জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি-চরম ভোগান্তি সাধারণ মানুষের by হারুন-আর-রশিদ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবনে অবর্ণনীয় দুরবস্থা নেমে
এসেছে। বোরো চাষের শুরুতে ডিজেলের দাম বাড়ায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে।
অথচ
সরকার বলছে, আমরা কৃষকবান্ধব ও কৃষিবান্ধব।’ এসব কথা বাস্তবতার সাথে মেলে
না। বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমাদের
চেয়ে বিগত বিএনপি সরকার জ্বালানি তেলের দাম বেশি বাড়িয়েছে।’ প্রশ্ন হলো,
সে অভিযোগ যদি সত্যও হয়, একই কাজ কেন এ সরকার করছে? সব সময় অতীতের
সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে ক্ষমতাসীনদের নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার এই অপচেষ্টা
জনগণ ৪২ বছর ধরে দেখে আসছে। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। নির্বাচনের আগে কী
ওয়াদা করেছিলেন আর এখন কী করছেন, মন্ত্রীরা নিজেদের কাছে নিজেরাই এই
প্রশ্ন রাখা উচিত।
বাজারে একটি লাউয়ের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চার বছরে তরিতরকারির দাম বেড়ে চার গুণ কেন হলো, এর জবাব আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে দেবে কি? বিগত চার বছরে কেন পাঁচবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেল? অতীতে দেখেছি, পেট্রল ও অকটেনের মূল্য লিটারপ্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি পেত। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটারপ্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আবার শুনছি, সিএনজি গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও একই হারে বাড়বে। এতে জনগণের দুর্গতি কতটা বাড়বেÑ একবার সেটি চিন্তা করুন। কিছু দিন আগেও প্রতি লিটার অকটেন ও পেট্রলের দাম ছিল যথাক্রমে ৯৪ ও ৯১ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল ৬১ টাকা। আজ সেই অকটেন ও পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৯ ও ৯৬ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৮ টাকা। একজন কৃষকের পক্ষে এক লিটার ডিজেল ৬৮ টাকা দরে কিনে সেচ দেয়া ও চাষ করা সম্ভব নয়। লোকজন বলছেন, কুইক রেন্টাল মানে কুইক লুটপাট, আরো বলছে, জনগণের পকেট মারতে তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এদিকে, খাদ্যপণ্যের মূল্য অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
এই সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। পেট্রল ছিল ৭৪ টাকা ও অকটেন ৭৭ টাকা। ক্ষমতায় এসে প্রথম মাসেই জনগণের বাহবা পাওয়ার জন্য ১২ জানুয়ারি ২০০৯ সালে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা কমায়। এরপর ২০১১ সালে পরপর চার দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। দেশের কৃষককে কষ্ট দিয়ে বিদেশের দাতাদের খুশি করতে সরকার এই কাজটি বারবার করেছে। ২০১১ সালের ৬ মে লিটারপ্রতি ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেন ও ফার্নেস ওয়েলের দাম দুই টাকা করে বাড়ানো হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে প্রধান চার জ্বালানির দাম লিটারে ৫ টাকা করে এবং ফার্নেস অয়েল ৮ টাকা বাড়ানো হয়। সে বছর ১০ নভেম্বর ওই পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা করে বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ, ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর, এসব তেলের দাম একই হারে বাড়ানো হয়। আর এখন গত ৪ জানুয়ারি পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগেই ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা দিয়েছিল, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তারা হরতাল দেবে। ফলে ৬ জানুয়ারি হরতাল পালিত হলো। হরতাল দিলে বা না দিলেই বা কী; এ সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সিদ্ধান্তেই অটল থাকে। ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার লোভে সাধারণ মানুষ এবং কৃষকের দুর্ভোগ এভাবে সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলাফল আগামী নির্বাচন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, তাহলে সরকার দেখতে পাবে।
এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল নয়। তবে অর্থনীতি সরকারের কারণে মজবুত হয়নি। প্রবাসে মেহনতী মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত টাকা ডলার হয়ে আসায় রিজার্ভ বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সেই তুলনায় আইএমএফের ১০০ কোটি ডলার তুচ্ছ। এ দিকে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য কৃষক পাচ্ছেন না। এমন এক সময়ে পরপর পাঁচবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। এখন দ্রুত সেবা ও পণ্য খাতে মূল্য যে বাড়বে, এটি সুনিশ্চিত। সরকার যে কাজটি করেছে, বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজ একে পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিষয়টি নির্বাহী আদেশে না করে সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করে আলোচনা করলে সেটি গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুযায়ী হতো।
অনেকেই বলেছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছেÑ এটি পুরোপুরি সত্য নয়। বিশেষ একটি শ্রেণী বা গোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এই শ্রেণী সব সময় সব সরকারের আমলে ভালো থাকে। বৈধ আয় বা বেতনের টাকায় তারা চলে নাÑ চলে ঘুষের টাকায়, অবৈধ আয়ের টাকায়। অপর দিকে অবৈধ পথে যেতে মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেকেই সহজ সরলভাবে বলেই ফেলেন, ‘আর পারছি না; সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়ে চুরির বা ঘুষের পথ ধরেছি।’ সরকারের ভুল নীতির কারণেই মানুষ সৎ থাকতে পারছে না। এই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে। অথচ বাজার অসৎ চক্র ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। যেমনি ইচ্ছা তেমনি করে তারা দাম বাড়িয়ে নিত্যদিন মানুষের পকেট মারছে, আর ভরছে নিজেদের পকেট। ইহকাল ও পরকালে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন আল্লাহ তায়ালা।
আমাদের দেশে বিগত ১০ বছরে রেলভাড়া বেড়ে হয়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। অন্য দিকে, পাশের রাষ্ট্র ভারতে রেলভাড়া ১০ বছর পর বেড়েছে সর্বোচ্চ মাত্র ১০ পয়সা প্রতি কিলোমিটারে। রেল মন্ত্রণালয়ে এক বছরে দায়িত্বে ছিলেন তিন মন্ত্রী। কিন্তু ফলাফল শূন্যই বলা যায়। যা হোক, আজ যদি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকত, তাহলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবি দাওয়া নিয়ে এত দিনে শতাধিক হরতাল হতো। এমনকি তখন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকা হয়তো সম্ভব হতো না, দেশে নৈরাজ্য দেখা যেত।
বাজারে একটি লাউয়ের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। চার বছরে তরিতরকারির দাম বেড়ে চার গুণ কেন হলো, এর জবাব আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে দেবে কি? বিগত চার বছরে কেন পাঁচবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেল? অতীতে দেখেছি, পেট্রল ও অকটেনের মূল্য লিটারপ্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি পেত। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটারপ্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আবার শুনছি, সিএনজি গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও একই হারে বাড়বে। এতে জনগণের দুর্গতি কতটা বাড়বেÑ একবার সেটি চিন্তা করুন। কিছু দিন আগেও প্রতি লিটার অকটেন ও পেট্রলের দাম ছিল যথাক্রমে ৯৪ ও ৯১ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ছিল ৬১ টাকা। আজ সেই অকটেন ও পেট্রলের দাম বেড়ে হয়েছে ৯৯ ও ৯৬ টাকা। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৮ টাকা। একজন কৃষকের পক্ষে এক লিটার ডিজেল ৬৮ টাকা দরে কিনে সেচ দেয়া ও চাষ করা সম্ভব নয়। লোকজন বলছেন, কুইক রেন্টাল মানে কুইক লুটপাট, আরো বলছে, জনগণের পকেট মারতে তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এদিকে, খাদ্যপণ্যের মূল্য অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
