রোনালদিনহো-কাকা নন—পাতো! by উত্পল শুভ্র
ব্রাজিলের অতীত-বর্তমানকে ছাপিয়ে উজ্জ্বলতম ‘ব্রাজিলের ভবিষ্যত্’—মিলানের উত্সবের মধ্যমণি পাতো |
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম এসি মিলান মানে ইউরোপের সফলতম দুই ক্লাবের লড়াই। গৌরবময় ফুটবল ঐতিহ্যেরও। গত পরশু সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে এই দুই ক্লাবের সর্বশেষ দ্বৈরথে সেসব তো থাকলই, যোগ হলো একটা ভিন্ন অনুষঙ্গও। ব্রাজিলের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ যেন একসঙ্গে দেখা দিল সবুজ মাঠের ফ্রেমে।
অতীত—রোনালদিনহো।
বর্তমান—কাকা।
ভবিষ্যত্—পাতো।
নিষ্প্রাণ প্রথমার্ধের পর রোমাঞ্চকর দ্বিতীয়ার্ধের এক ম্যাচে অতীত-বর্তমানকে ছাপিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ‘ব্রাজিলের ভবিষ্যত্’। পাতোর দুই গোলেই নয়বারের ইউরোপ-সেরা রিয়ালকে ৩-২ গোলে হারাল সাতবারের সেরা মিলান।
অথচ এই ম্যাচের আগে কোথায় পাতো—সব আলোই ছিল কাকাকে ঘিরে। যে মিলানের জার্সি গায়ে তাঁর কাকা হয়ে ওঠা, সেই মিলানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। ডোরাকাটা লাল-কালোর প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠা মিডফিল্ডার মিলানকে আর্থিক স্বস্তি দিতে মৌসুমের শুরুতে ৬৫ মিলিয়ন ইউরোতে নাম লিখিয়েছেন রিয়ালে। কিন্তু পেশাদার খেলোয়াড়েরও কি মন বলে কিছু থাকতে নেই! কাকা তাই ঘোষণা করেছিলেন, মিলানের বিপক্ষে গোল করলেও তা উদ্যাপন করবেন না। কাজটা কঠিন হতো। তবে কাকাকে সেই পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। গোলই যে করতে পারেননি।
বার্সেলোনার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে বলটাকে যিনি ইচ্ছেমতো কথা বলাতেন, মিলানে ৮০ নম্বর জার্সি পরে তিনি নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। টুকটাক স্কিলের দু-একটা ঝলক দেখালেও এ দিন রোনালদিনহোর স্লো মোশনে চলাফেরা দেখে মনে হলো, যেন কোনো পুরাকীর্তি। অতীত গৌরবের স্মৃতি নিয়েই যাঁর বেঁচে থাকা।
আর পাতো? চনমনে, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। চোখে বিশ্ব জয়ের স্বপ্নের মায়াজাল আঁকা ২০ বছর বয়সী এক স্ট্রাইকারের যেমনটি হওয়া উচিত। ৬৬ মিনিটে গোল করে ১-১ সমতার ম্যাচে প্রথম এগিয়ে দিলেন মিলানকে। ২-২ সমতার পর ৮৮ মিনিটে করলেন জয়সূচক গোল।
অথচ প্রথম এক ঘণ্টা পাতোর মতো এসি মিলানকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ম্যাচে। রিয়ালের গোলে একটি শটও যায়নি এ সময়ে। ক্যাসিয়াস মাঠে আছেন কি নেই, সেটিই বোঝার উপায় ছিল না। টিভি ক্যামেরার যে তাঁকে ধরার প্রয়োজনই পড়ছিল না!
রোনালদিনহো-কাকা-পাতো ছাড়াও ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ছিলেন আরও। রিয়ালে মার্সেলো, মিলানের গোলপোস্টের নিচে দিদা। মিলানের কোচও তো এক ব্রাজিলিয়ান—১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের ডিফেন্ডার লিওনার্দো। দিদার অবিশ্বাস্য এক ভুলেই ১৯ মিনিটে এক সময়ের ইউরোপিয়ান কাপ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগে রাউলের ৬৬তম গোল। গ্রানেরোর হীনবল এক শট ধরেও কীভাবে যেন তা ফেলে দিলেন। পড়বি তো পড় রাউল ‘সুযোগসন্ধানী’ গঞ্জালেসের পায়েই!
