সাইকেলে বাংলাদেশ ভ্রমণ by তাহমিনা হক
নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক। সময় তখন সকাল ১১টা। বড় চুল ও গোঁফওয়ালা এক তরুণ সাইকেলে বসা। পাশের রিকশায় এক শিশু তাঁকে দেখে ভয় পায়। শিশুটির মা ওই তরুণকে সাপুড়ের পরিচয় তাকে দেয়। রিকশা থামিয়ে শিশুটি তখন সাপের খেলা দেখার বায়না ধরে এবং কাঁদতে শুরু করে। সাপটি ঘুমিয়ে আছে বলে সে শিশুটিকে জানায় এবং চকলেট দিয়ে কান্না থামায়। বলছিলাম ৫৫ দিনে সাইকেলযোগে বাংলাদেশ ভ্রমণকারী ২৩ বছর বয়সী তরুণ শরিফুল ইসলামের কথা। এই তরুণ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সাইকেলে ভ্রমণের মাধ্যমে ‘শিশুদের স্বার্থে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক স্লোগান প্রচার করেন। ৫৫ দিনব্যাপী দীর্ঘ ভ্রমণকালে তিনি প্রায় ৩৯৭৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন এবং একদিনে সর্বোচ্চ ১৩১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। এ বছরের ২৪ এপ্রিল পর্যটন নগর কক্সবাজারে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ সম্পূর্ণ করেন। ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ নামের একটি ক্লাব থেকে তিনি প্রথম এই ভ্রমণ করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ক্লাবটি হাইকিং, বিচ ওয়াকিং, ম্যারাথন, মাউন্টেনিয়ারিং, ট্রেকিং, সাইক্লিং, সাঁতারসহ সব রকম অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশগ্রহণ ও আয়োজন করে যাচ্ছে। নিজ খরচ ও কয়েকটি সংস্থার অর্থায়নে তিনি এ ভ্রমণ করেছেন। নরসিংদী জেলার রায়পুরার এই শরিফুল এশীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সভার প্রকাশনী বিভাগে কাজ করেন। একাডেমিক শিক্ষায় আনন্দ খুঁজে পান না বলে তিনি চারদিকের পরিবেশ থেকে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করেন। শিশুরা স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারবে, অনুকূল পরিবেশে তাদের দাবিগুলো পূরণ হবে এবং আগামী এ প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য তাঁর এ উদ্যোগ। তিনি ভ্রমণকালীন পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে এর প্রতিকার করার আহ্বান জানান এবং সাইকেল চালানোর উপকারিতা সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন করেন। তাঁর সম্বল ছিল তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ ও সাইকেলের জিনিসপত্র। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার সময় তিনি নিয়মিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন। সাইকেলের গতি ধীরসম্পন্ন হওয়ায় মানুষের কাছে তাঁর প্রচারিত বার্তাগুলো দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেই প্রচারবিমুখ সাইক্লিস্টের শখবশত এই ভ্রমণ। ভ্রমণকালে রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, কুষ্টিয়া, খুলনা, খাগড়াছড়ি জেলাগুলো তাঁর ভালো লেগেছে। আর বাঙালির আতিথিয়তা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। শরিফুল তাঁর ভালো লাগার কিছু অভিজ্ঞতা জানালেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে খুলনা যাওয়ার সময় একটি জায়গা পড়বে চুকনগর। চুকনগর দুটি কারণে বিখ্যাত। এখানে পাওয়া যায় চুকনগরের বিখ্যাত চুইঝাল নামের একটি খাবার। চুই নামক গাছের লতা দিয়ে রান্না করা খাসির মাংস। খেতে বেশ ঝাল কিন্তু মজার। আরেকটি হলো চুকনগর বধ্যভূমি। ধারণা করা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছিল (প্রায় ১৫ হাজারের মতো)। শহীদদের স্মৃতিতে এখানে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। চুকনগরের স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য সঙ্গী হিসেবে পেলাম অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শিমুল