পুলিশ-শিবির ব্যাপক সংঘর্ষ
মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে লঙ্কাকাণ্ড। থেমে থেমে তা চলে ঘণ্টাব্যাপী।
মতিঝিল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত রণক্ষেত্র। পুরো রাজধানী অচল পুলিশের
গুলি-টিয়ার শেল, বেধড়ক লাঠিপেটা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও গণহারে গ্রেফতার।
থানার
সামনেই পুলিশের দুই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ। রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক। মুহূর্তেই
ফাঁকা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। ইসলামী ছাত্রশিবিরের পূর্বনির্ধারিত
মিছিলে পুলিশের বাধা ও হামলায় এভাবেই গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানী
তথা দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত মতিঝিল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত
এলাকা। এর ফলে কার্যত অচল হয়ে যায় পুরো রাজধানী। এ সময় আড়াই শতাধিক
লোক আহত হন। পুলিশ বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাদের আরো দাবি এই ঘটনায় মতিঝিল থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত
হয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পুলিশের গুলিতে ৭৭ জনসহ
তাদের প্রায় ২৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুরকৃত গাড়িগুলোর মধ্যে
অর্থমন্ত্রীর একটি প্রটোকল গাড়ি এবং তিন সচিবের গাড়িও রয়েছে। সচিবালয়
এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে
প্রবেশ করেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহিয়াহকে গ্রেফতারের পর নির্যাতনের প্রতিবাদসহ কয়েকটি দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি দৈনিক বাংলার দিকে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিলটি বের হওয়ার পরই পুলিশ চার দিক থেকে মিছিল লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, গ্রেনেড ও গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ সময় পুলিশের সাথে ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। শিবির সমর্থকেরা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারা এ সময় রাস্তার ওপর বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী মতিঝিল থানা গলিতে ঢুকে থানার সামনে রাখা দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ভয়ে থানার গেট আটকে দেয় পুলিশ। থানা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কন্ট্রোল রুমকে জানানো হয় থানা লুট হয়ে যেতে পারে। ছাত্রশিবিরের সমর্থক-কর্মীরা গুলিস্তান ও সচিবালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দায়িত্বরত পুলিশের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কিছু পটকার শব্দ পাওয়া যায়। এতে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। পুলিশ এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলি ব্যবহার করে। পুলিশ যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই নির্মম লাঠিপেটা, বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটানো, বুট দিয়ে লাথি দেয়াসহ নানাভাবে নির্যাতন চালায়। বেশ কয়েকজনকে ধরার পর পেটাতে পেটাতে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জড়ো হতে থাকে। মিছিলটি পূর্বঘোষিত থাকায় পুলিশও আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারিও ছিল বরাবরের তুলনায় কড়া। এর মধ্যেই ইসলামী ছাত্রশিবির মিছিল বের করলে পুলিশ বেকায়দায় পড়ে যায়। শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের আধাঘণ্টার ওপরে লেগে যায়। এ দিকে মিছিলটি সচিবালয়ের পাশ অতিক্রম করার সময় খবর ছড়িয়ে পড়ে সচিবালয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। এতে সচিবালয়ের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সচিবালয়ের সব গেটে তাৎক্ষণিকভাবে রণপ্রস্তুতি নেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহিয়ার মুক্তির দাবি এবং শিাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এই মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির। মিছিলকারীরা কয়েক শ’ যানবাহন ভাঙচুর করে এবং পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ওই সব এলাকা থেকে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে পিটিয়ে রাস্তায় শুইয়ে ফেলে পুলিশ। অজ্ঞাত এক যুবকের মাথা পুলিশ রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে গাড়িতে তুলেও পুলিশ নির্যাতন চালিয়েছে। আবার অনেককে থানায় নিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ পথচারী বলে জানা যায়। গ্রেফতারের সময় তারা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমরা পথচারী।’ কিন্তু এরপরেও পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।
মতিঝিল পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান জানান, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল থানায় ২৫ জন, পল্টন মডেল থানায় ২০ জন ও শাহজাহানপুর থানায় সাতজন। তবে আটকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ বিােভ মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে।
মতিঝিল থানার কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোক্তাদির জানান, শিবির নেতাকর্মীদের হামলায় মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হায়াতুজ্জামান মোল্লা ও সেকেন্ড অফিসার সাজ্জাদসহ ১৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিােভ মিছিল থেকে অর্ধশতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। মতিঝিলসহ অন্যান্য থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ জনেরও বেশি শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট দিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিরো পয়েন্টে সকাল সোয়া ১০টায় হঠাৎ করেই শতাধিক শিবিরকর্মী স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। এ সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম সারোয়ার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে শিবিরকর্মীরা তাকে গণপিটুনি দেয়। তারা নবাব আব্দুল গনি রোড দিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রটোকলের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় গাড়িতে বসে থাকা অর্থমন্ত্রীর গানম্যান কনস্টেবল দেলোয়ার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করে। সচিবালয় গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কনস্টেবল মনির হোসেন ও কনস্টেবল মাইন উদ্দিন শিবিরকর্মীদের বাধা দিলে তাদের গণপিটুনি দেয়া হয়। শিবিরকর্মীরা এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি জিপগাড়ি ভাঙচুর করে। এসব গাড়ি সচিবরা ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। পরে জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে শিবিরকর্মীরা পাশের ওসমানী উদ্যানে ঢুকে যায়।
ঘটনার পরপর সচিবালয় ও মতিঝিল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার ঘটনায় মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ ও শাজাহানপুর থানায় ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মতিঝিলে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