এই সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। পেট্রল ছিল ৭৪ টাকা ও অকটেন ৭৭ টাকা। ক্ষমতায় এসে প্রথম মাসেই জনগণের বাহবা পাওয়ার জন্য ১২ জানুয়ারি ২০০৯ সালে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি দুই টাকা কমায়। এরপর ২০১১ সালে পরপর চার দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। দেশের কৃষককে কষ্ট দিয়ে বিদেশের দাতাদের খুশি করতে সরকার এই কাজটি বারবার করেছে। ২০১১ সালের ৬ মে লিটারপ্রতি ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেন ও ফার্নেস ওয়েলের দাম দুই টাকা করে বাড়ানো হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে প্রধান চার জ্বালানির দাম লিটারে ৫ টাকা করে এবং ফার্নেস অয়েল ৮ টাকা বাড়ানো হয়। সে বছর ১০ নভেম্বর ওই পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা করে বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ, ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর, এসব তেলের দাম একই হারে বাড়ানো হয়। আর এখন গত ৪ জানুয়ারি পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে ৫ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। আগেই ১৮ দলীয় জোট ঘোষণা দিয়েছিল, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তারা হরতাল দেবে। ফলে ৬ জানুয়ারি হরতাল পালিত হলো। হরতাল দিলে বা না দিলেই বা কী; এ সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সিদ্ধান্তেই অটল থাকে। ১০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার লোভে সাধারণ মানুষ এবং কৃষকের দুর্ভোগ এভাবে সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলাফল আগামী নির্বাচন যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, তাহলে সরকার দেখতে পাবে।
এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল নয়। তবে অর্থনীতি সরকারের কারণে মজবুত হয়নি। প্রবাসে মেহনতী মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত টাকা ডলার হয়ে আসায় রিজার্ভ বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সেই তুলনায় আইএমএফের ১০০ কোটি ডলার তুচ্ছ। এ দিকে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য কৃষক পাচ্ছেন না। এমন এক সময়ে পরপর পাঁচবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। এখন দ্রুত সেবা ও পণ্য খাতে মূল্য যে বাড়বে, এটি সুনিশ্চিত। সরকার যে কাজটি করেছে, বিশেষজ্ঞ ও সুশীলসমাজ একে পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিষয়টি নির্বাহী আদেশে না করে সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করে আলোচনা করলে সেটি গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুযায়ী হতো।
অনেকেই বলেছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছেÑ এটি পুরোপুরি সত্য নয়। বিশেষ একটি শ্রেণী বা গোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এই শ্রেণী সব সময় সব সরকারের আমলে ভালো থাকে। বৈধ আয় বা বেতনের টাকায় তারা চলে নাÑ চলে ঘুষের টাকায়, অবৈধ আয়ের টাকায়। অপর দিকে অবৈধ পথে যেতে মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেকেই সহজ সরলভাবে বলেই ফেলেন, ‘আর পারছি না; সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয়ে চুরির বা ঘুষের পথ ধরেছি।’ সরকারের ভুল নীতির কারণেই মানুষ সৎ থাকতে পারছে না। এই সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে। অথচ বাজার অসৎ চক্র ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। যেমনি ইচ্ছা তেমনি করে তারা দাম বাড়িয়ে নিত্যদিন মানুষের পকেট মারছে, আর ভরছে নিজেদের পকেট। ইহকাল ও পরকালে তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন আল্লাহ তায়ালা।
আমাদের দেশে বিগত ১০ বছরে রেলভাড়া বেড়ে হয়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। অন্য দিকে, পাশের রাষ্ট্র ভারতে রেলভাড়া ১০ বছর পর বেড়েছে সর্বোচ্চ মাত্র ১০ পয়সা প্রতি কিলোমিটারে। রেল মন্ত্রণালয়ে এক বছরে দায়িত্বে ছিলেন তিন মন্ত্রী। কিন্তু ফলাফল শূন্যই বলা যায়। যা হোক, আজ যদি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকত, তাহলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবি দাওয়া নিয়ে এত দিনে শতাধিক হরতাল হতো। এমনকি তখন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকা হয়তো সম্ভব হতো না, দেশে নৈরাজ্য দেখা যেত।
No comments