এই গোল শোধ করা যখন মিলানের অসাধ্য বলে মনে হচ্ছে, তখনই নিস্তরঙ্গ ম্যাচের রং বদলে দিলেন আন্দ্রেস পিরলো। ৩০ গজ দূর থেকে বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডারের গোলার মতো এক শটে ম্যাচে হঠাত্ই সমতা। মিলানও ঝলমল করে উঠল এরপর। ম্যাচটাও উঠে যেতে লাগল অন্যরকম উচ্চতায়। চার মিনিট পরই বক্সের বাইরে একটা বল ধরতে গিয়ে ক্যাসিয়াসের ব্যর্থতায় মিলানকে এগিয়ে নিলেন পাতো। ৭৬ মিনিটে রাউলের বুদ্ধিদীপ্ত কর্নার কিকে বল পেয়ে পোস্ট ঘেঁষা শটে সমতা আনলেন রিয়ালের ডাচ মিডফিল্ডার রয়স্টন ড্রেন্থা। ম্যাচ কি তাহলে ড্র-ই হচ্ছে? মানলেন না পাতো। বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দেওয়া তাঁর জয়সূচক গোলটির উত্স ক্ল্যারেন্স সিডর্ফের দারুণ এক পাস।
সেই সিডর্ফ, তিনটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ইউরোপ-সেরার শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি যাঁর। আয়াক্স ও মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন, ১৯৯৮ সালে জিতেছিলেন এই রিয়ালের হয়েই। সেই স্মৃতিমেদুরতার কারণেই কি না, শেষদিকে মিলানের একটা গোল বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে দুদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রায় হাতাহাতিতে তিনি অবতীর্ণ ‘শান্তি-রক্ষী’র ভূমিকায়।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম পরাজয়, সেটিও নিজেদের মাঠে। চোটের কারণে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খেলতে না পারাটা খুবই গ্রহণযোগ্য অজুহাত হতো। রিয়ালের কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি কিন্তু মোটেই সে পথে হাঁটলেন না, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচটা হঠাত্ই কয়েক মিনিটের মধ্যে বদলে গেল। রোনালদো খেলেনি বলে আমরা হারিনি। হেরেছি ডিফেন্সিভ ভুলের কারণে, অভিজ্ঞ মিলান দল যেটির শাস্তি দিয়েছে।’
আসল কথাটাই বলেছেন পেলেগ্রিনি। এটা মিলানের অভিজ্ঞতারই জয়। যদিও পরিহাসই বলতে হবে, সেই জয় এল ইউরোপীয় মঞ্চে দলের অনভিজ্ঞতম খেলোয়াড়টির সৌজন্যে।
অতীত—রোনালদিনহো।
বর্তমান—কাকা।
ভবিষ্যত্—পাতো।
নিষ্প্রাণ প্রথমার্ধের পর রোমাঞ্চকর দ্বিতীয়ার্ধের এক ম্যাচে অতীত-বর্তমানকে ছাপিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ‘ব্রাজিলের ভবিষ্যত্’। পাতোর দুই গোলেই নয়বারের ইউরোপ-সেরা রিয়ালকে ৩-২ গোলে হারাল সাতবারের সেরা মিলান।
অথচ এই ম্যাচের আগে কোথায় পাতো—সব আলোই ছিল কাকাকে ঘিরে। যে মিলানের জার্সি গায়ে তাঁর কাকা হয়ে ওঠা, সেই মিলানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। ডোরাকাটা লাল-কালোর প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠা মিডফিল্ডার মিলানকে আর্থিক স্বস্তি দিতে মৌসুমের শুরুতে ৬৫ মিলিয়ন ইউরোতে নাম লিখিয়েছেন রিয়ালে। কিন্তু পেশাদার খেলোয়াড়েরও কি মন বলে কিছু থাকতে নেই! কাকা তাই ঘোষণা করেছিলেন, মিলানের বিপক্ষে গোল করলেও তা উদ্যাপন করবেন না। কাজটা কঠিন হতো। তবে কাকাকে সেই পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। গোলই যে করতে পারেননি।
বার্সেলোনার ১০ নম্বর জার্সি গায়ে বলটাকে যিনি ইচ্ছেমতো কথা বলাতেন, মিলানে ৮০ নম্বর জার্সি পরে তিনি নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। টুকটাক স্কিলের দু-একটা ঝলক দেখালেও এ দিন রোনালদিনহোর স্লো মোশনে চলাফেরা দেখে মনে হলো, যেন কোনো পুরাকীর্তি। অতীত গৌরবের স্মৃতি নিয়েই যাঁর বেঁচে থাকা।
আর পাতো? চনমনে, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। চোখে বিশ্ব জয়ের স্বপ্নের মায়াজাল আঁকা ২০ বছর বয়সী এক স্ট্রাইকারের যেমনটি হওয়া উচিত। ৬৬ মিনিটে গোল করে ১-১ সমতার ম্যাচে প্রথম এগিয়ে দিলেন মিলানকে। ২-২ সমতার পর ৮৮ মিনিটে করলেন জয়সূচক গোল।
অথচ প্রথম এক ঘণ্টা পাতোর মতো এসি মিলানকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ম্যাচে। রিয়ালের গোলে একটি শটও যায়নি এ সময়ে। ক্যাসিয়াস মাঠে আছেন কি নেই, সেটিই বোঝার উপায় ছিল না। টিভি ক্যামেরার যে তাঁকে ধরার প্রয়োজনই পড়ছিল না!
