স্টিফেন র্যাপের পর্যবেক্ষণ
যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিফেন র্যাপের বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করার বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ও বিপুল রক্তপাতের পটভূমিতে এবারই তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারণ করল যে বিচার-প্রক্রিয়ায় অগ্রগতিতে তারা সন্তুষ্ট। লক্ষণীয় যে মার্কিন দূত বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আমার সন্তুষ্টি আর কোথায় আমার উদ্বেগ, এটা আমার বলা ঠিক হবে না।’ এ থেকে ইঙ্গিত মেলে যে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের স্পর্শকাতরতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছেন। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করার আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারেরা মানবাধিকার বিষয়ে সময় সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা বিস্মৃত হতে পারি না যে এই সচেতন মহল কখনোই একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচার অনুষ্ঠানে উৎসাহ জোগায়নি। ক্ষমতাসীন সরকার যখন এই বিচার অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়, তখন আমরা তাকে স্বাগত জানিয়েছি এবং আমাদের অবস্থান হচ্ছে, এই বিচার হতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। র্যাপের সফরকে ‘আইনের শাসন’সংশ্লিষ্ট বলা হলেও আমরা দেখিনি যে তিনি সার্বিকভাবে এদিকে নজর দিয়েছেন। তবে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বোধগম্য। রাষ্ট্রদূত র্যাপ আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে অপরাধের ভয়াবহতার কারণে অধিকাংশ মানুষ দোষী সাব্যস্তদের মৃত্যুদণ্ড চান। আমরা অবশ্য জানি না, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোনো ধরনের জরিপের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে কি না। তবে কয়েকটি ফাঁসির রায় এবং জামায়াতের বর্বরোচিত নাশকতার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূত র্যাপের ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন এবং সেখানে মানবতাবিরোধী বিচারের কাজ সঠিকভাবেই এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করা গুরুত্বপূর্ণ। নাশকতা না করে আইন অনুযায়ী আপিলের মাধ্যমে প্রতিকার লাভে সচেষ্ট হতে জামায়াতের প্রতি আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে তার বিদেশ নীতির স্থায়ী অবস্থানে পরিণত করা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে সরকারি দলের অতি উৎসাহীরা এই বিচার-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবাঞ্ছিত উক্তি করে অনভিপ্রেত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যে কারণে আদালতও তাঁদের একাধিকবার সতর্ক করে দিয়েছেন। আমরা আশা করব, বিচার-প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত ত্রুটি অপনোদনে সরকার তার পক্ষে সম্ভব সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে। ত্রুটি শোধরানোর সুযোগ রহিত হয়ে যায়নি। আবার জনগণ কালক্ষেপণ না করে অবশ্যই একাত্তরের গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দেখতে উদ্গ্রীব। র্যাপের সঙ্গে জামায়াতের নেতারা বৈঠকে বসেছেন এবং র্যাপের সন্তোষকে তাঁরা নাকচ করেননি। আশা করব, বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি নাশকতার পথ পরিহার করবে। সব বাধাবিপত্তি কাটিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ হোক—সেটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
No comments