কাঠমিস্ত্রি থেকে মেয়র কামরান! by আহমেদ রাজু

সিলেটের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের উত্থান রূপকথার মতোই। কর্মজীবনের শুরুতে ভাগ্যান্বেষণে তিনি মধ্যপ্রাচ্য গিয়েছিলেন। মুরগির খামারে শ্রমিক ও কাঠমিস্তির কাজ করতেন।
দেশে ফিরে নামেন রাজনীতিতে। টানা ২০ বছরের বেশি সময় তিনি সিলেটের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন ১৫ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে এবারও তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অর্থ কখনও কখনও মানুষের জীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই অর্থ যদি কালো এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়, তবে তো কোন কথাই নেই। কামরান যখন রাজনীতিতে নামেন, তখনকার সাথে বর্তমান জীবনের ফারাক অনেক। গত দুই যুগে কামরান আঙ্গুল ফুলে কালাগাছ বনে গেছেন। কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন। নগরবাসী এখন কামরানের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই টাকাকেই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন সিলেটের নগরবাসী। সিলেট নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। 

কামরানের ঘনিষ্ঠরা জানান, রাজনীতিতে নামার পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে কামরানের জীবন। অর্থবিত্ত আর প্রাচুর্যের নাগাল পান তিনি। কামরান এখন সিলেটের অন্যতম শীর্ষ ধনী। তার কি পরিমাণ সহায়-সম্পত্তি ও অর্থ আছে তা তিনি নিজেও জানেন না বলে দাবি করেন কামরানের ঘনিষ্ঠরা। সম্পত্তির মধ্যে কিছু আছে নিজের নামে থাকলেও বেশির ভাগই স্ত্রী ও সন্তানের নামে।

কামরানের ঘনিষ্ঠরা আরও জানান, আশির দশকের শুরুর দিকে জীবনের তাগিদে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যান। সেখানে গিয়ে তিনি প্রথমে একটি মুরগির খামারে কাজ করতেন। কাঠমিস্তি হিসেবেও তিনি কাজ করেন সেখানে। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

মাত্র দু’লাখ টাকা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে আসার পর কি করবেন তা কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না কামরান। তাই সারাক্ষণ তিনি মনমরা হয়ে থাকতেন। কামরানের বাবা বশির উদ্দীন আহমদ তার মন খারাপের কথা জানলেন।

ছেলের জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন তার বাবা। কামরানের বাবার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজীর সুসম্পর্ক ছিল। তাই তার বাবা তাকে একদিন কামরানকে ফরিদ গাজীর কাছে নিয়ে যান। ফরিদ গাজীকে তার বাবা বলেন, আমার ছেলেটা কিছুই করে না। ছেলেকে আমি আপনাকে দিয়ে গেলাম। ওকে কোন কাজে লাগান। তার কিছু দিন পরই ছিল সিলেট পৌরসভার নির্বাচন। ফরিদ গাজী কামরানকে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলেন। কামরান ফরিদ গাজীকে বলেন, চাচা আমাকে তো কেউ চিনে না, আমাকে ভোট দেবে কে! কিন্তু ফরিদ গাজী বলেন, আমি তোমাকে যা বলছি তাই কর। তুমি আগে নির্বাচনে দাঁড়াও, বাকিটা আমি দেখবো। 

ফরিদ গাজীর নির্দেশে সিলেট পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার পদে নির্বাচনে প্রার্থী হলেন কামরান। নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে নির্বাচিত হন ওয়ার্ড কমিশনার। ৯০’র দশকের শুরুতে তিনি সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ঘোষণা করা হলে--২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনেও তিনি কারাবন্দী অবস্থায় বিপুল ভোটে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিপুলি অর্থ-বিত্তের মালিক হন। নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সব ঠিকাদারকেই যে কোনো কাজ পাওয়ার আগেই কামরানকে পুরো কাজের শতকরা তিনভাগ টাকা অগ্রিম দিতে হতো। এ কারণেই সিলেট নগারবাসীর কাছে কামরান মিস্টার ‘থ্রি পার্সেন্ট’ বলে পরিচিতি পেয়েছেন। এভাবেই বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেছেন তিনি।

অস্থাবর সম্পদের বর্ণনা দিতে গিয়ে কামরান হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার চার লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৮ টাকার শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত রয়েছে। ১১ লাখ এক হাজার ৬০০ টাকা তিনি মেয়র হিসেবে সম্মানি ভাতা পেয়েছেন। তার এবং তার স্ত্রীর নগদ গচ্ছিত আছে ৭৪ লাখ টাকা। নিজের নগদ রয়েছে ১৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর রয়েছে ৬০ লাখ নগদ টাকা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার এবং তার স্ত্রীর গচ্ছিত রয়েছে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯১ হাজার ৩০৩ টাকা। নিজের নামে জমা রয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৮ টাকা।

