লন্ডনে ড: কামাল- শাপলা চত্বর নিয়ে অপপ্রচার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা by সৈয়দ আনাস পাশা
৫ই মে দিবাগত রাতে ঢাকার শাপলা চত্বরে
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অভিযানকে
‘গণহত্যা’ বলে অপপ্রচারের তীব্র সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি
সম্পন্ন আইনজীবী, সাবেকমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড: কামাল
হোসেন।
বুধবার রাতে পূর্ব লন্ডনে চ্যানেল আই ইউরোপের
স্টুডিও তে নিজের লেখা বই ‘বাংলাদেশ: কুয়েস্ট ফর ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস’
এর প্রকাশনা উৎসবে বাংলানিউজের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এই অপপ্রচারের
সমালোচনা করেন।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhD_6pDRTXFXAugdwR0gxSaX0WdXrdBaKmcHaz_ZcaxVjjTtrLzNhaXkGTE0-xu9LbgqNk86tOmTdFy7V5Eku2sNOvSSyjEMYeeRzO31xGDjgS5ETZBreCkqR5qe5tSbqHSdAG1cN-RkNiI/s1600/Dr-Kamal-in-London-bg20130516082314.jpg)
তিনি বলেন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতানেত্রীরা যখন প্রকৃত ঘটনা জানবার আগেই এমনসব অপপ্রচার শুরু করেন তখন এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কি বা বলার আছে।
চ্যানেল আই ইউরোপের প্রধান নির্বাহী রেজা আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী শোয়েবের উপস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটেনের ছায়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ড: কামাল।
৫ই মে দিবাগত রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজত সমাবেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অভিযানকে বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদের ‘জেনোসাইড’ এর অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে ড: কামাল বলেন, হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে কোন তদন্তের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিতরা যে ‘জেনোসাইড’র অভিযোগ প্রচার করেছেন তা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।
ড: কামাল বলেন, হেফাজতকে এর আগে এপ্রিল মাসে সরকারের একজন মন্ত্রী ‘আমন্ত্রণ’ করে ঢাকায় নিয়ে আসলেন। নির্ধারিত সমাবেশ শেষে তাঁরা ঢাকা ছেড়েও গেলেন। কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে দিয়ে গেলেন তাদের ‘১৩ দফা’। ১৩ দফা না মানলে পরবর্তী মাসে ঢাকা অবরোধ করবেন, এমন হুমকিও দিয়ে গেলেন তারা। এই ১৩ দফা দেওয়ার পেছনের রহস্য কি? আর অবরোধ করার অধিকারই বা তাদের দিলো কে?।
বাংলাদেশের এ সংবিধান প্রণেতা বলেন, সভা সমাবেশ করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু অন্যজনের অবাধ চলাচলের অধিকারও সংবিধানে স্বীকৃত। হেফাজতের ১৩ দফা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, ১৩ দফার কোন কোন দফা মানা যেতে পারে। কেউ বলেছেন কোন কোন দফা কারযকর আছে। আবার কেউ বলেছেন, এসব দাবি মানতে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই, প্রচলিত আইনেই তা সম্ভব। আবার কোন কোন দফাকে মধ্যযুগের দফা বলে তা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা বলেও মন্তব্য এসেছে। আমার কথা হলো এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
৫ তারিখের হেফাজত অবরোধ কর্মসূচির নানা দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসহায় নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কারা ফায়দা হাসিল করতে চায় তা বের করতে হবে। সহিংসতা সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়ার পেছনের কুশীলব কারা জাতি তা জানতে চায়। একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
ড: কামাল বলেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার আজ নতুন নয়। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী আমাদের জনগণ বার বার এই অপচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক সৃষ্টি করে আবার সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমি বলি জনগণের প্রতিরোধের মুখে এই চেষ্টাও সফল হবে না। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ হয়তো নাস্তিক হতে পারেন, কিন্তু জাতি, সমাজ ও দেশ হিসেবে আমাদের নাস্তিক আখ্যায়িত করার ধর্মব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক কৌশলও ব্যর্থ কৌশল হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
গণজাগরণ মঞ্চকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে ড: কামাল বলেন, তরুণদের জাগরণই পারে একটি সমাজ বদলে দিতে। এটি অনেক আগ থেকেই আমরা বলে আসছি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় সন্দেহ থেকেই শাহবাগ গণজাগরণের সৃষ্টি। বিচার নিরপেক্ষ হয়েছে কি না, এমন সন্দেহ থেকেই তরুণরা ফুসে উঠেছিল। তরুণদের এই গণজাগরণ কোন একটি একক ইস্যুতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, আমি এটি তাদের বলেছি।
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পক্ষে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এমন মন্তব্য করে ড: কামাল বলেন, অনেকে বলেন আমাদের গণতন্ত্র চর্চা নতুন। আমি এর সাথে একমত না। ইতিহাস স্বাক্ষী সেই ১৮৭২ সালে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্র চর্চা করে আসছি। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ১৬৯ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭ আসন পেয়েছিলো।