হামলার ঘটনায় আহত এএসআই লিটনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মতিঝিল থানার ওসি অপারেশন অফিসার এসআই সাজ্জাদ হোসেন, গুলিস্তানের পেট্রোল ইন্সপেক্টর সানোয়ার হোসেন, অর্থমন্ত্রীর দেহরক্ষী কনস্টেবল দেলোয়ার, কনস্টেবল মোখলেসুর রহমান, নাজমুল, কিংকন সবুজ, শরিফুল ইসলাম, সারোয়ার, মিলন মোল্লা, বজলুর রহমানসহ ১৮ পুলিশ সদস্যকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ। ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনায় তাদের ২৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহিয়াহকে গ্রেফতারের পর নির্যাতনের প্রতিবাদসহ কয়েকটি দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি দৈনিক বাংলার দিকে যাচ্ছিল। সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিলটি বের হওয়ার পরই পুলিশ চার দিক থেকে মিছিল লক্ষ্য করে টিয়ার শেল, গ্রেনেড ও গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ সময় পুলিশের সাথে ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। শিবির সমর্থকেরা চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারা এ সময় রাস্তার ওপর বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী মতিঝিল থানা গলিতে ঢুকে থানার সামনে রাখা দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ভয়ে থানার গেট আটকে দেয় পুলিশ। থানা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কন্ট্রোল রুমকে জানানো হয় থানা লুট হয়ে যেতে পারে। ছাত্রশিবিরের সমর্থক-কর্মীরা গুলিস্তান ও সচিবালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দায়িত্বরত পুলিশের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কিছু পটকার শব্দ পাওয়া যায়। এতে আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। পুলিশ এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলি ব্যবহার করে। পুলিশ যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই নির্মম লাঠিপেটা, বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটানো, বুট দিয়ে লাথি দেয়াসহ নানাভাবে নির্যাতন চালায়। বেশ কয়েকজনকে ধরার পর পেটাতে পেটাতে অচেতন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রাখে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জড়ো হতে থাকে। মিছিলটি পূর্বঘোষিত থাকায় পুলিশও আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারিও ছিল বরাবরের তুলনায় কড়া। এর মধ্যেই ইসলামী ছাত্রশিবির মিছিল বের করলে পুলিশ বেকায়দায় পড়ে যায়। শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের আধাঘণ্টার ওপরে লেগে যায়। এ দিকে মিছিলটি সচিবালয়ের পাশ অতিক্রম করার সময় খবর ছড়িয়ে পড়ে সচিবালয়ে হামলা চালানো হচ্ছে। এতে সচিবালয়ের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সচিবালয়ের সব গেটে তাৎক্ষণিকভাবে রণপ্রস্তুতি নেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বাতিল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো: ইয়াহিয়ার মুক্তির দাবি এবং শিাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এই মিছিল বের করে ইসলামী ছাত্রশিবির। মিছিলকারীরা কয়েক শ’ যানবাহন ভাঙচুর করে এবং পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ওই সব এলাকা থেকে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে পিটিয়ে রাস্তায় শুইয়ে ফেলে পুলিশ। অজ্ঞাত এক যুবকের মাথা পুলিশ রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দেয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে গাড়িতে তুলেও পুলিশ নির্যাতন চালিয়েছে। আবার অনেককে থানায় নিয়ে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই নিরপরাধ পথচারী বলে জানা যায়। গ্রেফতারের সময় তারা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমরা পথচারী।’ কিন্তু এরপরেও পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।
মতিঝিল পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান জানান, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে মতিঝিল থানায় ২৫ জন, পল্টন মডেল থানায় ২০ জন ও শাহজাহানপুর থানায় সাতজন। তবে আটকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত দাবি করেছেন, শান্তিপূর্ণ বিােভ মিছিলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে।
মতিঝিল থানার কর্তব্যরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোক্তাদির জানান, শিবির নেতাকর্মীদের হামলায় মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হায়াতুজ্জামান মোল্লা ও সেকেন্ড অফিসার সাজ্জাদসহ ১৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিােভ মিছিল থেকে অর্ধশতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। মতিঝিলসহ অন্যান্য থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ জনেরও বেশি শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট দিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জিরো পয়েন্টে সকাল সোয়া ১০টায় হঠাৎ করেই শতাধিক শিবিরকর্মী স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। এ সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম সারোয়ার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে শিবিরকর্মীরা তাকে গণপিটুনি দেয়। তারা নবাব আব্দুল গনি রোড দিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের প্রটোকলের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় গাড়িতে বসে থাকা অর্থমন্ত্রীর গানম্যান কনস্টেবল দেলোয়ার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে মারধর করে। সচিবালয় গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কনস্টেবল মনির হোসেন ও কনস্টেবল মাইন উদ্দিন শিবিরকর্মীদের বাধা দিলে তাদের গণপিটুনি দেয়া হয়। শিবিরকর্মীরা এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি জিপগাড়ি ভাঙচুর করে। এসব গাড়ি সচিবরা ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। পরে জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে শিবিরকর্মীরা পাশের ওসমানী উদ্যানে ঢুকে যায়।
ঘটনার পরপর সচিবালয় ও মতিঝিল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলার ঘটনায় মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ ও শাজাহানপুর থানায় ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মতিঝিলে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
হামলার ঘটনায় আহত এএসআই লিটনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মতিঝিল থানার ওসি অপারেশন অফিসার এসআই সাজ্জাদ হোসেন, গুলিস্তানের পেট্রোল ইন্সপেক্টর সানোয়ার হোসেন, অর্থমন্ত্রীর দেহরক্ষী কনস্টেবল দেলোয়ার, কনস্টেবল মোখলেসুর রহমান, নাজমুল, কিংকন সবুজ, শরিফুল ইসলাম, সারোয়ার, মিলন মোল্লা, বজলুর রহমানসহ ১৮ পুলিশ সদস্যকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ। ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনায় তাদের ২৫০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
No comments