৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন: দ্বিমুখী চক্রে বন্দি দুদক

রাজনৈতিক বিবেচনায় চেয়ারম্যান-কমিশনার নিয়োগ এবং প্রেষণে আসা আমলা- এই দ্বিমুখী চক্রে বন্দি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই চক্র থেকে মুক্তি পেতে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানালেন দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক নিয়োগ ও আমলাতন্ত্রের প্রভাবের কারণে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না।

সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি’র কার্যালয়ে দুদক সংস্কারে যে কমিশন গঠন করেছে সরকার, তার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান। বৈঠকে কমিশনের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত হোন  ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোস্তাক খান।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের কমিশনার ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুদকের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রেষণে আসেন। এতে দুদকের অন্য কর্মীরা কাজ করতে পারেন না।

তিনি জানান, প্রথম সভায় তারা কমিশনের দায়িত্ব, এখতিয়ার, কর্মপরিধি বোঝার চেষ্টা করেছেন।  তিনি বলেন, দুদকের যে এখতিয়ার তার দু’টি আঙ্গিক হচ্ছে প্রতিকার ও প্রতিরোধ।  যারা দুর্নীতি করেন, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও বিচার করা। দ্বিতীয়ত দুর্নীতি যাতে না হয়, তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। দুটি বিষয়কে বিবেচনায় রেখে তারা সংস্কারের জন্য কাজ করবেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুদকের কাজে বাধা তৈরি করা আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করা। শুধু আইনি সংস্কার দিয়ে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে- সেটি ভাবা ঠিক নয়। সার্বিকভাবে শাসন পদ্ধতির পাশাপাশি এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে যে, দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায়। সেটা কীভাবে প্রতিহত করা যায়,  সেই জন্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন তারা।  

বাংলাদেশে যে কর্তৃত্ববাদ বিকাশ হয়েছিল, তাতে যে উপাদানগুলো সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দুর্নীতি- উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেয়া,  বিচারহীনতা দেয়ার কারণে সমাজে বিশাল বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি, অপচয়, আত্মসাৎ হয়েছে। টাকা পাচার হয়েছে। এই সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়ার কারণেই দুদককে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, কমিশনের কাজ হচ্ছে দুদক কীভাবে কার্যকর হবে, তার দিকনির্দেশনা, সুপারিশমালা ও পরামর্শ প্রদান করা। কাজটি তারা আজ থেকে শুরু করেছেন। আগামী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেবে। মধ্যবর্তী সময়ে কোনো প্রতিবেদন দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মাঝামাঝি কোনো প্রতিবেদন দেয়া হবে না। তবে সরকার চাইলে এর মাঝামাঝি সময়ে কোনো পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।  
সংস্কারের পর রাজনৈতিক সরকার চাইলে দুদকে নিজেদের লোক বসাতে পারবেন কিনা- জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলীয় প্রভাবের যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তারা সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।

বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বে যে চেয়ারম্যান-কমিশনার রয়েছেন তাদের পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কোনো মন্তব্য নেই। তবে টিআইবি’র পক্ষ থেকে আমি আগেও বলেছি- রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য দুদক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ফলে পুরো প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ঢেলে সাজানো উচিত।
সংস্কার কমিশনের অফিস কোথায় হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কমিশনের সঙ্গে একমত হয়েছি। তাদের পরামর্শে এখন  টিআইবি’র কার্যালয়েই সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এটা আসলে কাজের উপরে নির্ভর করবে। যদি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করার প্রয়োজন হয় তাহলে কমিশনে বসেই করবো। আবার আমাদের এখানেও থাকতে পারে।
ছাত্রদের মধ্যে একজন প্রতিনিধি এই সংস্কার কমিশনে থাকা প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ছাত্র প্রতিনিধি আমাদের কমিশনে একজন থাকার কথা। তবে এখনো ঠিক হয়নি কে হবেন তিনি। সেটা যেকোনো দিন পেয়ে যাবো।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.