাক ও মাদকের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তাই ধর্মীয় শিক্ষকেরা যদি ছাত্রদের ধূমপান ও মাদকের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন, তাহলে অনেকেই এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হবে। কাজেই শিক্ষক সমাজ যদি আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে, সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং তাদের তামাক, ধূমপান ও মাদকের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সতর্ক করে তাহলে ছাত্রসমাজের মধ্যে তামাক ও মাদক সেবনের প্রবণতা কমে যাবে। মসজিদের ইমাম বা ধর্মীয় নেতারা জুমার খুতবাসহ বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নেশার অপকারিতা তুলে ধরে মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রেখে তাদের হেদায়েত করতে পারেন।
ধূমপানের দুর্গন্ধ মুখে নিয়ে ইবাদত করলে তা কবুল হয় না। যেহেতু সিগারেটের তামাক পাতায় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, সেহেতু ধূমপায়ীদের মুখের দুর্গন্ধ বিশেষত ওই ধরনের তামাকজাত দ্রব্য থেকেই সৃষ্টি হয়। এমন অসহনীয় দুর্গন্ধ নিয়ে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করা যায় না। তাই নবী করিম (সা.) সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুর্গন্ধময় দ্রব্য খায়, সে যেন ওই অবস্থায় মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।’ ধূমপায়ীর মুখের দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কষ্ট হয়, যা ইসলাম-পরিপন্থী অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এভাবে নামাজ আদায়কারীর একাগ্রতা বিনষ্ট করার জন্য ধূমপায়ী দায়ী। সুতরাং ধূমপান আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্তরায়।
ধূমপান যে মারাত্মক বিষাক্ত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ, এর সঙ্গে খোদ সেবনকারী, উৎপাদক, বিপণনকারীসহ সবাই একমত পোষণ করেন। এমনকি সিগারেটের বিজ্ঞাপনেও লেখা থাকে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ ধূমপান ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অমঙ্গলজনক। যেকোনো রোগীকে সর্বাগ্রে ধূমপান না করার চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়। একখণ্ড পরিচ্ছন্ন কাগজে মোড়া সিগারেট সুদৃশ্য হলেও তা জনস্বাস্থ্যের জন্য এমন ক্ষতিকর উগ্র নিকোটিনের বিষে ভরা, যা ইনজেকশনের মাধ্যমে কোনো সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করালে তার মৃত্যু অনিবার্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। ধূমপানে যেহেতু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়, সেহেতু জেনেশুনে ধূমপান আত্মহত্যার শামিল। ধূমপান ও তামাককে বিষপানের সমকক্ষ বললেই যথার্থ হয় না, বরং ধূমপান বিষপানের চেয়েও মারাত্মক। কেননা বিষপানে শুধু পানকারীরই ক্ষতি হয় আর ধূমপানে তার পরিবেশে অধূমপায়ী এমনকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও সর্বনাশ হয়ে থাকে। প্রত্যেক নাগরিকেরই নির্মল পরিবেশে সুস্থ-সুন্দরভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। একজন ধূমপায়ী নিজেকে নিঃশেষ করার পাশাপাশি অন্যদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে না। ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার জন্য সমাজের মানুষকে বোঝাতে হবে যে ‘ধূমপান নিষিদ্ধ সামগ্রী’। ধূমপানের আসক্তি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং দেশ ও জাতির অনেক ক্ষতি করে। জনগণকে বেশি করে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে সচেতন ও তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসতে পারে। ধূমপানকে ‘না’ বলার সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা দরকার। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারণা ও গণসচেতনতা চালিয়ে ধূমপান প্রতিরোধ করা যায়। তা ছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সুস্থ জীবন যাপন করলে এবং ধূমপান ও তামাকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখলে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক সমাজ ও মসজিদের ইমাম-খতিবরা ধূমপান ও তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেহেতু তামাক ও মাদকের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তাই ধর্মীয় শিক্ষকেরা যদি ছাত্রদের ধূমপান ও মাদকের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন, তাহলে অনেকেই এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হবে। কাজেই শিক্ষক সমাজ যদি আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসে, সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং তাদের তামাক, ধূমপান ও মাদকের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সতর্ক করে তাহলে ছাত্রসমাজের মধ্যে তামাক ও মাদক সেবনের প্রবণতা কমে যাবে। মসজিদের ইমাম বা ধর্মীয় নেতারা জুমার খুতবাসহ বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নেশার অপকারিতা তুলে ধরে মানুষকে ধূমপান করা থেকে বিরত রেখে তাদের হেদায়েত করতে পারেন।
সর্বোপরি,
ধূমপান বর্জনের জন্য ধূমপায়ীর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করতে পারে। ‘বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ (৩১ মে) অথবা পবিত্র মাহে
রমজান মুসলমানদের ধূমপান বর্জনের উপযুক্ত সময়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত
ইচ্ছাই বেশি প্রয়োজন। যেহেতু ধূমপান কোনো উপকারে আসে না, বরং এতে মানুষের
অনেক ক্ষতি হয়, তাই ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী সবারই স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে
ধূমপানের বদভ্যাস অবশ্যই পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments