বক্তব্য নিয়ে আইনমন্ত্রী-র্যাপের দুই ধরনের কথা- জোর করে বিতর্কিত কিছুকে স্বচ্ছ বানানো যায় না
বাংলাদেশে বাস্তবে যা হয় তা বলা হয় না; যা বলা হয় তা বাস্তবে ঘটে নাÑ এমন একটি বিষয় দেশের নীতিনির্ধারক ও কিছু কিছু গণমাধ্যমের ব্যাপারে বলা হয়। বিদেশী কূটনীতিক, যারা বাংলাদেশের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের সাথে কথা বলেন, তারাও মিসকোডের ব্যাপারে বেশ উদ্বিগ্ন।
এমনকি কেউ কেউ এমন আছেন তারা যা বলেছেন তার ব্রিফিং সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হোক তা চান না। এই পরিস্থিতি একটি স্বাধীন দেশের জন্য মর্যাদাকর না হলেও এটি এখন নিত্যই যেন ঘটছে। যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপের সাথে আইনমন্ত্রীর সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তার বক্তব্য বলে যা জানানো হয়েছে, তার সাথে পরবর্তীকালে সংবাদ সম্মেলনে র্যাপ যা বলেছেন তার কোনো মিল নেই।ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ নিয়ে স্টিফেন জে র্যাপ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। অন্য দিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন জে র্যাপ বিচার নিয়ে সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, আমি এখনো সন্তুষ্ট নই। বিচার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে নয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দিকে র্যাপ বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড প্রদান বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া উচিত। বিচারকে বিতর্কিত করার মতো কোনো উপাদান নেই মর্মে র্যাপ উল্লেখ করেছেনÑ এমনটি বলেছেন আইনমন্ত্রী। অন্য দিকে র্যাপ বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচার হচ্ছেÑ এ অভিযোগ উঠেছে প্রতিবারই। তাই এটাকে আরো বেদনাদায়ক করার জন্য রায় হয়ে যাওয়ার পর আইন সংশোধন করা ভালো দেখায় না। কোনো পক্ষের দাবির দিকে তাকিয়ে নয়, বরং ঘটনা ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই বিচারকদের রায় দেয়া উচিত। রাজনীতি নয়, বরং ফ্যাক্টসের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
বাংলাদেশের যুুদ্ধাপরাধ ইস্যু শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচিত ইস্যু। এই ইস্যুতে বাংলাদেশে যতসংখ্যক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে, এ রকম কোনো রাজনৈতিক ঘটনা স্বাধীনতার পর দেখা যায় না। যুদ্ধাপরাধ বিচারে কেউ সেভাবে বিরোধিতা করছে না। সবাই বলছে এই বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ্যমূলক এর শিকার বানানো উচিত নয়। সরকারপক্ষ এ ধরনের পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে নিজস্ব অভিমত দিতেই পারে। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কথা বলার ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিতে না পারলে সেটি রাষ্ট্রের জন্য হয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমরা মনে করি, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন করা উচিত। এ জন্য প্রয়োজনে যেসব বিতর্ক এ নিয়ে উঠছে তা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চে অথবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো যেতে পারে। আর এ বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করা হলে এ বিচারকার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে আগামী নির্বাচনে এ বিষয়ে একটি গণভোটও করা যেতে পারে। আর একই সাথে মন্ত্রিপর্যায়ের ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েÑ এমন কথা বলাও উচিত নয় এ ধরনের ইস্যুতে।
No comments