বন্ড, শেয়ার এবং স্থায়ী আমানতে কামরানের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে এক কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৯৭০ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি সাড়ে ৬ লাখ টাকা মূল্যের জিপ। নিজের ও স্ত্রীর নামে রয়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকার স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু। নিজের নামে এক লাখ ৫০ হাজার এবং স্ত্রীর নামে স্বর্ণ ও মূল্যবান ধাতু রয়েছে এক লাখ ৪০ টাকার।

ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে দুই লাখ ৮১ হাজার ৪০০ টাকার। নিজের নামে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪শ’ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রি। আসবাবপত্র রয়েছে চার লাখ ৪৭ হাজার টাকার। নিজের নামে ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র।

স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কামরানের স্ত্রীর নামে রয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ২৮৪ টাকার কৃষি জমি। নিজের নামে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৭ টাকার। নিজের নামে ১০ লাখ টাকা মূল্যের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত একটি দোতলা দালান এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি টিনশেড ঘর রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। 

আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় কামরানের পেশা উল্লেখ করা হয়েছে ‘বালু-পাথর সরবরাহকারী’।

২০০৮ সালে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় পেশা হিসেবে কামরান উল্লেখ করেছিলেন তার যৌথ মালিকানার পেট্রোল পাম্প রয়েছে। সম্পদ বিবরণীতে তার মালিকানায় দু’টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হবিগেঞ্জর মাধবপুরের সেলিমপুরে যৌথ মালিকানার পেট্টলপাম্প এবং গ্লোবাল লিংক লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা তিনি উল্লেখ করে ছিলেন। ৩৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং এক লাখ টাকা তার কাছে নগদ আছে বলে উল্লেখ ছিল। স্বর্ন ও মূল্যবান ধাতুর মধ্যে তার ১৫ তোলা, স্ত্রীর নামে ১০ তোলা এবং বাড়ির মূল্য ১০ লাখ টাকা তিনি উল্লেখ করে ছিলেন।

কামরানের ঘনিষ্ঠরা জানান, হলফনামায় তিনি সম্পত্তির যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন, বাস্তবে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনেকগুণ বেশি। তিনি তার প্রকৃত সম্পদ ও অর্থের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। কারণ, তিনি যে বাড়িতে বাস করেন, বর্তমান বাজারমূল্যে এর দাম হবে ৫ কোটি টাকার বেশি। নিজের এবং স্ত্রী সন্তানের নামে অনেক বেশি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও জানান তার ঘনিষ্টরা।

বিপুল এই অর্থ-বিত্ত সম্পর্কে জানতে বদর উদ্দীন আহম্মদ কামরানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। অন্য একজন ফোন ধরে বলেন, কামরান ভাই বাথরুমে আছেন। ২০ মিনিট পরে ফোন করুন। ২০ মিনিট পর ফোন করলে তিনি লাইন কেটে দেন।

তবে হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদ সম্পর্কে কামরান কয়েক দিন আগে সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, “আমি সম্পত্তি ও অর্থের কথা কিছুই লুকায়নি। সব টাকাই আমি সততার সাথে আয় করেছি। গত ৫ বছরে তার এত টাকা বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি জানান, মেয়র হিসেবে আমার প্রাপ্ত সম্পানির বাইরে আমার প্রবাসী আত্মীয়-স্বজন এবং আমার বোনেরা এসব টাকা আমাকে উপহার দিয়েছে। সব টাকারই আমি কর দিয়েছি। অস্বাভাবিকভাবে আমার টাকা বাড়েনি।”

1 comment:

  1. this is the easy way in bangladesh make self rich man or woman,we the citizen we the voter elected them what is their wrong?mainly our voters are uneducated,poor,needy,emotional,major peoples are innocent and soft heart,soft mentality,but our elected public leaders after elections forgot their past life,any way they collect the money directly. financial and all others selfish facility,our elected union member,union chairman,upzela chairman,member of perlament,(mp)ministers,using the power nonstop making money,their fourteen ganretion cant finish the stock ,they know and think they have power and ability the public and voter give them that,all leaders stolen country money and wealth,the leaders are innocent and clean even very wise,then this systems contain for ever,they are the leaders are not guilty ,we the public and voters are must be guilty for this,until our 70%or more citizen not be educated never change the mentality and liability we the all nation never change,thanks

    ReplyDelete

Powered by Blogger.