ড: কামাল বলেন, রাজনৈতিক নেতারা সংলাপে বসবেন কি না, এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের নির্দেশ সংলাপে বসে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে রাজনীতিকদের। বিষয়টি এভাবেই দেখতে হবে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারে ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক রায়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায়গুলো নিয়ে যখন আপিল হচ্ছে, তখন আইনের মানুষ হিসেবে এখনই আমার মন্তব্য করা ঠিক নয়।
তবে ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে সহিংস প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, রায় পছন্দ না হলেও আইনের পথে হাটা উচিত, সহিংসতা নয়। আপিলের সুযোগতো আছে। আপিলের মাধ্যমেই রায় পছন্দ না হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করা যেতে পারে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নয়, অভিযুক্তদের সমর্থকদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন দেশের এই শীর্ষ আইনজীবী বলেন, ট্রাইব্যুনাল বা বিচার ব্যবস্থা যতই স্বচ্ছ ও নিরপক্ষে হউক, অভিযুক্তরা কোন সময়ই এটিকে ত্রুটিহীন বলে না, এটিই বাস্তবতা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ব্রিটেনের ছায়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার স্থান নেই, এটি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষকে বুঝতে হবে।
লন্ডনে তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা প্রভাব পড়েছে মন্তব্য করে রোশনারা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অনেকেই নিজেদের উদ্বেগ শেয়ার করেন আমাদের সাথে, ব্রিটিশ সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের দাবিও করেন কেউ কেউ।
কিন্তু একটি বিয়ষ আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমরা শুধু তাদের পরামর্শ দিতে পারি, কোন হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সংলাপের মাধ্যমে নিজেদের দুরত্ব কমিয়ে আনতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনৈতিক সংকটে সহিংসতা কোন সমাধান হতে পারে না, বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনীতিকদের এটি বুঝতে হবে, আরি এটি বুঝাতে আমরা শুধু সহায়ক ভুমিকাই পালন করতে পারি।
অনুষ্ঠানের শেষ পরযায়ে রোশনারা আলী এমপি, ড: কামাল হোসেনের লেখা ‘বাংলাদেশ: কুয়েস্ট ফর ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পরযন্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রচিত ‘বাংলাদেশ: কুয়েস্ট ফর ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ বইটি। বইটির প্রথম প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় গত মাসে। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৬দফা, ৬৯ এর গণ অভূত্থ্যান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhD_6pDRTXFXAugdwR0gxSaX0WdXrdBaKmcHaz_ZcaxVjjTtrLzNhaXkGTE0-xu9LbgqNk86tOmTdFy7V5Eku2sNOvSSyjEMYeeRzO31xGDjgS5ETZBreCkqR5qe5tSbqHSdAG1cN-RkNiI/s1600/Dr-Kamal-in-London-bg20130516082314.jpg)
তিনি বলেন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতানেত্রীরা যখন প্রকৃত ঘটনা জানবার আগেই এমনসব অপপ্রচার শুরু করেন তখন এটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কি বা বলার আছে।
চ্যানেল আই ইউরোপের প্রধান নির্বাহী রেজা আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী শোয়েবের উপস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটেনের ছায়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ড: কামাল।
৫ই মে দিবাগত রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজত সমাবেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের অভিযানকে বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদের ‘জেনোসাইড’ এর অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে ড: কামাল বলেন, হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে কোন তদন্তের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিতরা যে ‘জেনোসাইড’র অভিযোগ প্রচার করেছেন তা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।
ড: কামাল বলেন, হেফাজতকে এর আগে এপ্রিল মাসে সরকারের একজন মন্ত্রী ‘আমন্ত্রণ’ করে ঢাকায় নিয়ে আসলেন। নির্ধারিত সমাবেশ শেষে তাঁরা ঢাকা ছেড়েও গেলেন। কিন্তু ছেড়ে যাওয়ার আগে হঠাৎ করে দিয়ে গেলেন তাদের ‘১৩ দফা’। ১৩ দফা না মানলে পরবর্তী মাসে ঢাকা অবরোধ করবেন, এমন হুমকিও দিয়ে গেলেন তারা। এই ১৩ দফা দেওয়ার পেছনের রহস্য কি? আর অবরোধ করার অধিকারই বা তাদের দিলো কে?।
বাংলাদেশের এ সংবিধান প্রণেতা বলেন, সভা সমাবেশ করার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু অন্যজনের অবাধ চলাচলের অধিকারও সংবিধানে স্বীকৃত। হেফাজতের ১৩ দফা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কেউ বলেছেন, ১৩ দফার কোন কোন দফা মানা যেতে পারে। কেউ বলেছেন কোন কোন দফা কারযকর আছে। আবার কেউ বলেছেন, এসব দাবি মানতে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই, প্রচলিত আইনেই তা সম্ভব। আবার কোন কোন দফাকে মধ্যযুগের দফা বলে তা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা বলেও মন্তব্য এসেছে। আমার কথা হলো এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