রোনালদিনহো-কাকা-পাতো ছাড়াও ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ছিলেন আরও। রিয়ালে মার্সেলো, মিলানের গোলপোস্টের নিচে দিদা। মিলানের কোচও তো এক ব্রাজিলিয়ান—১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলের ডিফেন্ডার লিওনার্দো। দিদার অবিশ্বাস্য এক ভুলেই ১৯ মিনিটে এক সময়ের ইউরোপিয়ান কাপ ও বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগে রাউলের ৬৬তম গোল। গ্রানেরোর হীনবল এক শট ধরেও কীভাবে যেন তা ফেলে দিলেন। পড়বি তো পড় রাউল ‘সুযোগসন্ধানী’ গঞ্জালেসের পায়েই!
এই গোল শোধ করা যখন মিলানের অসাধ্য বলে মনে হচ্ছে, তখনই নিস্তরঙ্গ ম্যাচের রং বদলে দিলেন আন্দ্রেস পিরলো। ৩০ গজ দূর থেকে বিশ্বকাপজয়ী মিডফিল্ডারের গোলার মতো এক শটে ম্যাচে হঠাত্ই সমতা। মিলানও ঝলমল করে উঠল এরপর। ম্যাচটাও উঠে যেতে লাগল অন্যরকম উচ্চতায়। চার মিনিট পরই বক্সের বাইরে একটা বল ধরতে গিয়ে ক্যাসিয়াসের ব্যর্থতায় মিলানকে এগিয়ে নিলেন পাতো। ৭৬ মিনিটে রাউলের বুদ্ধিদীপ্ত কর্নার কিকে বল পেয়ে পোস্ট ঘেঁষা শটে সমতা আনলেন রিয়ালের ডাচ মিডফিল্ডার রয়স্টন ড্রেন্থা। ম্যাচ কি তাহলে ড্র-ই হচ্ছে? মানলেন না পাতো। বার্নাব্যুকে স্তব্ধ করে দেওয়া তাঁর জয়সূচক গোলটির উত্স ক্ল্যারেন্স সিডর্ফের দারুণ এক পাস।
সেই সিডর্ফ, তিনটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ইউরোপ-সেরার শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি যাঁর। আয়াক্স ও মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন, ১৯৯৮ সালে জিতেছিলেন এই রিয়ালের হয়েই। সেই স্মৃতিমেদুরতার কারণেই কি না, শেষদিকে মিলানের একটা গোল বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে দুদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রায় হাতাহাতিতে তিনি অবতীর্ণ ‘শান্তি-রক্ষী’র ভূমিকায়।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম পরাজয়, সেটিও নিজেদের মাঠে। চোটের কারণে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খেলতে না পারাটা খুবই গ্রহণযোগ্য অজুহাত হতো। রিয়ালের কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি কিন্তু মোটেই সে পথে হাঁটলেন না, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ম্যাচটা হঠাত্ই কয়েক মিনিটের মধ্যে বদলে গেল। রোনালদো খেলেনি বলে আমরা হারিনি। হেরেছি ডিফেন্সিভ ভুলের কারণে, অভিজ্ঞ মিলান দল যেটির শাস্তি দিয়েছে।’
আসল কথাটাই বলেছেন পেলেগ্রিনি। এটা মিলানের অভিজ্ঞতারই জয়। যদিও পরিহাসই বলতে হবে, সেই জয় এল ইউরোপীয় মঞ্চে দলের অনভিজ্ঞতম খেলোয়াড়টির সৌজন্যে।
No comments