সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সচলে মন্ত্রণালয়ের চিঠি by ওয়েছ খছরু

সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  চৌহাট্টাস্থ ক্যাম্পাস দুষ্কৃতকারীরা তালাবদ্ধ করে রাখায় ভিসিসহ সংশ্লিষ্টরা প্রবেশ করতে পারছেন না। রোববার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখার উপ-সচিব কামরুন নাহার সুমি এ অভিযোগ উল্লেখ করে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন। ওই পত্রে কামরুন নাহার সুমি উল্লেখ করেছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এনায়েত হোসেন দুস্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তুলে ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, নতুন স্থাপিত সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহাট্টাস্থ অস্থায়ী ক্যাম্পাস গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। অভিযোগ রয়েছে- এই ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই জড়িত ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। বর্তমানে এ দু’টি জিডি’র তদন্ত করছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান একটি ভাঙচুর ও অপরটি হুমকি প্রদানের ঘটনার অভিযোগ আনেন। ওই ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ পাওয়া ভিসি প্রফেসর এনায়েত হোসেন, রেজিস্ট্রার ফজলুর রহমানসহ অনেকেই অফিসে আসতে পারছেন না। ভাঙচুরের পর একে তো এখন বসার পরিবেশ নেই অন্যদিকে হুমকির কারণেই তারা ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। তবে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ঘটনার পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করে সবকিছু দেখভাল করছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের নেতৃত্বে এখন কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে একটি নার্সিং পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে, পরিবেশ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পুরোপুরি সচল হচ্ছে না। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতর্কিত ভিসি প্রফেসর মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী দুর্নীতির মাধ্যমে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় স্থায়ী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে এক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে ২৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বর্তমান প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছিলেন। তখন অন্যদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। এই নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ ওঠায় গত ১লা এপ্রিল দুর্নীতিদমন কমিশন সিলেট অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন ইমন বাদী হয়ে দুদকে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক ভিসি মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে। এ ছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া অনেককেই এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।


এদিকে ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ৬ই আগস্ট থেকে ফের আন্দোলনে নামেন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকেই ‘দুষ্কৃতকারী’ উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়ের করা জিডির পর থেকে ওই ২ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছেন। গতকাল তারা সিলেটে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে আন্দোলনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. আবু মুসা, মোশারফ হোসেন, কাজী মাসুদ, রাসেদুল ইসলাম, আব্দুল মুনিম, রুহেল আলম। স্মারকলিপিতে তারা ভিসি’র পদত্যাগ দাবি করে বলেন, ৫ই আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও ট্রেজারারসহ তাদের অনুগামীরা অনুপস্থিত রয়েছেন। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে সিলেট বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষার শিক্ষার্থীরা সেশনজট ও অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হবে। তারা বলেন, ভিসি ও রেজিস্ট্রারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দীর্ঘ ২২ মাস ধরে ২৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এ কারণে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দেয়া এক স্মারকলিপিতে তারা সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি পুনর্বহাল করার দাবি জানান। একইসঙ্গে ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারের অপসারণ, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক দুদক মামলা থেকে নির্দোষদের নাম অপসারণ, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ২২ মাসের বকেয়া বেতন প্রদান ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান। আন্দোলনে থাকা কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গতকাল আন্দোলনের সময় পুলিশের মধ্যস্থতায় তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান মাইদুল।

No comments

Powered by Blogger.