৫ তারিখের হেফাজত অবরোধ কর্মসূচির নানা দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসহায় নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কারা ফায়দা হাসিল করতে চায় তা বের করতে হবে। সহিংসতা সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়ার পেছনের কুশীলব কারা জাতি তা জানতে চায়। একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
ড: কামাল বলেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার আজ নতুন নয়। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী আমাদের জনগণ বার বার এই অপচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। আজ আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক সৃষ্টি করে আবার সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। কিন্তু আমি বলি জনগণের প্রতিরোধের মুখে এই চেষ্টাও সফল হবে না। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ হয়তো নাস্তিক হতে পারেন, কিন্তু জাতি, সমাজ ও দেশ হিসেবে আমাদের নাস্তিক আখ্যায়িত করার ধর্মব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক কৌশলও ব্যর্থ কৌশল হিসেবে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
গণজাগরণ মঞ্চকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে ড: কামাল বলেন, তরুণদের জাগরণই পারে একটি সমাজ বদলে দিতে। এটি অনেক আগ থেকেই আমরা বলে আসছি। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় সন্দেহ থেকেই শাহবাগ গণজাগরণের সৃষ্টি। বিচার নিরপেক্ষ হয়েছে কি না, এমন সন্দেহ থেকেই তরুণরা ফুসে উঠেছিল। তরুণদের এই গণজাগরণ কোন একটি একক ইস্যুতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, আমি এটি তাদের বলেছি।
গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের পক্ষে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ এমন মন্তব্য করে ড: কামাল বলেন, অনেকে বলেন আমাদের গণতন্ত্র চর্চা নতুন। আমি এর সাথে একমত না। ইতিহাস স্বাক্ষী সেই ১৮৭২ সালে স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা গণতন্ত্র চর্চা করে আসছি। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ১৬৯ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭ আসন পেয়েছিলো।
ড: কামাল বলেন, রাজনৈতিক নেতারা সংলাপে বসবেন কি না, এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণের নির্দেশ সংলাপে বসে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে রাজনীতিকদের। বিষয়টি এভাবেই দেখতে হবে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারে ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক রায়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায়গুলো নিয়ে যখন আপিল হচ্ছে, তখন আইনের মানুষ হিসেবে এখনই আমার মন্তব্য করা ঠিক নয়।
তবে ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে সহিংস প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, রায় পছন্দ না হলেও আইনের পথে হাটা উচিত, সহিংসতা নয়। আপিলের সুযোগতো আছে। আপিলের মাধ্যমেই রায় পছন্দ না হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করা যেতে পারে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নয়, অভিযুক্তদের সমর্থকদের এমন অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন দেশের এই শীর্ষ আইনজীবী বলেন, ট্রাইব্যুনাল বা বিচার ব্যবস্থা যতই স্বচ্ছ ও নিরপক্ষে হউক, অভিযুক্তরা কোন সময়ই এটিকে ত্রুটিহীন বলে না, এটিই বাস্তবতা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ব্রিটেনের ছায়া আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার স্থান নেই, এটি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষকে বুঝতে হবে।
লন্ডনে তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা প্রভাব পড়েছে মন্তব্য করে রোশনারা বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে অনেকেই নিজেদের উদ্বেগ শেয়ার করেন আমাদের সাথে, ব্রিটিশ সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের দাবিও করেন কেউ কেউ।
কিন্তু একটি বিয়ষ আমাদের বুঝতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমরা শুধু তাদের পরামর্শ দিতে পারি, কোন হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সংলাপের মাধ্যমে নিজেদের দুরত্ব কমিয়ে আনতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। রাজনৈতিক সংকটে সহিংসতা কোন সমাধান হতে পারে না, বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনীতিকদের এটি বুঝতে হবে, আরি এটি বুঝাতে আমরা শুধু সহায়ক ভুমিকাই পালন করতে পারি।
অনুষ্ঠানের শেষ পরযায়ে রোশনারা আলী এমপি, ড: কামাল হোসেনের লেখা ‘বাংলাদেশ: কুয়েস্ট ফর ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পরযন্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে রচিত ‘বাংলাদেশ: কুয়েস্ট ফর ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস’ বইটি। বইটির প্রথম প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায় গত মাসে। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ৬দফা, ৬৯ এর গণ অভূত্থ্যান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
No comments