নামের একটি ছেলেকে। সে আমাকে স্মৃতিসৌধে নিয়ে গেল এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল। সাতক্ষীরায় গিয়ে উঠলাম পূর্ব পরিচিত কাজী সোহেল ভাইয়ের বাসায়। তাঁর বাসা সাতক্ষীরার কলারোয়া থানায়। সেখানে সোহেল ভাইয়ের মাধ্যমে পরিচয় হলো সুভাষ সরকারের সঙ্গে। সুভাষ দা মূলত একটি সেলুনে কাজ করেন, সেলুনটি তাঁর নিজেরই। তাঁর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ, এখানকার স্থানীয় যত শিক্ষিত ছেলে আছে তারা সবাই তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নেয় ঢাকায় গিয়ে কোন কলেজে বা ইউনিভার্সিটিতে, কোন বিষয়ে পড়বে, কার কাছে বা কোথায় উঠবে—ওই বিষয়ে বেশ ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই ছাত্ররা তাঁকে বেশ পছন্দও করেন। তিনি ছাত্রদের জন্য নিয়মিত নিজ খরচে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকা রাখেন। এখানকার ছাত্ররা যাঁরা ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসেন, তাঁরা সবাই প্রথমে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে।
খুলনায় গিয়ে বেশ মজার একটি অভিজ্ঞতা হলো। সেখানে থাকার ব্যবস্থা ছিল খুলনা মেডিকেলে ইন্টার্নিরত শিবলী ভাইয়ের রুমে। শিবলী ভাই জানালেন, তাঁর এখানে আসতে হলে লোকজনদের বলতে হবে, আড়াই শ বেড কোথায় লোকজনদের জিজ্ঞেস করার জন্য। আমি ঠিক বুঝলাম না কেন তিনি আড়াই শ বেডের কথা বললেন এবং আমি আড়াই শ বেডের কথা ভুলে গেলাম। এক ট্রাফিককে জিজ্ঞেস করলাম খুলনা মেডিকেল কোথায়? তিনি আমাকে ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেন এখানে খুলনা মেডিকেল বললে কেউ বুঝবে না, আমি অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করলে যেন জিজ্ঞেস করি আড়াই শ বেডের কথা। তাহলে সবাই চিনবে। এ রকম মজার মজার অভিজ্ঞতা নিয়েই চলছিল আমার বাংলাদেশ ভ্রমণ।’ বিশ্বভ্রমণে যাওয়ার স্বপ্ন এখন শরিফুলকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. আলতাফ হোসেন শরিফুলের ভ্রমণ সম্পর্কে বললেন, ‘শরিফুল ইসলাম একজন সাইক্লিস্ট। তবে আমার মনে হয়, তিনি একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। নিজে স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্নের পিছু ছুটছেন অহর্নিশ। তাঁর এই প্রচেষ্টা সত্যিই আমাকে অবাক করেছে। এই ছুটে চলাই তাঁর জীবন, এই বয়ে চলাই তাঁর স্বপ্ন। তাঁর স্বপ্ন সফল হোক এই কামনা করি।’
খুলনায় গিয়ে বেশ মজার একটি অভিজ্ঞতা হলো। সেখানে থাকার ব্যবস্থা ছিল খুলনা মেডিকেলে ইন্টার্নিরত শিবলী ভাইয়ের রুমে। শিবলী ভাই জানালেন, তাঁর এখানে আসতে হলে লোকজনদের বলতে হবে, আড়াই শ বেড কোথায় লোকজনদের জিজ্ঞেস করার জন্য। আমি ঠিক বুঝলাম না কেন তিনি আড়াই শ বেডের কথা বললেন এবং আমি আড়াই শ বেডের কথা ভুলে গেলাম। এক ট্রাফিককে জিজ্ঞেস করলাম খুলনা মেডিকেল কোথায়? তিনি আমাকে ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেন এখানে খুলনা মেডিকেল বললে কেউ বুঝবে না, আমি অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করলে যেন জিজ্ঞেস করি আড়াই শ বেডের কথা। তাহলে সবাই চিনবে। এ রকম মজার মজার অভিজ্ঞতা নিয়েই চলছিল আমার বাংলাদেশ ভ্রমণ।’ বিশ্বভ্রমণে যাওয়ার স্বপ্ন এখন শরিফুলকে সর্বদা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. আলতাফ হোসেন শরিফুলের ভ্রমণ সম্পর্কে বললেন, ‘শরিফুল ইসলাম একজন সাইক্লিস্ট। তবে আমার মনে হয়, তিনি একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। নিজে স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্নের পিছু ছুটছেন অহর্নিশ। তাঁর এই প্রচেষ্টা সত্যিই আমাকে অবাক করেছে। এই ছুটে চলাই তাঁর জীবন, এই বয়ে চলাই তাঁর স্বপ্ন। তাঁর স্বপ্ন সফল হোক এই কামনা করি।’
No comments